রচনা সংকেত : সূচনা, মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান, মানবজীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান, যাতায়াত ও যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান, শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান, আবহাওয়ায় বিজ্ঞান, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, উপসংহার।
সূচনা
আজকের একুশ শতকে বিজ্ঞানের জয়জয়কার। এমন কোনাে ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের ছোয়া পড়েনি। অবশ্য মানুষের নিরলস সাধনার ফলই এ বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ আজ ছুটে চলেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় গতি, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দ্রুততর ও বহুমাত্রিক। বিজ্ঞান ঘুচিয়ে দিয়েছে দূরদূরান্তরের ব্যবধান; মানুষকে দিয়েছে অনিঃশেষ সম্ভাবনা।
মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান
আগেকার দিনের মানুষ ছিল প্রকৃতির হাতের অসহায় ক্রীড়নক। আদিম মানুষ যখন প্রথম পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করে, পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালায় তখন থেকেই শুরু হয় মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। তারপর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই মানুষ সমগ্র পৃথিবীর ওপর কর্তৃত বিস্তার করেছে।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান
প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের হাত ধরে আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি পাচ্ছি। সেসব থেকে আমরা নানাবিধ উপকারও পাচ্ছি। মানবজীবনের প্রতিটি শাখা আজ বিজ্ঞানের বহুবিধ অবদানে সমৃদ্ধ। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ মানবজীবনের সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানের রয়েছে অপরিহার্য সূচনা। বিজ্ঞানকে এখন বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা ও প্রয়ােগ করা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান
আমাদের কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে বিজ্ঞানের অবদানে। মানুষ আবিষ্কার করেছে ট্রাক্টরসহ নানারকম কৃষি-সরঞ্জাম। পাম্প ব্যবহার করে ভূ-অভ্যন্তর থেকে পানি উত্তোলন করে সেচ-কাজ সম্পন্ন করছে। কীটনাশকের সাহায্যে পােকামাকড় ও পঙ্গপালের হাত থেকে ফসল রক্ষা করছে। বর্তমানে ক্লোনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল বীজ তৈরি করা হচ্ছে। মরুভূমির মতাে উষর জায়গায়ও কৃষিকাজ সম্ভব হচ্ছে।
যাতায়াত ও যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
বিজ্ঞানের অবদানে মানুষ আবিষ্কার করেছে দ্রুতগামী যানবাহন, বুলেট ট্রেন, শব্দাতিগ উড়ােজাহাজ। আজ মানুষ পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে অপরপ্রান্তের মানুষের সাথে টেলিফোনে কথা বলতে পারে। রেডিও টেলিভিশন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, মুঠোফোন ইত্যাদির মাধ্যমে সারা বিশ্বের খরব যেকোনাে মুহূর্তে পেয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, রকেটে করে মানুষ এখন পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পাড়ি জমাতে প্রস্তুত। যােগাযােগের ক্ষেত্রেও আলােকতন্তু নিয়ে এসেছে নতুন প্রযুক্তি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে কম্পিউটারের তথ্যাবলি। এককথায় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সারা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্যগুলােও কম বিস্ময়কর নয়। জন্মপূর্ব রােগ নির্ণয়ের সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় রকমের উত্তরণ ঘটেছে। জিন-প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রায়ােগিক ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনা হাজির করেছে। চোখের কর্ণিয়া থেকে শুরু করে যকৃতের মতাে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সাফল্য বিস্ময়কর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলােকতন্তু বিদ্যা ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ ফুসফুস, পাকস্থলী, শিরা, ধমনি ইত্যাদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্যে অবলােকন করে নির্ভুলভাবে রােগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। অতিকম্পনশীল শব্দ ও লেজারকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করেছে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অবস্থা দেখা যেমন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর চুর্ণ করার কাজেও এর সফল ব্যবহার হচ্ছে। বহুমূত্র রােগীর অন্ধত্ব প্রতিরােধে ব্যবহৃত হচ্ছে লেজাররশ্মি। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানকে নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক পর্যায়ে। এর মাধ্যমে ছবি তুলে রােগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার প্রয়ােজনীয় উপাদানগুলাের প্রায় সবই বিজ্ঞানের উদ্ভাবন। বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষাব্যবস্থাকে করেছে আরও আধুনিক ও উন্নত। এখন বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে রেডিও -টেলিভিশন শিক্ষার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন শিক্ষাপদ্ধতি।
আবহাওয়ায় বিজ্ঞান
আবহাওয়ার খবরাখবর বের করতে গিয়ে বিজ্ঞান তার অভাবনীয় ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এখন ৭/৮ দিন আগে থেকেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছাসের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে জানাযাচ্ছে, খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের উৎস, মাটির উপাদান ও জলজ সম্পদ পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা সম্পর্কে।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
বিজ্ঞান মানবসভ্যতার উন্নতির সর্ববৃহৎ হাতিয়ার। কিন্তু তাই বলে বিজ্ঞান শুধু মানুষের উপকারই করেনি। স্বয়ংক্রিয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্র মানুষের কাজ সম্পাদন করতে শুরু করার পরপরই অসংখ্য মানুষ বেকারে পরিণত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসংবলিত বড় বড় শিল্পকারখানা মােটরচালিত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ অনেক সময় পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি করছে। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে ও মেরুদ্বয়ের বরফ গলা শুরু করছে। মানুষ বিজ্ঞানের অপব্যবহার দেখে চমকে উঠেছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। তখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে হিরােশিমা-নাগাসাকির মতাে শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রশ্ন ওঠেছে- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?
উপসংহার
বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ হলেও বিজ্ঞানের অবদানকে মানুষ কখনােই অস্বীকার করতে পারবে না। সচেতন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ হলাে বিজ্ঞানের সার্থক ও ইতিবাচক প্রয়ােগ ঘটানাে, বিজ্ঞানের আলােকে মানবজীবনকে আলােকিত করা। বিজ্ঞানের অপব্যবহার রােধে সচেতন হয়ে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারলে তা মানবজীবনে আরও ফলপ্রসূ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
thanks a bunch…helped a lot:)