শুধাল পথিক, সাগর হতে কি অধিক ধনবান
জ্ঞানী বলেন, বাছা, তুষ্ট হৃদয় তরো চেয়ে গরীয়ান
for class 6, 7, 8, 9 10, 11 JSC SSC HSC
মূলভাব
আত্মতুষ্টিই মানবজীবনের সবচেয়ে পরম পাওয়া। আত্মতুষ্টিতেই রয়েছে পরম সুখ যার কোনো তুলনা নেই। ধন রত্ন দিয়ে পরিপূর্ণ সাগরের চেয়ে তুষ্ট হৃদয় অধিক সমৃদ্ধ।
সম্প্রসারিত ভাব
পার্থিব জীবনে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যেমন শেষ নেই, অভাবেরও কোনাে শেষ নেই। নতুন নতুন পাওয়া মানুষের মনে নতুন নতুন অভাববােধ জাগ্রত করে। মহাসাগরের অসংখ্য রত্নরাজির অফুরন্ত ভাণ্ডার পর্যন্ত সেঁচে আনতে চায়। সম্পদেও তার সন্তুষ্টি আসে না। সুখ তার কাছে কেবলই পলায়নপর সােনার হরিণ হয়ে তাকে হাতছানি দেয়, কিন্তু ধরা দেয় না। সম্পদের প্রতি মানুষের অতিরিক্ত লােভ মানুষকে যান্ত্রিক করে তােলে। সম্পদ আহরণ নিয়েই চলে সব ব্যস্ততা। জীবনের যে অপরাপর উদ্দেশ্য আছে, কর্তব্য আছে, মানুষ তা ভুলে যায়।
পার্থিব তুচ্ছ বস্তুগত ধন এভাবে আহরণ করতে গিয়ে সে অন্যায়, অত্যাচার, খুন, ব্যভিচার ইত্যাদি জঘন্য কাজ করতেও কুণ্ঠাবােধ করে না। এ পাওয়া না পাওয়ার মাঝে নিমজ্জিত থেকে সে | কখনােই সুখের নাগাল পায় না। কারণ অতৃপ্তির বেদনা সবসময় তাকে কষ্ট দেয়। অপরপক্ষে যারা জ্ঞানী তারা অল্পতেই তুষ্ট থাকেন। অর্থ-সম্পদকে ঘিরে তার চাওয়া কম। জীবন চলার জন্য যতটুকু প্রয়ােজন, ততটুকু পেলেই তিনি তৃপ্ত। অতৃপ্তির বেদনা তাকে কখনােই কষ্ট দেয় না। এ আত্মতৃপ্তিই তার মনােবল বাড়িয়ে দেয়। পার্থিব ধনসম্পদ পায়ে ঠেলে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায় জীবনের প্রকৃত গন্তব্যের দিকে- যেখানে রয়েছে মনােতুষ্টির অপার সুখ। যে হৃদয় চাওয়া পাওয়ার সীমাবদ্ধতা মেনে তুষ্ট থাকে, সে হৃদয়ই গরীয়ান। তাই মানুষকে পরিতৃপ্ত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।
মন্তব্য
আত্মতুষ্ট হৃদয় সাগরের চেয়ে বিশাল, আকাশের চেয়েও উদার।
(বিকল্প)
মূলভাব: আত্মতৃপ্তি বা পরিতৃপ্তি হলাে অধিকতর সম্মানজনক। আর আত্মতৃপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন সবচেয়ে ধনবান। অর্থ, বিত্ত দ্বারা সুখ বা আনন্দ লাভ করা যায় না কিন্তু আত্মতৃতি দ্বারা তা সম্ভব।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের পাওয়ার আশা চিরন্তন অর্থাৎ চাহিদার শেষ নেই । সে যত পায় তত চায়। সাধারণ মানুষের মতে, পৃথিবীতে যে ব্যক্তি যত বেশি ধন সম্পদের অধিকারী সেই ধনী। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সব সময় প্রাচুর্যের মধ্যে ডুবে থাকে সেই ধনী। এ হিসাবে সাগর – মহাসাগরকে সবচেয়ে বেশি ধনবান বলা যায়। কারণ মহাসমুদ্রের তলদেশে মণিমুক্তা, হীরা, পান্না প্রভৃতি রত্নরাজিতে ভরপুর। একজন মানুষের জন্য, এত ধন সম্পদের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। অপরপক্ষে মানুষ সাগরের মতাে এত ধনবান হতে না পারলেও অনেক ধন সম্পদ অর্জন করতে পারে। কিন্তু এ ধন সম্পদ প্রকৃত অর্থে মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। যে ধন মানুষকে শান্তি দিতে পারে না, সে ধনের কোন মূল্য নেই। সে জন্য ধনবান হওয়ার মধ্যে গৌরবের কিছু নেই। শান্তিতে জীবন উপভােগ করার মধ্যেই সফলতা নিহিত। পরিতুষ্টির মধ্যেই এ অনাবিল শান্তির সন্ধান পাওয়া যায়। সে জন্য আমাদের যা আছে তা নিয়েই আমরা যদি তুষ্ট থাকি তাহলেই আমরা শান্তি ভােগ করতে পারি এবং মনে যদি শান্তি থাকে তাহলে মহৎ কাজ করা সম্ভব। কিন্তু যে ব্যক্তির মনে ধনবান হবার বাসনা প্রবল সে ভাল-মন্দ বিচার না করে সব সময় অর্থের মােহে ছুটতে থাকে। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোন শেষ নেই। একটা চাহিদার নিবৃত্তি ঘটলে আর একটা চাহিদার উদ্ভব হয়। এর ফলে সে যতই পায় না কেন, না পাওয়ার বেদনা তাকে অনবরত দগ্ধ করে। এতে শান্তি নেই বরং অশান্তি বিরাজ করে। তাই যিনি তুষ্ট হৃদয়ের অধিকারী তার জীবন ধনবান লােকের জীবন অপেক্ষা অধিক মূল্যবান এবং গরীয়ান। তুষ্টি বা পরিতৃপ্তির মূলেই নিহিত আছে ব্যক্তির জীবনের সকল সুখ-শান্তি। জ্ঞানী লােকের জীবনী পাঠ করে আমরা জানতে পারি যে, পার্থিব জগতের ধন-সম্পদের প্রতি তাঁদের কোন আকর্ষণ ছিল না। না পাওয়ার বেদনায় তারা কখনও বিচলিত হননি। যা ছিল তা নিয়েই তাঁরা পরম সুখে দিনাতিপাত করছেন। আত্মতৃপ্তিই তাদের কাছে পরম শান্তি।
মূলভাব: যে ধন মানুষকে শান্তি দিতে পারে না সে ধন সম্পদের কোন মূল্য নেই। তাই আমাদের উচিত যা আছে তা নিয়েই পরিতৃপ্ত থাকা। তাহলেই সমৃদ্ধ জীবন যাপন সম্ভব।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।