অর্থই অনর্থের মূল
ভাবসম্প্রসারণ অর্থই অনর্থের মূল ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণী SSC HSC JSC
মূলভাব
অর্থ প্রয়ােজনীয় জিনিস আবার এ অর্থই বহু অনাসৃষ্টির জন্ম দেয়। পৃথিবীতে যত লােমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশের মূলেই রয়েছে অর্থ। অর্থের জন্য ভাই ভাইকে, স্বামী স্ত্রীকে খুন করতেও দ্বিধাবােধ করে না।
সম্প্রসারিত ভাব
মানবজীবনে অর্থের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ অর্থ ছাড়া সুষ্ঠু জীবনযাপনের কথা চিন্তাও করা যায় না। মৌলিক প্রয়ােজন মিটানাে ব্যতিরেকে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আর প্রতিটি মৌলিক প্রয়ােজন মিটানাের জন্য দরকার অর্থের। অধুনা বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল সেসব দেশই বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়। পক্ষান্তরে, যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল সেসব দেশকে সচ্ছল দেশের নির্দেশনা মতাে চলতে হয়। শুধু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই নয় সর্বত্রই এর প্রতিফলন চোখে পড়ে।
আসলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় কর্ম ও অর্থের দ্বারা সম্পন্ন হয়। আপাতদৃষ্টিতে অর্থ মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নিয়ামক হলেও সেই অর্থই অনেক সময় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অর্থকে কেন্দ্র করে ভাইয়ে-ভাইয়ে, পিতা-পুত্রে ও স্বামী-স্ত্রীতে বিবাদ-বিসংবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহ লেগেই আছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই অনেক লােমহর্ষক ঘটনা চোখে পড়ে যার অধিকাংশই অর্থের কারণে সংঘটিত হয়। অর্থের লােভে মানুষ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই রাহাজানি এমনকি হত্যার মতাে জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হয়।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দেশের চরম সর্বনাশ ডেকে আনছে কেবলই অর্থের কারণে। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়। পৃথিবীতে যাবতীয় দ্বন্দ্ব, অশান্তি আর সংঘাতের মূল কারণও এ অর্থ। অর্থসম্পদের কারণেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা দেখা দেয়, শ্রমিকমালিকের মধ্যে মতবিরােধ এবং ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। অর্থের জন্যই মানুষ মানুষকে খুন করে। আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদের সেনাপতি সিমারের হাতে যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল তার মূলেও ছিল অর্থ। সুতরাং জগতে অশান্তির মূলই হচ্ছে অর্থ।
মন্তব্য
জীবনধারণের জন্য অর্থের আবশ্যকতা থাকলেও এর মােহে কখনই নীতি ও বিবেক বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। তাই অর্থের পিছনে না ছুটে কিভাবে নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায় তার পিছনে আমাদের ছুটা উচিত।