ভাব-সম্প্রসারণঃ মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের প্রতিটি জীব জন্ম থেকেই স্বাধীন। আর এ কারণে স্বাধীনতা সবার প্রিয়। অন্যান্য জীবের ওপর সে বিভিন্ন কারণে নির্ভরশীল থাকতে পারে, তবে তা পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, একচ্ছত্র আধিপত্য বা পরাধীনতা নয়। পরাধীন জীবনে কোনাে বিকাশ নেই, আছে কেবল স্থবিরতা, যা মৃত্যুর মতাে স্তব্ধ।
পাখির জীবন থেকে এ বৈশিষ্ট্য সহজেই অনুধাবন করা চলে। মুক্ত আকাশে পাখি উড়ে বেড়ায়। সেখানে তার ধরাবাধা কোনাে নিয়মনীতি নেই। পাখির বাসস্থান সম্পর্কেও অনিশ্চয়তা বিরাজমান। তাই উন্মুক্ত স্বাধীন আকাশে নিরুদ্বেগে বিচরণ করে বেড়ায় যে পাখি তার কাছে দুধকলা-সমৃদ্ধ সােনার খাচা তুচ্ছ। কেননা মুক্তিতেই আনন্দ, বন্দিত্বে নয়। পাখি মুক্তজীবনের স্বাদ পেয়ে সােনার খাঁচায় আবদ্ধ থাকতে চায় না। মানবজীবনেও ওই একই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মানুষের রয়েছে মুক্তির কামনা, ইচ্ছা, বিবেক, স্বপ্ন। তার কাছে পরাধীনতা তার হৃদয়বৃত্তি এবং ইচ্ছার মৃত্যুরই নামান্তর। পরাধীনতা মানুষের জীবনের জন্যে অভিশাপ। স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাখি যেমন বন্দি খাচা ছেড়ে মুক্ত আকাশের দিকে ডানা মেলে উড়তে চায় তেমনি স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মানুষের কাছে দীর্ঘ পরাধীন জীবনের চেয়ে ক্ষণিক স্বাধীন জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যুগে যুগে তাই মানুষ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত হবার জন্যে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কখনও-বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তবু মানুষ পরাধীন থেকে ঐশ্বর্যবান হওয়ার চেয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন এমনকি মৃত্যুবরণ করাকেও সমীচীন মনে করেছে। কারণ স্বাধীনতাই জীবন।
সবাই চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা। বন্দি জীবন কেউ চায় না বলেই পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে তারা ব্যাকুল হয়ে ।