১. কতোখানি ডাক শুনে ছুটে যায় এই মুগ্ধ মানুষ
অভ্যন্তরে কতোখানি উৎসবে সব পথ ভেঙে একখানা পথ
শুধু একখানা ঘর জেগে ওঠে মর্মের মর্মস্থলে
২. একা থাকার এই ভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি, নিঃসঙ্গতা আমাকে আর পাবে না
৩. ধূর্জটি-জটা পেতে রোধ করি অবক্ষায়ের সংশয়,
আমার এ-হাতে শব্দ-কাস্তে ঝলসায়।
ভাষার কিষান চোখ মেলে চেয়ে দেখি,
চারিপাশে ঘোর অসম জীবন,
সভ্য পোশাকে পাশবিক বন
৪. আমি একা
এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা
৫. সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার কথা বলেছিলো-
বুঝি সে-কারণে
ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার শার্ট।
প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন বিবস্ত্র, বীভৎস।
৬. আয়ু থাক নেশায় বিভোর
থাকুক বাসনা সারা দেহে,
ঝরার আগেই তুমি হাতটি মেল,
পতনের আগে শুধু জানিয়ে দিও
এ তোমার ভুল সাধ,ভুল বাসনা
৭. আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙ পতাকা ওড়ায়।
কথা ছিলো, ‘আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন
৮. কিছু সে চায়নি যেচে, কিছু সে পায়নি, তবু
কিছু কিছু না পাওয়া ব্যথা জমেছে সঞ্চয়ে তার,
যে রকম বীজধান তুলে রাখে অভিজ্ঞ কিষান
সুদিন অঘ্রানে
৯. কাপড়ে যেমন রোদের গন্ধ
তেমনি আমারো শরীরে কিছুটা লেগে আছে প্রিয় আগুনের ঘ্রান
বেদনার সুখে
১০. প্রত্যেকের বুকের নিভৃতে কিছু দগ্ধ ক্ষত থাকে লুকানো,
কিছু অসম্পূর্ণ নির্মাণ, ভাংগাচোরা গেরস্হালি ঘরদোর,
প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু নিদ্রাহীন রাত্রি থাকে
যাকে চিরদিন নষ্ট নোখের মতো রেখে দিতে হয় কোমল অনিচ্ছার বাগানে
যাকে শুধু লুকিয়ে রাখাতেই সুখ, নিজের নিভৃতে রেখে
গোপনে পোড়াতেই একান্ত পাওয়া
১১. তাঁর চোখ বাঁধা হলো।
বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ।
থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো,
জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝরে পড়লো কংক্রিটে।
মা…..মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।
১২. সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
১৩. তোমার দুচোখে এক অস্পষ্ট স্বপ্নের ছায়া,
তুমি ভেসে যাও,
ভেসে ভেসে চিনে নাও
দূরবর্তী কূলের ঠিকানা,
অথবা নিজের মুখ দ্যাখো তুমি নিসর্গে, নির্জন আয়নায়
১৪. মাখে আকাশের গভীর শান্তি,
আমি বসে থাকি প্রিয় আগুনের বেদনার ঘ্রানে
প্রতীক্ষমান মহুয়া-মুগ্ধ মাটি
১৫. যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক,
সেই মাঠে আজ বসে নেশার হাট
১৬। তাকে চিৎ করা হলো।
পেটের ওপর উঠে এলো দু’জোড়া বুট, কালো ও কর্কশ।
কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের কথা বলেছিলো,
বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।
১৭। আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
১৮। উচিত ছিলো তোমার বাড়ি এক্কেবারে
আমার বাড়ির পাশেই হওয়া । জানলা খুলে
চোখ দুটোকে মেলে দিলেই দেখতে পাবো
টুকিটাকি জিনিশপত্র শোবার ঘরে
অলস চুলে বোলাচ্ছ সেই স্নিগ্ধ লাজুক
আঙুলগুলো । উচিত ছিলো জানলা খুললে
তোমার আমার দেখতে পাওয়া সারাটি ক্ষন ।
১৯। তবু তুমিও বলতে পারছো না – না, নেই, কোথাও নেই,
আমার কোথাও আজ তার ছায়া নেই, সে নেই কোথাও-
বৃষ্টির জলের দাগ মুছে গেছে একদিন সকালের রোদে
২০। জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-
জীবন সুন্দর
আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র
সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর
আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা
তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ উক্তি – বাণী
পর্ব ১। পর্ব ২ । পর্ব ৩ | পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬