আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা। আমি বাঁধি তার ঘর।
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মােরে করেছে পর।
মূলভাব
ধরণিতে যারা ধৈর্যশীল ও মহৎ তারা শত্রুর অনিষ্ট চিন্তা থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রাখে। নিজের কষ্টকে গুরুত্ব দেয় না। যে কষ্ট দেয় তাকেও আপন করে নেয়।
সম্প্রসারিত ভাব
স্বার্থপর ও শত্রুতাপূর্ণ মনােভাব মানবজীবনের উন্নতির পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক। কারণ পারস্পরিক স্বার্থপরতা ও শত্রুতা পারস্পরিক শান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম-প্রীতি, মৈত্রী প্রভৃতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। এতে করে সমাজে সুখশান্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না । সমাজের সর্বত্র কেবল দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বিরাজ করে। তবে পৃথিবীতে যারা মহৎ ও সহনশীল, তারা নিজেদের দুঃখ-চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। তাই কেউ যদি তাদের ঘর ভেঙে দেয়, সেক্ষেত্রে তারা এর বিপরীতে ঘর ভেঙে না দিয়ে, বরং ঘর বেঁধে দেয়। যে তাদেরকে পর ভেবে দূরে অবস্থান করে তারা তাকে আপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ তাদের মনে ব্যথা দিলে, তারা তাকে ব্যথা না দিয়ে বরং ফুলের মালা উপহার দেন। শত্রুকে শত্রু মনে না করে বন্ধু হিসেবে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কারণ। সেবা, ক্ষমা, দয়া ও সহানুভূতি মানুষের মহৎ গুণ— এ বিশ্বাস তারা অন্তরে যত্নে লালন করেন। আর এ গুণের মাধ্যমে শত্রুকেও বন্ধু করে নেওয়া যায়। সমাজের সবাইকে প্রেম-প্রীতি, ভালােবাসা, সাম্য, মৈত্রী ইত্যাদির বন্ধনে আবদ্ধ করা যায়। আর সমাজে যখন সবাই শত্রুতা ভুলে গিয়ে প্রেম-ভালােবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সমাজে শান্তি নেমে আসে এবং সবার মাঝে সুসম্পর্ক বিরাজ করে। মহামানবদের জীবন-ইতিহাস আলােচনা করলে দেখা যায়, তাদের জীবন দয়া-মায়া, সহনশীলতা ও মহত্ত্বে পরিপূর্ণ । তারা সর্বদা মানুষের মন্দ উপেক্ষা করে চলেন। এর মধ্য দিয়ে যা ভালাে আছে— সাহচর্য, মধুর ব্যবহার ও ভালােবাসা দিয়ে তারা তাকেই উৎসাহিত করার প্রয়াস পান। কারণ মধুর ব্যবহার ও ভালােবাসা মানবজাতির মুক্তির পূর্বশর্ত। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “Courtesy cost nothing but buys everythig.” অর্থাৎ “শিষ্টাচার দ্বারা সবকিছু জয় করা যায়, কিন্তু এজন্য কোনাে খরচ হয় না। তাই আমাদেরও উচিত শিষ্টাচারের মাধ্যমে তথা শত্রুর সাথে শত্রুতা নয় বরং বন্ধুত্বের মাধ্যমে শত্রুক জয় করা। আর এভাবেই আমরা গড়ে তুলতে পারি একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ।
মন্তব্য
শত্রুতা ভুলে গিয়ে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববােধ, মৈত্রী, প্রেম-ভালােবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে।