ভাষণ: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কে ভাষণ

‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ এর নমুনা দেওয়া হল।
ভাষণ: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে আগত সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আজকের এ মহতী অনুষ্ঠানে কিছু বলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাকে সম্মানিত করার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই ।
সম্মানিত সুধীমণ্ডলী,
আপনারা সবাই জানেন, মানুষ জন্মগতভাবে সমমর্যাদা ও সম-অধিকার ভোগ করার অধিকার রাখে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষেরই বিয়ে, পরিবার গঠন, সম্পত্তি অর্জন এবং সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিটি মানুষের রয়েছে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার, ভোট প্রদানের, চিন্তার ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার। প্রতিটি মানুষেরই চাই সামাজিক নিরাপত্তা, বিশ্রাম, বিনোদন ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে কর্মসৃষ্টি, কর্মের অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার। ভোটের অধিকার, রাজনীতি করার অধিকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকারসহ নানাবিধ মৌলিক অধিকারই একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য মানবাধিকার। পাশাপাশি অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অধিকার কারো নেই।
রাষ্ট্র থাকলে নাগরিক থাকবে, রাজনীতি ও রাজনীতিক থাকবে, সরকার গঠনের পদ্ধতি থাকবে, মতবাদ থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত এসব বিষয়ে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থাকবে। মানুষ স্বাধীনভাবে যার যার অবস্থান থেকে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এসব করতে পারার নাম গণতন্ত্র ।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,
জনকল্যাণমূলক একটি আধুনিক রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি হচ্ছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। বাংলাদেশে সেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায় না। সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে বিভক্তি। বিভক্তির এ লক্ষণ শুভ নয়। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি উদাসীন হওয়ার কারণে রাশিয়া ভেঙে গেছে। একই কারণে বহু নগর-রাষ্ট্র ব্রিটিশদের হাতছাড়া হয়েছে। বর্তমান বিশ্বেও মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মর্যাদা সমুন্নত না থাকায় বিশ্বপরিস্থিতিও আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। চোখের সম্মুখে মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল ভূখণ্ড মানবাধিকারহীন অগণতান্ত্রিক হিংসার আগুনে পুড়ে ছাই হতে চলেছে। এ ছাড়াও তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো গণতন্ত্রহীন স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসবাদের চক্রান্তে জড়িয়ে যাচ্ছে ।
অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ,
আপনারা জেনে থাকবেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরস্পরে ঘনিষ্ঠ। একে অপরের বন্ধু এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সহযোগী। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। এ দুটির লক্ষ্য রাষ্ট্র নয়; মানুষ। মানুষের উন্নয়ন মানে রাষ্ট্রের উন্নয়ন। যখন নগর-রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়নি তখনো মানুষের নৈমিত্তিক অধিকার ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে চিন্তার যে সীমাবদ্ধতা ছিল মানুষ সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ধারণাগত চিন্তা ক্রমান্বয়ে পরিচ্ছন্ন রূপলাভ করেছে।
মানুষ এখন অনেক বেশি অধিকার সচেতন হয়ে উঠেছে। সে কারণে অধিকার সম্পর্কিত চিন্তা- চেতনাগুলোও সাংবিধানিকভাবে আইনের মর্যাদা পেতে চাচ্ছে। মানুষের অধিকারসংক্রান্ত চিন্তা-ভাবনার সন্ধান পাওয়া গেছে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে ব্যাবিলনের রাজা হাম্বুরাবির নিয়মাবলিতে। এটি আইন সম্পর্কিত পৃথিবীর প্রাচীন সঙ্কলন। সপ্তম শতকে পাওয়া যায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রণীত মানবাধিকারের কার্যকর দলিল মদিনার সনদ। একটি রাষ্ট্র কীভাবে মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তার দৃষ্টান্ত হিসেবে মদিনার সনদের তুলনা বিরল। পরে মানবাধিকারের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে দার্শনিক রুশো, ভিক্টর হুগো, জন লক, কার্ল মার্কস প্রমুখ মনীষীর রচনায়।
[box type=”note” align=”” class=”” width=””]আরও পড়ুনঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) [/box]
আপনারা জানেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নীতি ও ঔচিত্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলাবোধ, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আইনের শাসন, শ্রমের মর্যাদা, সুশিক্ষা, নাগরিক সচেতনতা ও কর্তব্যবোধ, সততার ন্যায়পরায়ণতা, সততা সরকারের কল্যাণমুখিতা প্রভৃতি মূল্যবোধ শিক্ষার মাধ্যমে। আমাদের এসবের চর্চা করতে হবে।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,
গণতন্ত্র বিশ্বজনীন রাজনৈতিক একটি পরিভাষা । জনগণের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার গঠনের পদ্ধতিকেই গণতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। সাধারণত জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা সেটিই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার জন্ম দিতে পারে। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তির ক্ষমতাকে বড় করে দেখার অবকাশ থাকে না। এ ব্যবস্থায় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহিতার দায় এড়াতে পারেন না বলে প্রতিনিধিগণের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ কম থাকে। পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এ আন্দোলনে যত মানুষ শামিল হতে পারবে গণতন্ত্র হয়তো তত তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারে।
শেষ করার আগে আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই অমর বাণী আরেকবার উচ্চারণ করতে চাই
Democracy is the government of the people, by the people, for the people
দূর হোক নেতিবাচক ভাবনা, জয় হোক গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের। আপনাদের সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
[box type=”note” align=”” class=”” width=””]
[feed url=”http://www.hazabarolo.com/category/ভাষণ/feed” number=”7″]
[/box]