মে দিবসের তাৎপর্য রচনাঃ প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমারা অনেকেই মহান মে দিবসের তাৎপর্য রচনাটির জন্য অনুরোধ করেছিলে। তাছাড়া বিগত বছরগুলিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রচনাটি অনেক বার এসেছে। তাই বিভিন্ন বই থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ করে রচনাটি তোমাদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে।
মে দিবসের তাৎপর্য রচনার পয়েন্ট
ভূমিকা, আন্তর্জাতিক মে দিবস,মে-রানির রূপকথা, মে দিবসের নেপথ্য ইতিহাস, ঐতিহাসিক মে দিবসের জন্ম, বিভিন্ন দেশে মে দিবস, মে দিবসের তাৎপর্য, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস, বাংলাদেশের ইতিহাসে মে দিবস, বাংলাদেশে মে দিবস উদযাপন, উপসংহার
ভূমিকা
এমন সময় আসবে যখন কবরের অভ্যন্তরে শায়িত আমাদের নিশ্চুপতা জ্বালাময়ী বক্তৃতার চেয়ে বাক্সময় হবে এবং তা শ্রমিকশ্রেণীর বিজয় লাভের শেষ সংগ্রাম পর্যন্ত লড়াইয়ে প্রেরণা যোগাবে। এবং শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস চীর স্মরণীয় হয়ে থাকবে। – আগস্ট স্পাইজ
১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কথাগুলাে বলেছিলেন। তাঁর সেদিনের সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যর্থ হয় নি, তাদের সেই আত্মদান। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে তা এক স্মরণীয় অধ্যায়। তাঁদেরই আত্মদানে প্রতিষ্ঠিত ‘মে দিবস’ পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক দিবসে। মে দিবস, আজ তাই হাজার হাজার শ্রমিকের পায়ে চলা মিছিলের কথা, আপসহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার ব্রত। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবসের অর্থ শ্রমজীবী মানুষের উৎসবের দিন, জাগরণের গান, সংগ্রামে ঐক্য ও গভীর প্রেরণা। মে দিবস শােষণ মুক্তির অঙ্গীকার, ধনকুবেরের ত্রাস, দিন বদলের শপথ।
আন্তর্জাতিক মে দিবস
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে নগরীর লক্ষ লক্ষ শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট শুরু করে। ব্যাপক আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ৩ ও ৪ মে। কিন্তু আন্দোলনের কণ্ঠরােধ করার জন্য পুলিশ গুলি চালায় এবং ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। সেই সঙ্গে বহু শ্রমিক আহত হয়। গ্রেফতার হয় অগণিত শ্রমিক। গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ৬ জনকে পরে ফাঁসিতে ঝুলানাে হয়। জেলখানায় বন্দি অবস্থায় আত্মহনন করেন এক শ্রমিক নেতা। শ্রমিক আন্দোলনের এই গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বের সকল দেশেই মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় মহান মে দিবস।
মে-রানির রূপকথা
মে দিবস ছিল একদিন মে-রানির রূপকথার অন্দরমহলে ঘুমিয়ে। আজকের সংগ্রামী তাৎপর্য ছিল তার অজানা। ইউরােপে দুর্জয় শীতের প্রথম তুষারপাত গলতে শুরু করেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা। দিকে দিকে ফুলের বাহার। পাখির গান। মাঠেঘাটে কর্মের জোয়ার। শীতবৃদ্ধ বিদায় নিয়েছে। এসেছে তরুণ বসন্ত। তখনই মে-রানির ঘুম ভাঙ্গতো। ১ মে হতো তার উৎসব। রােপণ করা হত মে বৃক্ষ। তাকে সাজানাে হত বিচিত্র পুষপহারে। তারপর সেই মে-রানিকে ঘিরে শুরু হত নাচ-গানের উৎসব। কবিরা মে-রানিকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা। দেশের রাজারানি-প্রজারাও মেতে উঠতেন উৎসবে। দিন বদলায়, বদলায় সমাজ-ব্যবস্থা। পাল্টে যায় শব্দের অর্থ। মে-রানি একদিন কোথায় হারিয়ে গেল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে মে দিবসের অর্থ গেল বদলে। মে দিবস হল কাজের সময় হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন। হল দুনিয়ার শ্রমিকদের সংহতি দিবস, পুঁজিবাদী শােষণ থেকে মুক্তির সংগ্রামী শপথ। শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছে এই দিনটি।
মে দিবসের নেপথ্য ইতিহাস
আন্দোলনের পথ কখনই মসৃণ ছিল না। মসৃণ থাকে না। ছিল নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে, জুলুম, অত্যাচারে, প্রতিরােধে, ধর্মঘটে, মিছিলে, সংগ্রামী ঐক্যে রক্তলাঞ্ছিত। মে দিবস একদিনে এই আন্তর্জাতিক চেহারা পায় নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। রয়েছে অনেক রক্তঝরার কাহিনি। জন্মলগ্ন থেকেই শ্রমিকশ্রেণীর ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমিকশ্রেণীকে উদয়াস্ত কাজ করতে হবে। আঠারাে ঘণ্টা, কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল কাজের সময়-সীমা। আলেকজান্ডার ট্রাকটেনবার্গ মে দিবসের ইতিহাস আলােচনা করতে গিয়ে লিখেছেন:
মে দিবসের জন্মকাহিনী অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে কাজের ঘণ্টা কমাবার আন্দোলনের সঙ্গে।
১৮০৬ সালে কারখানায় কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল বাধ্যতামূলক কর্মপ্রহর। ১৮২০-১৮৪০ সাল পর্যন্ত দশ ঘণ্টা কাজের দাবিতে অনেক আন্দোলন ও ধর্মঘট হয়। ১৮৬২-১৮৬৩ সালে গড়ে ওঠে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। দাসপ্রথা ওঠে গেল। নিগ্রোরা হল শ্বেতাঙ্গদের বন্ধু। এই সময়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মালিকরা কম মজুরিতে নারী শ্রমিক নিয়ােগ করত। ১৮৬৫ সালে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের পর থেকেই সেখানকার শিল্পের বিকাশ ঘটে দ্রুত গতিতে। সেই সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারও ঘটে দ্রুত। ১৮৮১ সালে নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশ অব লেবার’। ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর সেখানে চতুর্থ সম্মেলনে গৃহীত হয় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, বলা হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সব শ্রমজীবী মানুষ আট ঘণ্টার বেশি কোনওভাবেই কাজ করবে না। ওই দিনটিতে তাই পাঁচ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ বিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে ভয়ে পিছিয়ে যায়।
ঐতিহাসিক মে দিবসের জন্ম
মে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়। আর এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল দেড়শ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে। আট ঘণ্টা শ্রম দিবস- এই দাবিকে কেন্দ্র করেই আন্দোলনের সূত্রপাত। ১৮৫৬ সালের ২১ এপ্রিল সিদ্ধান্ত হয় দেশের শ্রমিকরা একযােগে কর্মবিরতি দিয়ে আলােচনা সভা ও আনন্দানুষ্ঠানের আয়ােজন করবে। সিদ্ধান্ত মতে অস্ট্রেলিয়ার শ্রমিকরা তাদের কাজ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু এই ধরনের কর্মবিরতি অস্ট্রেলিয়ার শ্রমিকরা একবারই করতে সমর্থ হয়। ওই দিনের ঘটনা আমেরিকার আন্দোলনকারী শ্রমিকদের প্রেরণা যােগাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। ১৮৮৬ সালের ১মে’তে সারা আমেরিকায় শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেয়। ওই দিনই শিকাগােতে হাজার হাজার শ্রমিক র্যালিতে যােগ দেয়। শ্রমিক র্যালির স্লোগান ছিল “আট ঘন্টার শ্রম, আট ঘণ্টার ঘুম, এবং আট ঘণ্টার বিনােদন”। ৩ মে ছিল আন্দোলনের দিক নির্ধারিত করার দিন। এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কারখানার মালিকদের ভাড়াটে লােকদের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন শ্রমিক মারা যান। এরই প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিক নেতারা ৪ মে জোরালাে আন্দোলনের ডাক দেয়। এই দিন তিন হাজারের মতাে শ্রমিক শিকাগাের হে মার্কেট স্কোয়ারে আন্দোলনে যােগ দেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিকেলে শেষের দিকে পুলিশ শ্রমিকদের উপর গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক নিহত হয়। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন দাঙ্গায় রূপ নেয়। এই সময় পুলিশ আটজন নেতাকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযােগ। আনা হয় হত্যা, দাঙ্গা সৃষ্টি করার। শুরু হয় ঐতিহাসিক বিচারকার্য। নেতাদের বিরুদ্ধে কোনাে প্রমাণ উত্থাপন করতে না পারলেও বিচারক এদের সবাইকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। ১৮৮৭ সালে ১১ নভেম্বর অগাস্ট পাইস, এ্যালবার্ট পারসন, এ্যাডলফ ফিশার ও জর্জ এনগেলকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়। লুইস লিংগ বন্দি অবস্থাতেই আত্মহত্যা করেন। প্রতিবাদের ঝড় উঠল। এরপর এই আন্দোলন শুধু আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৯ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের প্যারিসে আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক কংগ্রেসের। এখানেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় আগামী বছর (১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ) ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করা হবে। প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাত্র ও সংগ্রামের দিন বলে ঘােষিত হল ১ মে। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রপান্তরিত হয় ১৮৯০ সালের আন্তর্জাতিক মে দিবসে।
বিভিন্ন দেশে মে দিবস
প্যারিস সম্মেলনে ঘােষণার পর থেকেই দেশে দেশে মে দিবস পালিত হয়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ১ মে’র পরিবর্তে ৪ মে হাইড পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস উদযাপিত হয়। আমেরিকায় ১৮৯০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত হয় আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের মাধ্যমে। ফ্রান্সে মিছিল ও সমাবেশের মধ্যে অনুষ্ঠানিকভাবে মে-ডে পালিত হয় ১৮৯০ সালে। রাশিয়ায় ১৮৯৬ সালে মে দিবস উদযাপিত হয় ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে। চীনে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৪ সালে। ডা. সান্ ইয়াৎ সেন ওই সমাবেশে ভাষণ দেন। হিটলারের উত্থানের শুরুতে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে কমিউনিস্টরা বেআইনি মে দিবস উদযাপন করেছিলেন। আজ এশিয়া-আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা, ছােট বড় সমস্ত দেশ জুড়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে।
মে দিবসের তাৎপর্য
সারা বিশ্বের মেহনতী মানুষের শ্রমের ক্ষেত্রে ন্যায্য মজুরি ও দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে নগরীতে যে আন্দোলন হয় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তা আজ বিশেষভাবে স্মরণীয়। চাকরিরত যে-কোনাে দেশের যেকোনাে মানুষ স্মরণীয় সেই আন্দোলনের সুফল ভােগ করছেন। দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের ব্যবস্থাপনা এখন প্রায় সবদেশেই প্রতিষ্ঠিত। মে দিবস তাই দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সঙ্কল্প গ্রহণের দিন। এই সঙ্কল্প হল সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্যের বিলােপসাধন। পুঁজিবাদী দাসত্বশৃঙ্খল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর চিন্তা-চেতনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্য। লেনিন মে দিবসকে ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে। তারই সার্থক পরিণতি ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবে। মে দিবস দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ, দুনিয়ার শ্রমিক এক হওয়ার উজ্জীবন মন্ত্র।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এদেশের শাসকগোষ্ঠি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বদাই রয়েছেন উদাসীন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবস শুধুই একটি ছুটির দিন বলে বিবেচিত। শ্রমিকের দাবি আদায়ের জন্য যারা রক্ত জড়িয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছেন তাদের স্মৃতিতেই মে দিবস সীমাবদ্ধ। আমাদের দেশে শ্রমিকদের তুচ্ছ বলে মূল্যায়ন করা হয়। বারবার শ্রমিকরা নির্যাতিত হচ্ছে। কাজের তুলনায় পারিশ্রমিক ঠিকমতো তারা পায় না। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় দেখা যায় সেখানে শ্রমিকে আট ঘন্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে। মুনাফালোভী মালিকদের নিষ্ঠুর শোষণ মুখ বুঝে সহ্য করে যায় নির্যাতিত শ্রমিক। কারণ মালিকের অবাধ্য হলে চলে যাবে চাকরি। আমাদের দেশে অধিকাংশ শ্রমিক জানে না তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি দিন আছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তারা জানে না তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একদিন রাজপথে নেমে আন্দোলন-মিছিল করেছিল, রক্ত ও জীবন উৎসর্গ করেছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে মে দিবস
দেশ বিভাগের পূর্বে নারায়ণগঞ্জে মে দিবস পালিত হয় ১৯৩৮ সালে। এরপর থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সীমিত পরিসরে মে দিবস পালিত হত। তবে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী লাভ করলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত বিপুল উৎসাহ নিয়ে শ্রমিকগণ মে দিবস পালন করে। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সেদিন আদমজীতে লাল পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সমাবেশ করেছিল। সামরিক শাসন (১৯৫৮) জারির পূর্ব পর্যন্ত বেশ বড় আকারে সমাবেশের মাধ্যমে মে দিবস অনুষ্ঠিত হত। ১৯৫৮ সালে দাবি ওঠে ১ মে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন করা হোক। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর শ্রমিক আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা সূচিত হয়। আওয়ামীলীগ ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভের পর শ্রমিকদের বিরাট একটি অংশ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনকে সর্মথন করে। তখন মে দিবস এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু থেকে মে দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেনা। এবং সেই সাথে ১ মে কে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করেন। এবং পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে তৎকালীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বাংলাদেশে মে দিবস উদযাপন
বাংলাদেশে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং ওই দিন সরকারি ছুটির দিন থাকে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশন সহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করে। ২০২১ সালের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ মুজিববর্ষে গড়বো দেশ’। ২০২২ সালের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।
উপসংহার
১৯৮৬ সালে ঐতিহাসিক মে দিবসের শতবর্ষ শেষ হয়েছে। মে দিবসের এই দীর্ঘ শতবর্ষের আলােয় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে। সংগ্রামী শ্ৰেণীর সামনে উন্মােচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। দৃঢ় হয়েছে শ্রমিক সংহতি। বিশ্বের একতৃতীয়াংশ মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। কিন্তু এখনও জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজও প্রবল, পরাক্রান্ত। এখনও তার নির্লজ্জ রণহুঙ্কার থামে নি।। তাই দুনিয়া জুড়ে মে দিবসের যে বিজয় অভিযান সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজতন্ত্রের সপক্ষে ও পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক সংগ্রাম। এই সংগ্রামী চেতনা ও চরিত্রই শ্রমজীবীর ভূষণ। মে দিবস আজ আর শ্রমিকের কাজের ঘন্টা কমানোর দাবির আন্দোলন নয়। মে দিবস আজ দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন শ্রমিকশ্রেণীর সামনে নতুন ঊষার স্বর্ণ দুয়ার। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দুর্লভ এক সম্পদ।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।