৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এই পৃথিবীকে দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য এই দিন নান কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল সেমিনার ও ভাষণ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিয়ে ভাষণ ও বক্তব্য এর একটি নমুনা দেওয়া হল।
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিয়ে ভাষণ ও বক্তব্য
সুধীমণ্ডলী, আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সামনে আজ আমরা উপস্থাপন করতে যাচ্ছি ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিয়ে কিছু কথা, যা আমাদের পরিবেশ সুন্দর ও আনন্দময় করতে বড় ভূমিকা রাখবে । আমরা সবাই জানি পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ যেমন একটু একটু করে তার পরিবেশ গড়ে তুলেছে, তেমনি সভ্যতার চরম লগ্নে এসে সেই মানুষই আবার তার পরিবেশকে নানা উপায়ে ধ্বংস করে চলেছে। ফলস্বরূপ, মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন।
পরিবেশ দূষণের জন্য একটি-দুটি নয়, অগণিত কারণ রয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো সচেতনতার অভাব। অন্যদিকে, পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বাড়ছে না প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ। সে কারণে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়ছে প্রচণ্ডভাবে । বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ নির্মম হাতে ধ্বংস করছে বনজ সম্পদ। এতে করে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ভিদজগৎ, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণিজগৎ। এ দ্বি-জগতের ক্ষতিসাধনের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এক সংকটজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। পরিবেশ দূষণের আরেকটি কারণ হলো শক্তি উৎপাদন। এ শক্তি উৎপাদনের সময় মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশদূষক নানা রাসায়নিক দ্রব্য নির্গত হয়, যা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মদানে বড় ভূমিকা রাখছে ।
অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ,
প্রকৃতির এক অফুরন্ত নিয়ামক হলো বায়ু। সে বায়ু আজ নানাভাবে দূষিত হয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জ্বালানি; যেমন- তেল, কয়লা, গ্যাস পুড়ে প্রতিনিয়তই বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছড়িয়ে পড়ছে। বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে অসময়ে বর্ষণ, কুয়াশা, ঝড় ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তেল, কয়লা পুড়ে যে গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে মানুষের মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। বায়ুর মতো পানিও আজকাল নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য, তরল পেট্রোলিয়াম হ্যালোজেন, বিষাক্ত হাইড্রোকার্বন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা, শহরের ড্রেন ও নালা-নর্দমা দিয়ে বয়ে আসা দূষিত পানি প্রতিনিয়ত নদ-নদীতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে পানি দূষিত হচ্ছে।
কলকারখানার বিকট আওয়াজ, মোটরযানের হর্ন, বাজি, পটকার শব্দ, রেডিও-টেলিভিশনের শব্দ, মানুষের চেঁচামেচি, চিৎকার, উৎসব-আনন্দের নামে হৈ-হুল্লোড়, উচ্চ সুরে মাইক, রেকর্ড প্লেয়ার বাজানো- সব মিলিয়ে যেন শব্দের এক মহাযজ্ঞ চলছে। এসব শব্দের ফলে মানুষের জীবনে নানা রকম বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। যেমন— শ্রবণশক্তির বিলোপ, মানসিক বিপর্যয়, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি ও স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি অস্বাভাবিক শব্দেরই পরিণাম। যাকে শব্দদূষণ বলা হয় ৷
প্রিয় শ্রোতৃমণ্ডলী,
আপনারা নিশ্চয় জানেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধকল্পে জাতিসংঘের নির্দেশে প্রতি বছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস‘ পালিত হয়ে আসছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বিশ্ব পরিবেশ কীভাবে দূষিত হচ্ছে, তা বিশ্ববাসীর গোচরে আনাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা তাদের সাথে একাত্ম হতে পারছি না। উপলব্ধি করতে পারছি না আগামী প্রজন্মকে কোন পরিবেশে ঠেলে দিচ্ছি। তাই আমাদের প্রত্যেককে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগামী পৃথিবী যেন নির্মল ও সুন্দর হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। আর পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে— বৃক্ষ নিধন নয়, বরং বৃক্ষরোপণ করে এ পৃথিবীকে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে তা ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে কয়লা, গ্যাস ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে। কার্বন মনোক্সাইডের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুরোনো মোটরযানগুলোকে বাতিল করতে হবে। সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে বিভিন্ন দেশে বৃহৎ শক্তিগুলোর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ বন্ধ করতে হবে। এসবের চর্চা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আগামী প্রজন্মকে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারব। শেষ করার আগে কবির ভাষায় বলতে চাই—
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবেশ সুন্দর করতে অন্যকে সহায়তা করুন, আল্লাহ হাফেজ।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।