রচনাঃ বিজয় দিবস (SSC HSC)
ভূমিকা
স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। সবাই চায় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত জীবনযাপন করতে। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদিত হয়েছিল বিজয়-রবি। দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের সমাপ্তি ঘটেছিল এ দিনটিতে। বাংলার মাটি শত্রু মুক্ত হয়ে এক নবযুগের সূচনা করেছিল। বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবজনক দিন। ‘বিজয় দিবস’ আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমের প্রতীক।
সংগ্রামের ইতিহাস
একসময় পুরাে ভারতবর্ষ শাসন করত ব্রিটিশ তথা ইংরেজরা। ১৯৪৭ এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ। একদিকে পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান।
ছবিঃ ইন্টারনেট। |
স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের কুচক্রী শাসকগােষ্ঠী নানাভাবে পূর্ব বাংলাকে শাসন ও শােষণ করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। রাজনীতি, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ, বিলি-বাটোয়ারা সব ক্ষেত্রেই তারা পূর্ব বাংলাকে ঠকাতে শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জাব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে।
↬ আরও জানোঃ পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম-পাকিস্তানের যে সব বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছিল
এরপরই শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করে। ২৫ মার্চ গভীররাতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে (Sheikh Mujibur Rahman) গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘােষণা করেন। আহ্বান করেন বাঙালি সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্যে। শুরু হয় শস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আর কোনাে উপায় খুঁজে না পেয়ে হানাদার পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে । ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৫টা ১ মিনিটে ঢাকায় রমনা রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। ১৯৭১-এ ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। তাই ১৬ই ডিসেম্বরকে আমরা পালন করি বিজয় দিবস হিসেবে।
বিজয় দিবস উদযাপন
প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য আমরা ভােরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এ দিন সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজের সাজে। বিজয় দিবস উপলক্ষে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ নানা অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে।
ছবিঃ ইন্টারনেট। |
এ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আলােচনা সভা, কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়ােজন করা হয়। এইদিন সকালবেলা ঢাকার প্যারেড ময়দানে (Parade Ground) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কূটনীতিবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। তাছাড়া মসজিদ-মন্দির-গির্জায় জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য
বিজয় দিবস আমাদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এ দিনটিতে আমরা পরাধীনতার ফাঁস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। বিজয় দিবস আমাদের জয়দীপ্ত গর্বের নিদর্শন। বাঙালি জাতি এই দিনের বিজয়ের সূত্রেই বীর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এই দিনেই বাঙালির স্বাধীন জাতি হিসেবে জয়যাত্রা শুরু। এই দিনটির মাধ্যমেই আমরা নতুন প্রজন্মকে এবং বিশ্বকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা। মনে করিয়ে দিই বাংলদেশ (Bangladesh) নামে একটি দেশের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাসের কথা, যা প্রতিটি বাঙালি তার হৃদয়ে ধারণ করে আছে। তাই বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর গভীর তাৎপর্যবহ।
বিজয় দিবস ও বর্তমান বাস্তবতা
আমরা যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের যে প্রত্যয়, ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা এখনও ভাবায়। আমাদের জাতীয় ঐক্যেও নানাধরণের বিভ্রান্তির বিষবাস্প প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরাজিত শক্তিরা আজও সুযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছে অথচ এরূপ ক্ষেত্রে আমাদের ভিত খুব একটা শক্ত নয়। দেশ জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আমাদেরকে বাঙালি জাতির সেই ঐকবদ্ধ প্লাটফর্মটি আবার গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই শত সমসার মাধ্যমেও আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে পারব।
উপসংহার
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ দিবসটির তাৎপর্য আমাদের জাতীয়জীবনে শুভক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। তাই এ দিনটি বাঙালি জাতীর জন্য বিশেষ একটি দিন। এ দিনটি শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনার জাগরনের দিন। এ দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দেশকে গড়ে তুলতে হবে, বিশ্বসভায় সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।