ভাষণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণ ও বক্তৃতা

4.5/5 - (15 votes)

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি করো।
অথবা, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষ্যে তোমার কলেজ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রদানের জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, অথবা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা করে একটি ভাষণ।
অথবা, ‘একুশের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি করো।
অথবা, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক-এই শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণ

মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। এ মহতী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।

সুধীমণ্ডলী, আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মানুষকে চেতনাবোধে সমৃদ্ধ করার দিন। ভাষা মনের ভাব প্রকাশের প্রায়োগিক বাহন। মাতৃভাষা হলো কোনো জাতির স্বদেশীয় ভাষা, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিবাসী স্বীয় ভাব আদান-প্রদান করে। শিশু জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শিখে তা-ই হচ্ছে মাতৃভাষা। আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ ভাষার জন্য অনেকে সংগ্রাম করে এবং অনেকে ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে প্রাণ দান করেন। তদানীন্তন শাসকশ্রেণির অত্যাচারের স্টিম রোলারের আঘাতে নিষ্পেষিত হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং নাম-না-জানা আরো অনেকে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ঘোষণা করে অন্যান্য দিবসের মতো ২০০০ সাল থেকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম এবং আত্মদানকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহিদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই তা পালিত হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল আমাদের দেশের প্রতিটি শহিদ মিনারে নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এ দিন বিশ্ববাসী নতুন করে জানতে পারে কীভাবে ভাষা শহিদেরা তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে
রক্ষা করেছেন।

সুধীবৃন্দ, মা, মাটি, মাতৃভাষা পরম সম্পদ। নিজ দেশের ভাষার সুধারসে যার মন তৃপ্ত না হয় তার সে দেশে বাস করার কোনো অধিকার নেই। মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম বলেছেন-

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায় ৷
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।
একটু জানি

  • কবি আবদুল হাকিমঃ আবদুল হাকিম (জন্ম : ১৬২০ – মৃত্যু : ১৬৯০) মধ্যযুগের বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি তার রচিত নূরনামা কাব্যের জন্য অধিক পরিচিত। তিনি বেশ কিছু ফার্সি কবিতার বঙ্গানুবাদ করেন। তিনি ফার্সি, আরবি ও সংস্কৃৃত ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলঃ ‌‌ইউসুফ-জুলেখা, লালমতি, সয়ফুলমুলুক, শিহাবুদ্দিননামা, নসীহতনামা, কারবালা ও শহরনামা

মাতৃভাষায় রচিত গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটকসহ নানা ধরনের সাহিত্য মানুষের মনের খোরাক জোগায়। মাতৃভাষায় রূপায়িত হয় মানবমনের নানা কথার ফুলঝুরি, অজানা রহস্য। আর এ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় একমাত্র বাঙালি জাতিই লিপ্ত হয়েছে সংগ্রামে, ঝরিয়েছে বুকের তাজা রক্ত। যা বিশ্বে বিরল। মাতৃভাষা একটি দেশের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয় । তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং দৈনন্দিন জীবনে চর্চা করা প্রতিটি জাতিরই একান্ত কর্তব্য।

সুধীবৃন্দ, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করায় সারাবিশ্বে বাঙালি এবং বাংলা ভাষা গৌরবের আসনে সমাসীন। এ দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই আমাদের সবার উচিত বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর ব্যাপারে আদু পদক্ষেপ নেয়া এবং তা কার্যকর করতে অঙ্গীকার করা। সবাইকে ধন্যবাদ ।

আরও ভাষণ দেখুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আবদুল হাকিমউইকিপিডিয়া

Health Desk

সিনিয়র স্টাফ। স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা সমস্যা ও হেলথ টিপস নিয়ে নিয়মিত লিখছি। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button