
ভাব-সম্প্রসারণঃ মানুষের কোনাে জাতিভেদ নেই, মানুষের কোনাে জাতিভেদ থাকতে পারে না। পৃথিবীর যে কোনাে দেশের অধিবাসী হােক, মানুষের একমাত্র পরিচয় হলাে সে মানুষ। সে বাঙালি, ইংরেজ, ফরাসি, জার্মান, রাশিয়ান, চিনা, আমেরিকান যা-কিছুই হােক- সাদা কালাে- যে রঙেরই হােক তার গায়ের বর্ণ, তার সত্য পরিচয় হল সে মানুষ।
সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল মানুষ। তার সৃষ্টিতে নেই কোনাে ভেদাভেদ, নেই কোনাে ভেদ-বৈষম্যের পার্থক্যরেখা। কিন্তু মানুষ রচনা করেছে মানুষে মানুষে কৃত্রিম ভেদাভেদ, সৃষ্টি করেছে ঘৃণ্য জাতিভেদ। ভেদবুদ্ধি-প্রণােদিত স্বার্থপর মানুষ সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে বিভেদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর; এবং জগতের যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যত কলঙ্কময় রক্তপাত, তার মূলে আছে এই অবাঞ্ছিত মানসিক ভেদ-বৈষম্য। পৃথিবীতে মানুষে মানুষে এই সংঘাত ও রক্তপাতের শুরু অতি প্রাচীনকাল থেকেই। ভৌগােলিক সীমাবেষ্টনীর মধ্যে ভূমিষ্ঠ মানবগােষ্ঠী ক্ৰমে অপর স্থানের মানবগােষ্ঠীকে ঘৃণা করতে শিখেছে। ফলে গঠিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও রাষ্ট্রের। কিন্তু ক্রমেই রাষ্ট্রীয় ভেদ-বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় সীমা-পার্থক্য মুছে ফেলে মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করেছে। সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানুষ এ প্রকৃতির ওপর ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করেছে। গড়ে তুলেছে গ্রাম, নগরসভ্যতা। সে তার জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে অণু থেকে অট্টালিকা, সাগর থেকে মহাসাগর পর্যন্ত জয় করে নিয়েছে। মানুষের আরাম-আয়েসের জন্যে উদ্ভাবন করেছে নানা প্রয়ােজনীয় সামগ্রী। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সে সৃষ্টি করেছে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন।
এভাবে আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছে। প্রমাণ করেছে সবার ওপরে মানুষ সত্য, তার ওপরে কেউ নেই।