১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ মঞ্চ ভাষণ। নববর্ষ উপলক্ষে বক্তব্য (PDF)
পহেলা বৈশাখ (নববর্ষ) উপলক্ষে ভাষণঃ পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন। যা নববর্ষ নামে পরিচিত। এই দিন অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে মঞ্চ ভাষণ অন্যতম। আজকে বৈশাখ (নববর্ষ) নিয়ে সুন্দর একটি ভাষণ উপস্থাপন করব।
১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভাষণ
মাননীয় সভাপতি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্ত রাত্রির অবসান ঘটিয়ে নববৎসরের অরুণোদয়ের সূচনা ঘটল। বর্ষারম্ভে আজ নতুনকে স্বাগত জানাবার দিন। সূর্য পরিক্রমণের একটি চক্র পূর্ণ করে পৃথিবী আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে বিশ্ব-বিধানের এই আবর্তনের ধারা অব্যাহত আছে।
পৃথিবী চিরপুরাতন হয়েও আমাদের কাছে চিরনতুন। জরার অবসান ঘটিয়ে নবীনের আবির্ভাবকে সে যুগ যুগ ধরে স্বাগত জানিয়ে আসছে। মহাকালের এই নিত্য খেলায় একদিকে রুদ্রের সংহারলীলা, অন্যদিকে নটরাজের দক্ষিণপাণির বরাভয়। একদিকে বিনাশ, অন্যদিকে সৃষ্টি, একদিকে অবসান অন্যদিকে আরম্ভ। মানুষের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সুখ-দুঃখে গড়া একটি বছর।
কিন্তু তার জন্য শোক নয়-যা এলো, যা অনাগত সম্ভাবনায় সমুজ্জ্বল, তাকে আবাহন করার দিন আজ।
হে বৈশাখ, তাপস-নিঃশ্বাস বাতাসে পুরাতন বছরের সঞ্জিত আবর্জনার স্তূপকে উড়িয়ে দাও। বিলীয়মান অতীত নতুনের অভিষেকে রিচ্ছেদের অশ্রুবাষ্প নিয়ে যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। নিত্য চলার মধ্যে যে নবীনতা আছে নববর্ষ তারই মন্ত্রে আমাদের দীক্ষিত করে তুলুক। নববর্ষকে আহ্বানের মধ্যে এ নিত্য চলার বাণীটিই আমাদের কণ্ঠে পুনর্বার উচ্চারিত হোক।
একদিকে পৃথিবী চির-পুরাতন, চির-আবহমান আর একদিকে সে চির-নবীন। আবহমানের পথে পথে নতুনের অভিষেক রচনা করেই পৃথিবীর নিত্য-পরিক্রমা। মানুষ নবীনতার প্রত্যাশী। অতীতের প্রজ্ঞা তাকে ভবিষ্যতের পাদপীঠে উত্তীর্ণ হবার শক্তি দান করে। অতীতের জড়তাকে কাটিয়ে আমরা যেন নবীনতার আহ্বানে সাড়া দিতে পারি। নববর্ষে নতুন সূর্যালোককে সাক্ষী রেখে আমরা যেন আগামী দিনের সম্ভাবনাকে সার্থকতামণ্ডিত করে তুলতে পারি।
নববর্ষ সমগ্র মানুষের কাছে নবজীবনের দ্বার উন্মোচিত করে দিক। নতুন বছর যেন মুষ্টিমেয় ধনীর ভোগবিলাসের সঙ্কীর্ণ উল্লাসে অবসিত না হয়। দারিদ্র-লাঞ্ছিত পীড়িত মানুষের নিষ্ফল বিলাপে যেন পৃথিবী বিষণ্ণ না হয়ে ওঠে। যুদ্ধদীর্ণ বিশ্বের পাশবশক্তির তাণ্ডব যেন শান্তির শুভশক্তির কাছে পরাভূক্ত।
আজ নববর্ষের এই শুভক্ষণে, আসুন, কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা বলিঃ
যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।