ভাবসম্প্রসারণ “সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে”
বাংলা ভাবসম্প্রসারণ
সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ শ্রেণী, এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য।
পৃথিবীতে মানুষের চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বরং কণ্টকাকীর্ণ। জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জনের পূর্বশর্ত এ কণ্টকাকীর্ণ দুঃখময় পথের সমস্ত প্রতিকূলতাকে হাসিমুখে বরণ করে অগ্রসর হওয়া। অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে যাঁরা সফল হতে চান তাঁদের অবশ্যই দৃঢ়চিত্তের হতে হয়। আত্মবিকাশ বা প্রসারের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে তুলে ধরার প্রয়াস পান। পক্ষান্তরে দুর্বল ব্যক্তি আত্মগোপনের মধ্য দিয়ে মুক্তির ব্যর্থ প্রয়াস চালায়।
ভীরুরা জীবনসংগ্রামে প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে ভয় পায়। ফলে জীবন থেকে অকালেই ঝরে পড়ে। আর কঠিন জীবনসংগ্রামে জয়ী সবলেরা কখনো মরে না, বরং আত্মপ্রসারের মধ্য দিয়ে সুদৃঢ়ভাবে টিকে থাকে। প্রকৃতিতে আমরা দেখি ব্যাপ্ত হবার জন্য বা টিকে থাকার জন্য সর্বদা একটা চেষ্টা চলছে। যে জীব নিজের অস্তিত্বকে বেশি প্রসার করতে পারে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা ততো বেশি। তেমনি সবলেরা মানুষের মাঝে মনের ভাবকে ছড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে স্থায়িত্ব দিতে চায়। তারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে না, সমগ্র মানুষের মাঝে তার জ্ঞান, আত্মোপলব্ধি ছড়িয়ে দিয়ে অমর হতে চায়। বৈচিত্র্যময় কর্মপ্রবাহের মাধ্যমে মানুষ নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারে। এখানেই সবলদের যথার্থ গৌরব নিহিত থাকে। তারা জীবনকে পরার্থে নিয়োজিত করে জীবনে সার্থকতা আনয়ন করে।
যুগে যুগে এ সকল মানুষ আপন উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা, সঞ্চিত জ্ঞান, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষকে দিয়েছে মুক্তির সন্ধান, তারাই বীর, সমাজ তাদের দ্বারা উপকৃত হয়। বস্তুত কর্মের মধ্য দিয়েই মানুষ নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রমাণ করে নিজের আত্মপ্রসার ঘটায়। অহংকারহীন আত্মপ্রসার মানুষের আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। আর মানুষের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের কোনো বিকল্প নেই। পক্ষান্তরে যেসব মানুষ দুর্বল, ভীরু, কাপুরুষ তারা সব সময় নিজেকে আড়াল করে রাখতে চায়। এ শ্রেণীর মানুষ যেমন নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে, তেমনি তারা দেশ ও সমাজের জন্য বোঝা-স্বরূপ। নিজের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে এদের কোনো বাস্তব ধারণা নেই। এরা অলস ও অকর্মণ্য জীবন-যাপন করে। কারণ, এদের ধারণা যে, সফলতা লাভ এদের পক্ষে সম্ভব নয়। আত্মগোপনের মধ্যেই এ শ্রেণীর লোকেরা স্বস্তি লাভ করে থাকে।
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আলস্য-সন্দেহ সবকিছু পরিহার করে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আর কাজের মধ্যে দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ তথা আত্মপ্রসার ঘটাতে হবে। অন্যথায় জীবনে নেমে আসবে ব্যর্থতার অভিশাপ।
“সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে” ভাবসম্প্রসারণটি কেমন লাগলো টা অবশ্যই জানাবে।