![]() |
বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা রচনা |
সূচনা
শিক্ষা মানুষকে বদলে দেয়, গড়ে তােলে একজন প্রকৃত মানুষ হিসাবে। তবে জৈবিক চাহিদা মিটানাের জন্য মানুষকে কাজ করতে হয়। এজন্য তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রায়ােগিক শিক্ষাও দরকার। প্রায়ােগিক শিক্ষার একটি স্তর মূলত বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক ও কৃৎকৌশলগত নিত্যনতুন আবিষ্কার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে কর্মসংস্থানের ধারণা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। উন্মােচিত হচ্ছে নিত্যনতুন কাজের দিগন্ত। বংশানুক্রমিক পেশাগত বৃত্তি অবলম্বন করে নিশ্চিত জীবনযাপনের দিন এখন আর নেই। এখন এমন সব কর্মদিগন্ত উন্মােচিত হচ্ছে যার সাথে বিশেষায়িত শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা ক্রমেই অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংজ্ঞার্থ ও তাৎপর্য
কর্মমুখী শিক্ষা সরাসরি কাজ বা পেশার সঙ্গে জড়িত। মােটকথা, যে শিক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থী ঘরেবাইরে, খেতেখামারে, কলেকারখানায় যেকোনাে কাজে বা পেশায় অংশ নিতে পারে তা-ই কর্মমুখী শিক্ষা। কর্মমুখী শিক্ষা একধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা। এ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং তাদেরকে সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী কাজ করতে সাহায্য করে।
আগেকার দিনে মানুষের ছিল অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। মানুষ তখন সুখে জীবন কাটিয়েছে। কিন্তু এখন জনসংখ্যা বেড়েছে বিপুলভাবে। এর প্রভাব পড়েছে সীমিত সম্পদের ওপর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতার ফলে কলকারখানা, অফিস-আদালতে কর্মসংস্থানের সুযোগ যাচ্ছে কমে। অন্যদিকে নবতর আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নব নব কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এগুলােকে কাজে লাগানাে না হলে বেকারত্ব অসহনীয় হয়ে উঠবে। কিন্তু দেশে এখনও ইংরেজ প্রবর্তিত চাকরিজীবী তৈরির সাধারণ শিক্ষার প্রাধান্যই রয়ে গেছে। ফলে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণদের ব্যাপক অংশই বেকার থেকে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে, কর্মমুখী শিক্ষা জীবন ও জীবিকার সুযােগ সৃষ্টি করছে বেশি। তাই যতই দিন যাচ্ছে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। কারণ এতে রয়েছে স্বকর্মসংস্থানের নানা সুযােগ। কর্মমুখী শিক্ষা দারিদ্র্য দূরীকরণেও কার্যকর সূচনা রাখতে সক্ষম। কর্মমুখী শিক্ষা স্বাধীন পেশা গ্রহণে ব্যক্তির আস্থা গড়ে তােলে এবং তাকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। তা বেকারত্বের সমস্যা উত্তরণেও সহায়ক।
কর্মমুখী শিক্ষার ধরন
কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়। এর লক্ষ্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক জনশক্তি সৃষ্টি করা। কর্মমুখী শিক্ষার সূচনা ত্রিমুখী :
১. জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানাে এবং তাদের সুপ্ত গুণাবলির বিকাশ ঘটানাে।
২. নৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবােধে শিক্ষার্থীদেরকে সঞ্জীবিত করা এবং তাদেরকে গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলা।
৩. কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে বৃত্তিমূলক, কর্মমুখী, উপার্জনক্ষম জনশক্তি গড়ে তােলা।
কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারের প্রয়াস
বাংলাদেশে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে বেশ কয়েকটি প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের মাধ্যমে চিকিৎসাবিদ্যা সম্প্রসারিত হয়েছে। এছাড়াও প্রকৌশল, পলিটেকনিক, গ্রাফিক আর্ট ও ভােকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং লেদার টেক্সটাইল টেকনােলজি কলেজ, ভেটেরিনারি কলেজ ইত্যাদির মতাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত ছােটখাটো কারিগরি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে। এছাড়া হােটেল-ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, উদ্যান পরিচর্যা, বিজ্ঞাপন ব্যবসা, সূচিশিল্প, মুদ্রণ, মৎস্য চাষ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, ফলমূল চাষ, কম্পিউটার চালনা, কুটির শিল্প ইত্যাদি পেশা ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তবে সব মিলিয়ে এরপরও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বিদ্যামান সুযোেগ এখনও বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য।
কর্মমুখী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমস্যা
কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রম বাস্তাবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামােগত সুযােগ-সুবিধার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রয়ােজনীয় শিক্ষক, অন্যান্য লােকবল সংস্থান, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রকট সমস্যা বিদ্যমান। শিক্ষকদের গুণগত মান উন্নয়নের জন্যে প্রশিক্ষণের প্রয়ােজনীয়তাও অনস্বীকার্য। এসব সমস্যা মােকাবিলার জন্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
excellent