ভাব-সম্প্রসারণঃ ধনসম্পদের অধিকারী হলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্যে প্রয়ােজন মনের উদারতা ও বিশ্বাস। তাই ধন থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। ধনী হওয়ার জন্যে প্রয়ােজন প্রশস্ত মন।
একদিকে ঐশ্বর্য-আকাঙক্ষা, অন্যদিকে ত্যাগ-মহিমা। একদিকে আত্মসুখ, অন্যদিকে মানব কল্যাণ- মানব-জীবনের এই দুই দিগন্ত। এক দিগন্ত তাকে ডাকে আত্মপরিধির মধ্যে, অন্য দিগন্ত ডাকে বিশ্বের পরিধিহীনতার মধ্যে। বিত্ত এবং চিত্তের মধ্যে স্থাপন করতে হবে সুষম সংগতি। ‘বিত্ত’ যেন বিষয়-বিষ-বিকারে পরিণত না হয় এবং ‘চিত্ত’ও যেন কেবল স্বপ্ন-বিলাসিতার প্রতীক মাত্র না হয়। বিত্ত-বাসনা এবং চিত্ত-বিলাসের মধ্যে সংগতি স্থাপিত না হলে জীবনের সার্থকতা নেই। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু এসব বিত্তবানের সমাদর ক্ষণস্থায়ী। তারা সমাজে সাময়িকভাবে সমাদৃত হলেও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে না। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এ পৃথিবী থেকে তাদের নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়, এমনকী আপনজনেরাও তাদের নাম স্মরণ করে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তি ধনী হলে সে শুধু মৌখিক সমাদরই পায়, সম্মান পায় না। তার মূর্খতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাশা করে। কিন্তু যারা জ্ঞানী, প্রতিভাবান, চরিত্রবান এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী, তাদের দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। তাই মৃত্যুর পরেও তারা পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন।
অর্থ মানবজীবনে যে সর্বনাশ ডেকে আনে, হৃদয়বত্তাই মানুষকে সেই সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এ ছাড়া, চিত্তের নির্দেশে বিত্তের সদ্ব্যবহার হলে মানুষ আর আত্মসুখ-সর্বস্ব হতে পারে না। প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাসের সামগ্রী ধন নহে’। যিনি উদারচেতা মহাপুরুষ, তিনি বিত্তের দাস না হয়ে বিত্তকেই নিজের দাসে পরিণত করেন। এটাই মানুষের আদর্শ হওয়া উচিত।