২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের “বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা” ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট।

অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরঃ ৩
অধ্যায়ঃ দ্বিতীয়
অধ্যায়ের শিরোনামঃ বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম)
অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনামঃ গ্রিক সভ্যতা ও রোমান সভ্যতার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনপূর্বক বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতিতে উভয় সভ্যতার অবদান মূল্যায়ন
নিধারিত কাজঃ

আজকের যেই বিশ্বসভ্যতায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি তার সূচনা করেছিল এমন এক মানুষেরা যারা না জানতো কৃষি কাজ, না জানতো গৃহনির্মাণের কৌশল। পাথরে পাথরে ঘষা দিয়ে আগুন ধরানো আর খাদ্যের জন্য বনে বনে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোই আস্তে আস্তে সভ্যতার খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে পরিণত হয়েছে সভ্য মানুষে। ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে মানুষের বুদ্ধি-চিন্তা-চেতনা।
গ্রিকসভ্যতাঃ ইউরোপ মহাদেশের গ্রিক রাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রাচীন কয়েকটি শহরকে কেন্দ্র করে গ্রিক সভ্যতার ঘটে উদ্ভব। ভূ-প্রকৃতিই দেশটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। দক্ষিণ গ্রিস, মধ্য গ্রিস ও উত্তর গ্রিস। মেসিডােনিয়ান অধিপতি আলেকজাণ্ডারের শাসনামলে এ সভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে আধুনিক মিসর, ইসরাইল, প্যালেষ্টাইন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইরান হয়ে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর, ইজিয়ান সাগর দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে গ্রিক সভ্যতাকে ‘ওসেনিয়ান’ (সাগরীয়) সভ্যতা বলা হয়। অপরদিকে মিসর, ব্যাবিলন সভ্যতা ছিল নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা।
প্রাচীন গ্রিক সমাজের বিশেষত্ব দাসপ্রথা, গ্রিকদের আগে আর কোন সমাজই দাসত্বের বুনিয়াদের উপর গড়ে ওঠে নাই। গ্রিকদের আদি বাসস্থান গ্রিসে নয়। গ্রিসে আসার পূর্বে তারা থিসালি ও এপিরাসে বাস করত। গ্রিক সভ্যতার সূচনাকাল থেকে পতন পর্যন্ত এর রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালােচনা করে, এ সভ্যতাকে ২টি ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায়। যথা: ১. হেলেনিক যুগ। ২. হেলেনিস্টিক যুগ।
গ্রিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে আদিকালকে ‘হােমারিক যুগ’ বলা হয়। গ্রিক কবি হােমারের নাম থেকে এ যুগের নামকরণ করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ৮০০ অব্দ পর্যন্ত এই যুগের বিস্তৃতি। বিখ্যাত কবি হােমার ‘ইলিয়ড’ এবং ‘ওডিসি’ নামে দুটি মহাকাব্য রচনা করেন। তার রচনাবলী থেকে গ্রিক ইতিহাস, ভূগােল, সাহিত্য, লােক ঐতিহ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। হােমারিক যুগে সমগ্র গ্রিস ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ সংস্থায় (Village/Rural Community) বিভক্ত ছিল এবং স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হতাে।

- শিক্ষা: শিক্ষা সম্পর্কে গ্রিক জ্ঞানী-গুণীরা বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে। বিশেষ করে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রতি তারা গুরুত্ব দিয়েছিল। তারা মনে করতো শিক্ষিত নাগরিক সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারবে। তাই তারা তাদের সন্তানকে সাত বছর বয়স থেকে পাঠশালায় পাঠাতো। দাসের সন্তান ছাড়া সকল শ্রেণীর সন্তানেরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেত।
- সাহিত্য: প্রাচীন গ্রিস সাহিত্য চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেছিল। তবে নাটক রচনায় তারা বেশি পারদর্শী ছিল। হোমরিক যুগে গ্রিক সাহিত্যের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি’তে গ্রীকদের বীরত্বের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হোমারিক যুগের পরে গ্রীক সমাজে গীতিকাব্য ও শোক গাথা আবির্ভাব ঘটে। সেই সময় সোলেন ছিলেন একজন বিখ্যাত গীতিকাব্য রচিয়তা। এছাড়া বিখ্যাত নাট্যকার ছিলেন এসকাইলাস, ইউরিপিডিস, প্রমুখ।
- দর্শন: পৃথিবী ব্যাপী সভ্যতার ইতিহাসে গ্রীক দর্শন গােটা বিশ্বের দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। অদ্যাবধি জ্ঞানের জগতে যে সকল গ্রিক কবি দার্শনিক জ্ঞানের আলােকবর্তিকা বিতরণ করেছেন তাদের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত শিক্ষাগুরু সক্রেটিস। সক্রেটিস এর ছাত্র প্লেটো ও প্লেটো এর ছাত্র এ্যারিস্টটল বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সে সময়ে থালেস ছিলেন জনপ্রিয় দার্শনিক যিনি সর্বপ্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণটি ব্যাখ্যা করেন। পরবর্তীতে গ্রিসে যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে।
- শিক্ষা: রোমানদের শিক্ষার মূল কার্যক্রমে ছিল খেলাধুলা ও বীরদের স্মৃতিকথা বর্ণনা করা। কারণ রোমের যাত্রা শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে। তাদের সবকিছুই ছিল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সে সময়ে যারা উচ্চ শ্রেণীভূক্ত ছিলেন তাদের জন্য গ্রিক ভাষা ছিল একটি ফ্যাশন। যুবকরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন বিখ্যাত পাঠশালাতে যেত।
- সাহিত্য: রোমান সভ্যতায় সাহিত্য চর্চা বেশ জনপ্রিয় ছিল তার মূল কারণ হল সে যুগে সাহিত্য চর্চায় স্বাধীনতা ছিল ব্যাপক। রোমান সাহিত্যে নাটকের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। মলিয়ে প্লুটাস এবং টেরেন্স ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার।
- দর্শন: রােমানরা দর্শনের ক্ষেত্রেও গ্রিক প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। গ্রিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই রােমান দর্শনের সূত্রপাত। রােমীয় দার্শনিকদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন সিসিরাে (Cicero), লুক্রেটিয়াস (Lucretius)। লুক্রেটিয়াস ছিলেন গ্রিক এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রবক্তা। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘On the Nature of Things’ অপর দিকে সিসিরাে ছিলেন গ্রিক স্টয়িক মতবাদের অনুসারী। তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘On Duty’ তে স্টয়িক মতবাদের প্রতিফলন দেখা যায়।
গ্রিক সভ্যতায় বিজ্ঞান, স্থাপত্য, ভাস্কর্যর উন্নতি হয়েছিল চোখে পড়ার মত। খ্রিঃপূর্ব ৬০০ অব্দে গ্রিকরা প্রথম বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করে। এবং প্রথমবারের মত পৃথিবীর মানচিত্র আঁকতে সক্ষম হয়। শুধু তাই নয়, পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয় তা প্রথম প্রমাণ করে গ্রিক বিজ্ঞানীরা। গ্রিক জ্যোতির্বিদরা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, বজ্র ও বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক কারণে ঘটে এই সত্যগুলোকে সর্বপ্রথম গ্রিকরাই প্রমাণ করেছিল। বর্তমানের জ্যামিতির কঠিন কঠিন সূত্র আমরা সমাধান করছি তারও হাতেখরি বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস দিয়ে গেছেন। গ্রিক সভ্যতায় যে শিল্পটির অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছিল তা হল স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে। গ্রিক চিত্রশিল্পের নির্দশন মৃৎপাত্রে আঁকা চিত্রের মধ্যে দেখা যায়। বড় বড় স্তম্ভের উপর তৈরী করা প্রাসাদ ইতিহাসকে দেয় গ্রিক সভ্যতা স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও বিজ্ঞানে কতোটা দক্ষ ছিল।
দ্রুত উত্তর আশা করছি আপনাদের কাছে ।মানবিক শাখা
মজা নেন নাকি?
কেন?? ভালো জিনিস শেয়ার করতে আপনাদের এত কষ্ট হয় কেন??