![]() |
source: istockphoto |
প্রিয় পাঠক, এর আগের পর্বে আলোচনা করেছিলাম কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন নিয়ে। আজ এর দ্বিতীয় পর্বে কোরবানির বিধান নিয়ে আলোচনা করবো।
কোরবানির হুকুম কি? ওয়াজিব নাকি সুন্নত? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটি মত রয়েছে।
প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।
দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। (আহকামুল উযহিয়্যাঃ মুহাম্মদ বিন উসাইমিন, পৃ-২৬)
যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল
(১) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
তোমরা প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাতাদায়ক ও পশু কোরবানি কর। (সুরা কাওসারঃ২)
আর আল্লাহ রাব্বল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজহ্ –৩১২৩ হাদিসটি হাসান)
যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী । তাই কোরবানি ওয়াজিব।
(৩) রাসূলে কারীম স. বলেছেনঃ
হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজহ্ –৩১২৫ হাদিসটি হাসান)
যারা কোরবানি সুন্নত বলেনতাদের দলিল
(১) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেনঃ
তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানিসম্পন্ন করার আগে তার কোনচুল ও নখ না কাটে। (মুসলিম ১৯৭৭)
এ হাদিসে রাসূল (সঃ)-এর ‘যে কোরবানি করতে চায় কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয় ।
(২) রাসূল (সঃ), তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয় ।
শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ) উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।
কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন (পর্ব ১)