বাংলা রচনা

রচনাঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

4.6/5 - (230 votes)

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিষয়ঃ রচনা
শ্রেণিঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ SSC HSC JSC

সূচনা

কবি-সাহিত্যিকরা একটি জাতিকে নানাভাবে নিজেদের লেখনী দ্বারা উপকৃত করেন। বাঙালি জাতির তেমনই একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি মনীষার এক আশ্চর্য প্রকাশ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিচিত্র ও বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভার জন্য শুধু নয়, তাঁর ভাব, ভাষা, বিষয়বস্তুর গভীরতার জন্যও তিনি অনন্য। সত্য, সুন্দর কল্যাণ এই তিন বিশ্বজনীন বােধের ওপরই তার সমগ্র সৃষ্টিকর্ম প্রতিষ্ঠিত। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনাে শাখা নেই যেখানে তার জাদুকরী প্রতিভার স্পর্শ লাগেনি। সুদীর্ঘ জীবনে সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি তিনি সমাজকর্ম ও জমিদারি কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। কবি হয়েও তিনি মানুষকে কর্মে অনুপ্রাণিত করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই একমাত্র নােবেল বিজয়ী কবি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও পরিবার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার (Kolkata) ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে  ইংরেজি ৭ই মে, ১৮৬১ বাংলায় ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮  বঙ্গাব্দ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (Debendranath Tagore) এবং মাতার নাম সারদা দেবী (Sarada Devi)। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী চার-পাঁচ বছর বয়সে গৃহশিক্ষকের কাছেই তার পড়াশােনা শুরু হয়। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, বিজ্ঞান, অস্থিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি শৈশবে পাঠ গ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে ভর্তি হন।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীর মেইন গেইট এর একটি ছবি।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীর মেইন গেইট এর একটি ছবি।

পারিবারিক প্রেক্ষাপট

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পারিবারিক বাসভবন ছিল জোড়াসাঁকোর ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনে। সেখনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয়েছিল। সেই যুগে জোড়াসাঁকো ছিল বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্ছল। জোড়াসাঁকোর আশেপাশের অঞ্চলগুলো ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। রবিন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের (Ram Mohan Roy) বন্ধু এবং ব্রাহ্মধর্মের প্রধান সংগঠক। এরপর রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন এবং তাকে মহর্ষি উপাধিতিতে ভূষিত করেন। অস্পৃশ্যতা প্রথার কারণে কেবল মাত্র পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ Bangladesh) যশোর-খুলনার পিরালী ব্রাহ্মণ কন্যারাই ঠাকুর পরিবারে বধূ হয়ে আসতেন ।

শৈশব ও কৈশোরে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার পিতামাতার চোদ্দো সন্তানের মধ্যে কণিষ্ঠতম। খুব ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর আগ্রহ ছিল। তার কারন হল সে সময়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য নামডাক ছিল। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ বড়দাদা) ছিলেন সম্মানীয় দার্শনিক ও কবি। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা) ছিলেন বাঙালি লেখক এবং ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের প্রথম ভারতীয় সদস্য। স্বর্ণকুমারী দেবী (রবীন্দ্রনাথের দিদি) ছিলেন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক। মোট কথা রবীন্দ্রনাথের পরিবারটি ছিল শিক্ষা এবং সংস্কৃতির দিক দিয়ে খুবই উচ্চ। এবং এরই প্রভাব পরে রবীন্দ্রনাথের উপর। তবে রবীন্দ্রনাথের রচনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল কাদম্বরী দেবী। কাদম্বরী দেবী ছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী। কাদম্বরী দেবী ও রবীন্দ্রনাথ দুজনেই খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন। কিন্তু ১৮৮৪ সালে কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন।

১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখতে যেমন ছিলেন তার একটি ছবি
১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখতে যেমন ছিলেন তার একটি ছবি

শৈশবে রবীন্দ্রনাথ পিতার সান্নিধ্য তেমন পাননি কারন তার পিতা উত্তর ভারত, ইংল্যান্ড ও অন্যান্য পর্যটনে ব্যস্ত থাকতেন। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ১৮৭৫ সালে রবীন্দ্রনাথ তার মাকে হারান। ধনাঢ্য পরিবার হাওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথকে থাকতে হয়েছে ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানে।  ভৃত্যদের সন্তুষ্ট রাখতে বালক রবীন্দ্রনাথ অল্প আহার করতেন। রবীন্দ্রনাথকে পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে হত। শুধু স্কুল ছাড়া ঘরের বাহিরে যাওয়া ছিল বারন।

রচনাঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রচনাঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাজীবন

পারিবারিক রীতি অনুযায়ী চার – পাঁচ বছর বয়সে গৃহশিক্ষকের কাছেই তার পড়াশুনা শুরু হয়। ছয় বছর বয়সে ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে (Oriental Seminary) ভর্তি হন। বছরখানেক পর নর্ম্যাল স্কুল, এরপর বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে (St. Xavier’s Collegiate School) কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

১৮৭৩ সালে ১১ বছরে তার উপনয়ন (Upanayana) অনুষ্ঠিত হলে পিতার সাথে কয়েক মাসের জন্য দেশ ভ্রমনে বের হন। প্রথমে যান  শান্তিনিকেতনের পারিবারিক এস্টেটে। সেখানকার প্রকৃতির সান্নিধ্যে এই দিনগুলি সম্পর্কে পরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন:
“যাহা দেখিলাম না তাহার খেদ মিটিতে বিলম্ব হইল না – যাহা দেখিলাম তাহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট হইল। এখানে চাকরদের শাসন ছিল না। প্রান্তরলক্ষ্মী দিক্‌চক্রবালে একটি মাত্র নীল রেখার গণ্ডী আঁকিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাতে আমার অবাধসঞ্চরণের কোনো ব্যাঘাত করিত না।”

পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। পরে ১৮৭৮ সালে অক্টোবর মাসে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে লন্ডনে যান। লন্ডনে তিনি  ব্রাইটন ও হোভের মেদিনা ভিলায় ঠাকুর পরিবারের একটি বাড়িতে অবস্থান করেন এবং স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে (University College London) ভর্তি হন। কিন্তু ১৮৮০ সালে কোন ডিগ্রি না নিয়ে রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে তার সাহিত্য প্রতিভার উম্মেষ ঘটে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়।

কর্মজীবনে রবীন্দ্রনাথ

লন্ডন থেকে ফিরে এসে ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর ভবতারিণীর নাম পরিবর্তন করে মৃণালিনী দেবী। মাধুরীলতা, রথীন্দ্রনাথ, রেণুকা, মীরা, শমীন্দ্রনাথ এই পাঁচ সন্তানের পরিবার ছিল রবীন্দ্রনাথের।
১৮৯১ সালে পিতার আদেশক্রমে তিনি নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), রাজশাহী, পাবনা ও উড়িষ্যার ঠাকুর পরিবারের জমিদারি তদারকির করার জন্য বাংলাদেশে আসেন। সেখানে কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। পদ্মা নামে বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। প্রজাবর্গের সাথে তিনি বন্ধুর মত মিশেছিলেন। তাই গ্রামবাসীরাও তার সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করতেন।

সাহিত্য সাধনায় রবীন্দ্রনাথ

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে সর্বদা সাহিত্যের অনুকূল হাওয়া বইত। রবীন্দ্রনাথের জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পাদনায় ১৮৭৭ সালে মাসিক ভারতী প্রকাশিত হয়। দাদার অনুপ্রেরণায় চোদ্দ বছর বয়সে তিনি বনফুল নামে একটি কাব্য রচনা করেন। এরপর কবিকাহিনী, সন্ধ্যাসংগীতপ্রভাতসংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল প্রভৃতি কাব্য একের পর এক প্রকাশিত হয়।

১৮৮২ সালে কলকাতা ১০ নং সদর স্ট্রিটে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ‘নিঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি রচনা করেন। এটি তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্মের ইঙ্গিতবাহী কবিতা। কলকাতার বাইরে পল্লিপ্রকৃতি ও তৃণমূল সংলগ্ন মানুষের মাঝে এসে তার সৃষ্টিকর্ম নতুন সমৃদ্ধি লাভ করে। ‘মানসী’, ‘সােনারতরী’, ‘চিত্রা’ প্রভৃতি বিখ্যাত কাব্যগুলাে তিনি এ সময়েই রচনা করেন। তাঁর লেখা চলতে থাকে বিরামহীন। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের মধ্যে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের জীবন মূর্ত হয়ে ওঠেছে। মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ অজস্র কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, প্রবন্ধ, পত্রসাহিত্য, অনুবাদ, ভাষা ও সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব চিত্রকর্মর্সই বহুমাত্রিক রচনাসম্ভার দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের সাহিত্যকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অর্জন

১৯১১ সালের ৭ই মে রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক কবিকে দেশবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নিজের অনুবাদ করা এবং ইংরেজ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস-এর সূচনা লেখা গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হলে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নােবেল পুরস্কার লাভ করেন। এ বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের সম্মানার্থে বেশকিছু নামাঙ্কিত স্মারক রয়েছে। যেমন
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা
খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বীরভূম
গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি কুঠিবাড়ি শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে বাংলাদেশে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
ঙ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার
চ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা
ছ) রবীন্দ্রনাথ সড়ক, যশোর, বাংলাদেশ

বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব

বর্তমান সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেল বিজয়ী দার্শনিক অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) রবীন্দ্রনাথ একজন “হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব”“গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ভারতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। আজ বাঙালি সমাজ ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী এবং ২২ শে শ্রাবণ প্রয়াণবার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে। তাছাড়া ঋতু উৎসব পালনের মাধ্যমেও কবিগুরুকে স্মরণ করা হয়। বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া বা রবীন্দ্ররচনা পাঠের রেওয়াজও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ

জীবনের মাঝ পথে এসে কবিগুরু অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। কারন ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান।  এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর[ এবং ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। এত বিয়োগ ব্যাথা সহ্য করার পরও সাহিত্য পিপাসু কবিগুরুর লিখা থেমে থাকে নি। জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। জীবনের শেষ দিকে বিজ্ঞানের উপর আসক্তি বেরে যায় এবং ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়।

শেষ চার বছর রবীন্দ্রনাথ ধারাবাহিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। দুইবার তার তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। ১৯৩৭ সালে একবার অজ্ঞান হয়ে গেলে কবিগুরু অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পরেছিল। এরপর সেরে উঠেছিলেন। ১৯৪০ সালে আবার অসুস্থ হয়ে পরলে সে বার আর সেরে উঠতে পারেন নি। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার কারন, ১৯৪১ সালে ৮০ বছর বয়সে, জোড়াসাঁকোর নিজ বাসভবনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন

উপসংহার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভা বিচিত্র ও বহুমুখী হলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। সত্য, সুন্দর, কল্যাণই তার আদর্শ। তিনি মানবতার কবি, প্রকৃতির কবি। পৃথিবীর রূপ-মাধুর্যকে তিনি আকণ্ঠ পান করেছেন। সীমার মাঝে অসীমের সন্ধান করেছেন। অপরূপ আলােয় আলােকিত এক জীবনের দিকেই ধাবিত তার সমগ্র সৃষ্টিকর্ম। তার অজস্র সৃষ্টি আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অপরিমেয় সম্পদ হয়ে আছে। তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। বেঁচে থাকবেন নিজের সৃষ্টিকর্মের মাঝে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

2 Comments

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button