কোরবানির জন্য কেমন পশু নির্বাচন করবেন? বিস্তারিত জেনে নিন
কোরবানি হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর ইবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তিন দিন পশু কোরবানি করা যায়। কোরবানি ইবাদত হিসাবে পরিচিত, যা কুরআন-সুন্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত।
ইসলামী আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সামর্থ্যবানদের ওপর কোরবানী ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্বেও যদি কেউ কোরবানি না করে, তাহলে তার গুনাহ হবে। কোরবানীর জন্য ইসলামের কিছু বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। কোরবানির জন্য পশু বেছে নেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে।
কোরবানির যোগ্য পশু ছয় প্রকার। যেমন উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া। |
কোরবানির যোগ্য পশু
কোরবানির যোগ্য পশু ছয় প্রকার। যেমন উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া। এসব পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। এগুলো ছাড়া অন্য সব পশু কোরবানি জায়েজ নয়। কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও ভেড়ার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তবে ছয় মাস বয়সী ভেড়া যদি মোটাতাজা হয় এবং দেখতে এক বছরের বাচ্চার মতো হয় তবে তা কুরবানী করা জায়েয। গরু-মহিষের ক্ষেত্রে পূর্ণ দুই বছর এবং উটের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর হতে হবে। (হিদায়া, খণ্ড: ০৪, পৃষ্ঠা: ১০৩)
শরিকে কোরবানি
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একজন মাত্র ব্যক্তি একটি পশু কুরবানী করতে পারবে। অংশীদারদের সাথে এসব পশু কোরবানি করার কোনো বিধান নেই। তাই এসব পশু কোরবানিতে একাধিক ব্যক্তি অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া গরু, মহিষ ও উট সর্বোচ্চ সাতটি নাম দিয়ে কোরবানি করা যাবে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) উট এবং গরু-মহিষ সম্পর্কে একটি হাদিসে বলেছেনঃ
একটি উট এবং গরু-মহিষে সাতজন ব্যক্তি কুরবানীতে অংশ নিতে পারে। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮)
পশুর যে সব সমস্যা থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে না
কোরবানির পশু হতে হবে দোষ-ত্রুটিমুক্ত। পশুতে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি থাকলে কুরবানী করা যাবে না। সেই বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে-
প্রাণীটির দৃষ্টিশক্তি নেই, শ্রবণশক্তি নেই, খুবই দুর্বল ও ক্ষিপ্ত, এতটাই খোঁড়া যে জবাই করার স্থানেও হাঁটতে পারে না, লেজের বেশিরভাগ অংশ কেটে ফেলা, জন্মগতভাবে কান নেই, থাকলেও অধিকাংশই কেটে ফেলা। গোঁড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, বেশিরভাগ দাঁত অনুপস্থিত, রোগের কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ছাগলের দুধের দুটির একটি এবং গরু ও মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা। এগুলো থেকে স্পষ্ট যে, কোরবানির পশুকে সমস্যা বা ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে বলেছেনঃ
চার প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি কখনই জায়েয হবে না। অন্ধ – যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত – যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু – যার পঙ্গু স্পষ্ট এবং আহত – যার অঙ্গ ভেঙে গেছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)
পশুর যেসব সমস্যা থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে
পশুতে কিছু ত্রুটি থাকলেও কোরবানি জায়েজ। প্রাণীটি উন্মাদ, তবে এটি ঠিকমতো ঘাস এবং জল খায়, লেজের অংশ বা কানের কিছু অংশ কাটা (অধিকাংশ অংশ রয়েছে), জন্মগতভাবে শিং নেই, শিং আছে তবে ভেঙে গেছে, ছোট কান, পশুটির একটি পা ভেঙে গেছে কিন্তু অন্য তিনটি পা দিয়ে নড়াচড়া করতে পারে। পশুর গায়ে চর্মরোগ, কিছু দাঁত নেই তবে অধিকাংশ দাঁত রয়েছে, একটি অণ্ডকোষ, বয়সের কারণে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, লিঙ্গ কেটে ফেলার কারণে সঙ্গম করতে অক্ষম।
কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন (পর্ব ১)