অনুচ্ছেদ লিখন : ধর্মনিরপেক্ষতা
প্রায় প্রতিটি মানুষই কোনাে না কোনাে ধর্মের অনুসারী। বাস্তবজীবনে আমরা দেখি একই ভূখণ্ডে বহু ধর্মের লােকের বসবাস। সেখানে সম্প্রীতি থাকে বলেই মানুষ এত সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারছে। আবার দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে একটি বিষয় আছে। ধর্মনিরপেক্ষতা হলাে মানবতাবাদী একটি মতাদর্শ। আবহমান কাল থেকে আমাদের এই বাংলাদেশের উদার মাঠ প্রান্তর, সবুজ বৃক্ষরাজি ও অজস্র নদীর স্বচ্ছ সলিল ধারা আমাদের শিখিয়েছে প্রাণের উদার্য, মমত্ব ও পরস্পরের মধ্যে প্রীতি-ভালােবাসা। কোনাে দেশ ও জাতি একক জাতিসত্তা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ে গঠিত হতে পারে না। বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠী, বর্ণ ও ধর্মের মানুষ মিলিত হয়েই গড়ে তােলে সমাজ ও রাষ্ট্র। সকল ধর্মের সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে ইহজাগতিক কল্যাণ সাধন করাই ধর্মনিরপেক্ষতার মূল বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ শব্দটি ইংরেজি ‘সেকুলার’ শব্দের প্রতিরূপ।
উনবিংশ শতাব্দী থেকে এ উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উন্মেষ ঘটে। রাজা রামমােহন রায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরােজিও, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি এক প্রবল হাতিয়ার। ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণাটি আধুনিক কালের হলেও প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে। যেমন- পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে ‘লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদীন’- অর্থাৎ যার যার ধর্ম তার তার। এই পবিত্র আয়াত মানুষকে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে সচেতন করে তােলে। মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, “আমি আমার নিজের ধর্মকে যতখানি শ্রদ্ধা করি অন্য সব ধর্মকেও ঠিক ততখানি শ্রদ্ধার চোখে দেখি।” ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কোনাে ধর্মকে হেয় করা বা তার বিরােধিতা করা নয় বরং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ধর্মনিরপেক্ষতা অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। আমাদের সকলের উচিত ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটির যথার্থ তাৎপর্য অনুধাবন করে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথকে সুগম করা। তবেই সুখীশান্তি সমাজ ও দেশ গড়ে উঠবে।