সুন্দরবন
চির সবুজের দেশ আমাদের এ মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। গাছপালার চমৎকার সমারোহ এবং বিচিত্র সব বন্য প্রাণীর সমাবেশ সুন্দরবনকে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসাবে উপস্থাপন করে। বৃহত্তর খুলনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ জুড়ে সুন্দরবনের বিস্তার।
![]() |
সুন্দরবনের একটি ছবি। সূত্রঃ ShutterStock |
জোয়ার-ভাটার কারণে এখানকার মাটিতে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার প্রভাব বেশি। সুন্দরবনের উদ্ভিদকুলও বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষ, লতাগুল্ম, ঘাস প্রভৃতি উদ্ভিদ। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ ‘সুন্দরী বৃক্ষ’। এছাড়া অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে গেওয়া, গরান, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন প্রভৃতি। সুন্দরবনের ছােট ছােট খালের পাড়ে জন্মে ‘গােলপাতা’। বিচিত্র প্রাণীদের সমারােহ সুন্দরবনকে ঐশ্বর্যশালী করে তুলেছে। প্রাণীসমূহের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সবচেয়ে পরিচিত ও বিশ্ব বিখ্যাত। এছাড়া রয়েছে বিচিত্র হরিণ, বানর, সজারু, শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী। এক সময় সুন্দরবনে প্রচুর হাতি দেখা যেত। বর্তমানে অরণ্য কমে যাওয়ায় একটিও হাতি চোখে পড়ে না। সুন্দরবনে রয়েছে নানা রঙের ছােট-বড় নানা প্রাণী। যেমন- বক, সারস, হাড়গিলা প্রভৃতি। সমুদ্র উপকূলে দেখা মিলে গাংচিলের। চিল, মাছরাঙা, প্যাঁচা, বুলবুলি, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল প্রভৃতি পাখির বিচিত্র সমারােহও দেখা যায় সুন্দরবনে। প্রায় ৫০ জাতের সরীসৃপ দেখা যায়। বিষাক্ত সাপের আনাগােনাও লক্ষ করা যায় সুন্দরবনে। সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দহ নয়, অর্থনীতিতেও বিশাল ভূমিকা রাখে। সুন্দরবনের বৃক্ষ কাঠের স্থাপনা তৈরিতে, জ্বালানি হিসাবে এবং কাঠ কয়লা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ঘরের চাল ও বেড়া তৈরিতে গােলপাতা ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে জীবিকানির্বাহ করে। কেবল সুন্দরবনকে কেন্দ্র করেই ব্যাপক জনগােষ্ঠী বেঁচে আছে। আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই বনকে সংরক্ষণ করতে হবে।