করােনাভাইরাস ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
(নোটঃ বিষয়টি সমসাময়িক একটি ঘটনা। তাই সময়ভেদে এর তথ্যের পরিবর্তন হতে পারে।)
ভূমিকা
করােনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ‘কোভিড-১৯’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘােষিত একটি মহামারি রােগ। সারাবিশ্বে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে, করােনাভাইরাস। ইতােমধ্যেই অসংখ্য মানুষ এই ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে। সারাবিশ্বে প্রাণহানি ঘটেছে কয়েক লক্ষ মানুষের। এই মহামারি ঠেকাতে শিল্পোন্নত দেশগুলােসহ বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকার ফলে বিশ্ব অর্থনীতি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পতিত হয়েছে। সামনের দিনগুলােতে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকবে না।
করােনাভাইরাস কী
করােনাভাইরাস বলতে মূলত একটি ভাইরাস পরিবারকে বােঝায় যেখানে অসংখ্য ভাইরাস একসাথে থাকে। এই পরিবারের সর্বশেষ আবিষ্কৃত ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নভেল করােনাভাইরাস’ বা ‘এনসিওভি-১৯’। এই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রােগকে বলা হয় ‘কোভিড-১৯’। ‘করােনা’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Corona’ থেকে যার অর্থ মুকুট। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসের বাইরের অংশ দেখতে মুকুটের মতাে মনে হয়, তাই এই নামকরণ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস ধরা পড়ে। করােনাভাইরাস মারাত্মক ছোঁয়াচে। ধারণা করা হয়, বাদুড় বা সাপজাতীয় প্রাণী থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি।
সংক্রমণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
করােনাভাইরাস মূলত ভাইরাস সংক্রমিত প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। এরপর তা হাঁচি ও সর্দি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাস মূলত মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এর প্রভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। নির্দিষ্ট কোনাে লক্ষণ ছাড়াও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষক দল নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতােমধ্যেই অনেক দেশ এতে সফলতাও পেয়েছে। সেখানে মানবশরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়ােগ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আশা করা যায়, সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হবে এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় ।
করােনার্বিপর্যস্ত বিশ্ব
করােনার প্রভাবে স্তন্ধ পুরাে বিশ্ব। ঘরবন্দি অধিকাংশ মানুষ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে নাম লেখাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আমেরিকা, ব্রাজিল, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেনের মতাে উন্নত দেশগুলােতেই করােনাভাইরাসের কারণে প্রাণহানি বেশি ঘটেছে। বাদ যায়নি ভারত, বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশগুলােও। অনুন্নত দেশগুলাে আরও নাজুক অবস্থায় আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে নিজেদের যােগাযােগব্যবস্থা। বন্ধ করে দিয়েছে আকাশপথ, নৌপথ, সড়কপথসহ অভ্যন্তরীণ যােগাযােগব্যবস্থা। এই ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশই বন্ধ ঘােষণা করেছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, কলকারখানা, পর্যটন কেন্দ্র। বর্তমান করােনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মহামন্দার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। এ ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ফলে বেড়েছে বেকারত্বের হার।
করােনাভাইরাস ও বিশ্ব অর্থনীতি
করােনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। ধেয়ে আসছে মহামন্দা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই মহামন্দা ১৯২০ সালের মহামন্দার চেয়েও ভয়াবহ হবে। করােনার ফলে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে, তেলের দামে হঠাৎ ব্যাপক পতন ঘটেছে, রেমিট্যান্স কমে গেছে। দীর্ঘসময় লকডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়ােগ বাণিজ্যে ধস নেমেছে। পুঁজিবাজারের ক্রমাগত দরপতনের কারণে অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি পােশাক শিল্প, বিমান, হােটেল এ্যান্ড ট্যুরিজম, পর্যটন শিল্প কার্যত স্থবির হয়ে আছে । বিশ্বব্যাপী কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি।
করােনা মােকাবিলায় গৃহীত বৈশ্বিক পদক্ষেপ
করােনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বের দেশগুলাে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট বন্ধ ঘােষণা করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই করােনার সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘােষণা করেছে । সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘােষণা করা হয়েছে। অনেক দেশের সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক প্রণােদনার ব্যবস্থা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করােনাভাইরাসকে মহামারি হিসেবে ঘােষণা করে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। ডাক্তার-পুলিশসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের নিরাপত্তাসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। সারাবিশ্বে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
করােনা পরবর্তী নতুন বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়
করােনা সারাবিশ্বে এমন ভয়াবহ সংকটের সৃষ্টি করেছে যে, তা মােকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। করােনা পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অর্থনৈতিক এই মহামন্দা কাটাতে বহু বছর লেগে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেছে করােনার কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাবে। এতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতাে সমস্যাগুলাে আরও ঘনীভূত হবে। এই বিপর্যয় কাটাতে বিশ্ব ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশ্ব যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে না পড়ে এজন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সঠিক পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে । অনলাইন ব্যবসায় বা ইকমার্সকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রােবােটিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
উপসংহার
করােনাভাইরাস থমকে দিয়েছে পুরাে পৃথিবীকে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতা, অসচেতনতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে গােটা বিশ্বকে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
Many many thanks
আপনাকে ধন্যবাদ