ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণঃ জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

Daraz cupon Code
4.3/5 - (147 votes)

জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

বিষয়ঃ ভাবসম্প্রসারণ
শ্রেণীঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ SSC HSC JSC

মূলভাব

প্রতিটি জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের (God) অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই জীবের প্রতি প্রেম শ্রেষ্ঠতম ইবাদত।

সম্প্রসারিত ভাব

বিভিন্ন সমাজের মানুষ বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের বা স্রষ্টার উপাসনা করে। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য এ অবিরাম প্রচেষ্টা মানুষকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনা পদ্ধতি অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরুপ বুঝতে পারা খুবই কঠিন। জগতে মনীষী ও ধর্মগুরুগণ সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য বহু দূরে যাওয়ার প্রয়ােজন নেই।

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব তার সৃষ্ট জীবগুলাের মধ্যেই রয়েছে বলে আমাদের তার সৃষ্ট জীবের সেবায় আত্মনিয়ােগ করতে হবে। যে লোক সব সময় আর্ত-ক্লিষ্ট ও পীড়িত মানবতা ও জীবের সেবায় রত, তিনিই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সেবক ও ইবাদাতকারী। কেননা, অসহায়কে সাহায্য ও সহযােগিতা করলে প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্তের মুখে অন্ন ও পানীয় তুলে দিলে সৃষ্টিকর্তারই সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপাসনা বা ইবাদাত পদ্ধতি এ জগতে আর নেই।

মন্তব্য

সৃষ্টির ভেতর দিয়েই স্রষ্টার প্রকাশ, তাই তার সৃষ্ট জীবকে সেবা করলে প্রকারান্তরে তাকেই সেবা করা হয়।

বিকল্প ১ঃ (সংযোজনের সময় – ০৮ নভেম্বর ২০২১)
 
এ জগতে যা কিছু বিরাজমান তার সবই ঈশ্বরের দান বা ঈশ্বরের সৃষ্টি। যিনি ঈশ্বরের এ সকল সৃষ্টি ভালােবাসেন তিনি আসলে ঈশ্বরকেই ভালােবাসেন। কেননা জীব জগতকে ভালােবাসার মাধ্যমেই ঈশ্বর বা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা যায়।
পৃথিবী স্রষ্টার লীলাক্ষেত্র। তিনি বহু বিচিত্র ধরনের পশু, পাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গ সৃষ্টি করেছেন। সেসব আকৃতি-প্রকৃতি-বর্ণে গন্ধে বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয়। ঈশ্বরের যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ। বুদ্ধি-বিবেচনা, স্নেহ, মমতা-ভালােবাসায় মানুষের তুল্য কেউ নয়। অতুলনীয় রূপ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যপূর্ণ সবকিছুই মানুষের জন্য। প্রকৃতির মধ্যে বিচরণ করছে যে নানা জীব ও প্রাণী, মানুষ তাদের রক্ষা করবে, পরিচর্যা ও যত্ন করবে। নানা জাতের গাছপালা, লতাগুল্মসমৃদ্ধ বন-বনানী রক্ষা ও পরিচর্যা করার দায়িত্ব মানুষের। কেননা মানুষ তার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় সবকিছুই প্রকতি থেকে আহরণ করে। কাজেই মানুষের বেঁচে থাকার বিশাল উৎসকে ধরে রাখা মানুষেরই দায়িত্ব। প্রকৃতি ও জীবজগতের কোনাে কিছুই যাতে নষ্ট না হয়, ক্ষতি না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব মানুষের। মানুষ এ দায়িত্ব পালনে কোনােভাবেই অবহেলা করতে পারে না। স্রষ্টা পরম যত্নে এই সুন্দর জীবজগৎ সৃষ্টি করেছেন, পরম ভালােবাসা ও যত্নে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। মানুষ স্রষ্টার ইবাদত করে, উপাসনা করে। জীবজগৎও তার উপাসনায় মশগুল থাকে। কেননা সকল জীবের মধ্যেই স্রষ্টা আছেন। স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করার চেষ্টা সবার মধ্যেই আছে। তাই মানুষও স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালােবেসে, যত্ন করে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করতে পারে। এজন্য সংসার ত্যাগ করে নির্জন পাহাড়-পর্বতে অবস্থানের প্রয়ােজন নেই। সংসারের মধ্যে থেকে, জীবজগতের মধ্যে থেকেই তাদেরকে ভালােবেসে স্রষ্টার আশীর্বাদ লাভ করা যায়। আর্তপীড়িত, অসহায়, দরিদ্র মানুষকে ভালােবেসে, তাদের সেবা করার মাধ্যমেই আল্লাহ বা স্রষ্টার সেবা করা যায়। আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থে নদ-নদী, খাল-বিল ভরাট করে স্রোতধারা ক্ষীণ করে দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণীর উৎস নষ্ট করছি। বন- বনানী, ধ্বংস করে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট করছি। ঈশ্বরের প্রকৃতিকে নানাভাবে দূষিত করছি। ফলে মারাত্মক দূষণের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে জীবজগৎ তথা মানুষের উপরও। ফলে মানুষ নানা ধরনের কঠিন সমস্যার মুখােমুখি হচ্ছে। এর জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়- মানুষই। স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালাে না বেসে আমরা স্রষ্টার রহমত এবং আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একের পর এক ভয়াবহ গজবের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। অথচ আমরা যদি স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টিসমূহকে প্রাণ দিয়ে ভালােবাসতাম, জীবজগতের যত্ন ও পরিচর্যা করতাম, জীবের সেবায় আত্মনিয়ােগ করতাম তাহলে স্রষ্টাও খুশি হতেন। পৃথিবীর ভারসাম্যও রক্ষা হতাে। মহামানব ও মনীষীরা প্রকৃতি ও জীবকে ভালােবেসেই মহান স্রষ্টার সেবা করেছেন। কাজেই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং মহত্তম কল্যাণের প্রয়ােজনেই প্রতিটি জীবের সেবা করা প্রয়ােজন।


 এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন। 

সম্পর্কিত টপিক

৪ টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button