Uncategorized

ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা

5/5 - (3 votes)
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা

শ্রেণী : ৭ ম , বিষয়: বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২য় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে লেখ। তােমাদের বিদ্যালয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কীভাবে পালন করা হয়েছিল তার একটি পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা দাও।
ভারতীয় উপমহাদেশ দীর্ঘ দুই শত বছরের মতাে ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিল। সে হিসাবে আমাদের এ বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব বাংলাও ব্রিটিশদের অধীন ছিল। তাদের শােষণের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে না পেতেই শুরু হয় পশ্চিম-পাকিস্তানিদের শােষণের জাঁতাকল। পশ্চিমপাকিস্তানিদের শােষণের প্রথম আঘাতটি আসে আমাদের ভাষার উপর। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা। মূলত ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সাল থেকেই। নিন্মে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলঃ
১৯৪৭ (ধর্ম ও ভাষা-সংস্কৃতি বৈষম্য): ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্রের নীতি ও আদর্শ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। হিন্দু ও মুসলিম দুই জাতিতে পৃথক হয়ে যায়। জিন্নাহ গণপরিষদে ঘোষণা দেয়  মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ পরিচয় ভুলে গিয়ে আমরা সকলেই এখন এক পাকিস্তানি হবে হবে। এতে করে পাকিস্থান সরকার ইসলাম ও উর্দুভাষার উপর জোর দিলেও অন্যান্য ধর্ম ও ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। শুরু হয় ধর্ম ও ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে বৈষম্য। 
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিঃ  পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্রভাষা কী হবে এই প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্থানের জনগণ তাদের মায়ের ভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ষড়যন্ত্র করে।
১৯৪৮ (উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা): ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছাত্র শিক্ষকদের সমাবেশে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দ পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে উপস্থিত ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করে। দেশের শিক্ষক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতারা জিন্নাহর এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারে নি। 
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন: মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণার পর মাতৃভাষার অধিকারের জন্য এদেশে একাধিক উদ্যোগের কথা জানা যায়। গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সগ্রাম পরিষদ। যার নেপথ্যে ছিল রাজনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমান, আবদুল মতিন, কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী প্রমুখ।
রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার: ১৯৪৮ সালে ১১ই মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।  বহু ছাত্র শিক্ষক আহত হন।  এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মঘট পালন করে।
গণপরিষদ ঘেরাও ও স্মারকলিপিঃ ১৯৫২ সালে ঢাকার প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। ছাত্ররা গন পরিষদ ঘেরাও করে এবং রাষ্ট্রভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার সিধান্ত নেয়। দিনটি ছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারী। 
১৪৪ ধারা জারি: গণপরিষদ ঘেরাও ঠেকাতে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ছাত্রদের বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।  ফলে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে ১৪৪ ধারা জারি করে। 
১৪৪ ধারা ভঙ্গ:  মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সংরামি-সাহসী ছাত্ররা ২০ শে ফেব্রুয়ারি রাতে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে।  ছাত্রদের ঠেকাতে পুলিশ লাঠি চার্জ করে এতেও ছাত্রদের দমিয়ে রাখতে পারলো না। উপায় না পেয়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করে । নিহত হলেন রফিক উদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, আবদুস সালাম। এছাড়া ২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছিল নাম না জানা আরও অনেক ।
বাংলাকে  রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান:  বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করতে পেরেছিল। বাংলা মায়ের তরুণ ধামাল ছেলেদের বুকের রক্ত বৃথা যায় নি। শেষ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার আইনসভায় বাংলাকে  পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। 

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

3 Comments

মন্তব্য করুন

Back to top button