গ্রাম্যমেলা অনুচ্ছেদ লিখন ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণি
গ্রাম্যমেলা
সাধারণত মেলা বসার জন্য হাট-বাজারের ন্যায় নির্দিষ্ট কোন স্থান নির্ধারিত থাকে না। গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খােলা মাঠে, মন্দির প্রাঙ্গনে, নদীর তীরে অথবা বড় বৃক্ষের নিচে গ্রাম্য মেলা বসতে দেখা যায়। পূর্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব স্থানে মেলার আয়ােজন করা হয়। মেলার প্যানে সাময়িকভাবে দোকানপাট বসার মত চালা নির্মাণ করা হয়। মেলা শেষ হওয়ার পর এগুলাে ভেঙে ফেলা হয়। বছরের শেষে মেলার আনন্দে আবারও মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার সে স্থানে। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাগুলাের কোনটি একদিন, কোনটি এক সপ্তাহ, কোনটি পনের দিন আবার কোন কোন মেলা এক মাসব্যাপী চলতে থাকে। আজকাল শুধু গ্রাম নয়, শহর বা আধা শহরেও মেলার আসর বসে। তবে গ্রামই মেলার উপযুক্ত পটভূমি। আমাদের দেশে গ্রামে সাধারণত ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা বৈশাখ, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিজয়া দশমী, দশই মহরম, চৈত্র সংক্রান্তি এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মেলা বসে থাকে। তবে উপলক্ষ যাই হােক না কেন মেলা বাঙালি সমাজ ও মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয় ও আনন্দের দিন। মেলায় সমাজের সর্ব শ্রেণীর মানুষ, ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলেই এসে মিলিত হয়। বিভেদের পার্থক্য ভুলে গিয়ে সকলেই এক আনন্দের জোয়ারে গা ভাসায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম্য মেলা শুধু আনন্দ চিত্তের শান্তিই দেয় না, বিত্তের শক্তি যােগায়। মেলায় কৃষি ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যাদি বেচাকেনা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের কামার-কুমার, তাঁতী, সুতারদের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস বানানাের হিড়িক পড়ে যায়। তাই দেখা যাচ্ছে, মেলার মাধ্যমে গ্রামীণ অনেক মানুষের কিছু উপার্জনের পথও প্রশস্ত হয়।
মেলাকে আশ্রয় করেই গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-উৎসের রুদ্ধ দুয়ার খােলে যায়। এর মধ্যেই সে খুঁজে পায় বেঁচে থাকার সার্থকতা। খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। সত্যপীর, শীতলা, মনসা, ষষ্ঠী, ওলাবিবি, সতী-মা এমনি কত লৌকিক দেবদেবী গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। কত শত শতাব্দীর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর ধর্মীয় আকুতির সঙ্গে এঁদের আত্মিক সম্পর্ক। এদের কেন্দ্র করে কত লােকগাথা, কত ব্রতকথা, পাঁচালী, ছড়া, গ্রাম্য সাহিত্য-সঙ্গীতের ধারা আজও চলে আসছে। মেলা গ্রামীণ জীবনের শুকনাে খাতে নিয়ে আসে প্রবল আনন্দ-জোয়ার। সেই জোয়ারেই বাঙালীর চিত্তভূমি সিক্ত হয়েছে।
nice