ভাষণ

নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায় ভাষণ

4.8/5 - (13 votes)

নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায় শিরোনামে ভাষণ: নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায় শিরোনামে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি করো।

আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানের মাননীয় প্রধান অতিথি, সম্মানিত বিশেষ অতিথি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ ও সুধীমণ্ডলী, আসসালামু আলাইকুম । মানুষের মানবিক গুণগুলোর মধ্যে নৈতিক গুণাবলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । কেননা মানুষের নৈতিকবোধের সাথে মানবিক গুণাবলি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি মানুষই সুনির্দিষ্ট নীতি-আদর্শ মেনে চলে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। যার প্রতিফলন ঘটে সমাজে ও রাষ্ট্রে। কে না জানে গঠনমূলক অর্থাৎ ইতিবাচক নীতিবোধ নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে যেমন সহায়ক, তেমনি কল্যাণকর সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনেও সহায়ক।

একটা সময় আমাদের দেশে নীতি ও নৈতিকতাবোধ ছিল প্রবল। যে কারণে সমাজে কোথাও কোনো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বা অন্যায় কোনো আবদারের চর্চা ছিল না। মানুষ তার শুভবোধ থেকে অন্যায়কে এড়িয়ে চলত। কিন্তু ইদানীং নীতি-নৈতিকতার অবস্থান এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের ভিত্তিটি একেবারে নড়ে গেছে। বিষয়টির নেতিবাচক বিষয়গুলোর চর্চা এখন এমনভাবে গেড়ে গেছে যে, মানবিক গুণাবলি যেন জিম্মি হয়ে গেছে।

সরকারি তো বটেই, বেসরকারি পর্যায়েও এগুলো মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ফলে সৎ মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে আর ভালো মানুষ শুধু বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। মেধাবীরা হচ্ছে অবহেলিত আর মেধাহীনরা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত। তাদের প্রতিবাদ, তাদের লেখালেখি কোনো কাজে লাগছে না। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যকার সহযোগিতা, সহানুভূতিবোধ ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। সেখানে বেড়ে উঠছে লোভ, লালসা, স্বার্থপরতা এবং সর্বস্ব গ্রাস করার এক জঘন্য প্রতিযোগিতা। ফলে পরিবার ও সমাজের সর্বস্তরে উগ্র-উদ্ধত মনোভাব বেড়ে সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড । কেননা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জোর করে কেড়ে নিচ্ছে তথাকথিত নেতাদের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বাহিনী। অসহায় ঠিকাদাররা বাধ্য হচ্ছে সেইসব সন্ত্রাসীর কথামতো চাঁদা বা ভাগ দিয়ে কাজ করতে।

এতে করে কাজের গতি মন্থর হচ্ছে, খারাপ হচ্ছে কাজের মান। অর্ধসমাপ্ত অবস্থায়ই কোনো কোনো কাজ পড়ে থাকছে দীর্ঘদিন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে এর কালো থাবা প্রভাব বিস্তার করেনি। আমরা আমাদের নৈতিকতা ধরে রাখতে পারলে কোনো অনিয়ম হতো না। সঠিক ব্যক্তিরা সঠিক কাজ পেত এবং উন্নয়নকর্মের মান ভালো হতো। ফল ভোগ করত জনগণ, দেশ ক্রমশ উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। শিক্ষাঙ্গনে দলবাজি, রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য ও শিক্ষাদানে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে, তাদের ক্ষতি করছে।

শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে শ্রমিকরা নানা শোষণ ও বঞ্ছনার শিকার হচ্ছে । স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব ভুলে অনৈতিকভাবে হাসপাতালের বাইরে নিজস্ব চেম্বারে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকছে। এতে করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে । জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।

অভ্যাগত সুধীমণ্ডলী, আমার আলোচনা শুনে এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আমরা কোন সময়ে বাস করছি। কী ধরনের সমস্যা আমাদের অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরছে। তাই এখনই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নিতে হবে নানা পদক্ষেপ। সর্বাগ্রে নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে শিক্ষক-অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে নৈতিকতা তথা নীতি-আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে প্রতিটি কথায় ও কাজে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে নৈতিকতার চর্চা করে চরিত্রে, সংশোধন আনতে হবে। তাহলেই নৈতিক অবক্ষয় কমে আসবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আসুন আমরা সবাই নৈতিক চরিত্রে সৎ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button