
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভাষণঃ ২৫শে বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে ভাষণ বা বক্তব্য অন্যতম। বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সুন্দর একটি ভাষণ কীভাবে লিখবেন তা জানতে সম্পূর্ণ লিখাটি পড়ুন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে ভাষণ বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
আজ আমরা এক পরম পুণ্যলগ্নে এখানে সমবেত হয়েছি। সমগ্র বাঙালিদের জীবনে ২৫শে বৈশাখ শুধু স্মরণীয়তম দিবস নয়, আমাদের জীবনের মহত্তম আবেগকে আশ্রয় করে আছে এই দিনটি। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন। তারপর আশি বছর পর্যন্ত তিনি আবেগে, মননে, অনুভাবনায় বাঙালির জীবনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে, আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে, আমাদের সঙ্গীতের সঙ্গে, আমাদের জীবনের প্রতিটি শোভনতম আবেগের সঙ্গে বিজড়িত হয়ে আছেন। তিনি আমাদের কাছে শুধু একজন ব্যক্তিমাত্র নন; একটি জাতির সমগ্র জীবনের আধার। বাঙালি জীবনে এই শতকের প্রথম চল্লিশ বছর রবীন্দ্রযুগ বলেই চিহ্নিত।
বাল্যকালেই রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-প্রতিভার প্রকাশ ঘটেছিল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁর এই প্রতিভার বিকাশ অব্যাহত ছিল। মহামনীষীদের জীবনেও এমন দৃষ্টান্ত বিরল। তাঁর দীর্ঘ জীবনে সারস্বত-সাধনা সৃষ্টির কত বিচিত্র রূপ ধরেই না ঐশ্বর্য লাভ করেছে। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথের বিপুল সৃষ্টি-সম্ভারের কণিকামাত্র।
কবিকৃতি এই কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পড়ে সেদিন ইউরোপ বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়েছিল। এই কাব্যই বাঙালির ঘরে বহন করে আনলো বিশ্ববিজয়ীর বরমাল্য—১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। পরাধীন ভারতবর্ষে এর চেয়ে বড় গৌরব সেদিন আর কিছু ছিল না। দেশ ও কালের সঙ্গে তাঁর চিন্তা ছিল ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ সর্বত্রই তিনি শ্রেষ্ঠ।
নবযুগে বাঙালির সঙ্গীত তাঁরই দান। একটি সমুদ্রকে যেমন গন্ডুষে তুলে ধারা যায় না, এটি আকাশকে যেমন মুঠিতে ধরা সম্ভভ নয়, বরীন্দ্র- প্রতিভাকেও তেমনি কোন সভায় উপস্থাপিত করা অসম্ভব। অনাগত কালে আরো মহত্তম প্রতিভার আবির্ভাবের পূর্বে তিনি আমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠতম মনীষা।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রথম আঞ্চলিক সংকীর্ণতার গণ্ডী ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মানসিকতার অধিকারী করেছিলেন। সভ্যতা জাতির নিজস্ব সম্পত্তি নয়; তা সমগ্র মানবজাতির। দেশকে গভীরভাবে ভালবেসেও তিনি ছিলেন বিশ্বের নাগরিক। মানুষের ক্ষুদ্র চেতনা, অন্ধ বুদ্ধি, সংকীর্ণ সংস্কার তাঁকে আহত করতো সবেচেয়ে বেশি। তাঁর কণ্ঠেই আমরা প্রথম শুনেছি দেশ মৃন্ময় নয়, দেশ চিন্নয়। তিনি চিন্ময় মানুষকেই ভাবীকালের অগ্রদূত বলে ঘোষণা করেছেন।
এই মানুষ রচনার জন্য তিনি গড়েছিলেন শান্তিনিকেতন। মৃত্যুর উপান্তে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বংসী দিনগুলোতে তিনি মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানোকে পাপ বলে ঘোষণা করেছিলেন। আমরা মানবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে জানাই আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।