ভাবসম্প্রসারণ
চন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে, কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়েঃ ভাবসম্প্রসারণ
চন্দ্র কহে, “বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে। কলঙ্ক যা আছে তা আছে মাের গায়ে।”
মূলভাব
চাঁদ যেমন তার আলাে দিয়ে পৃথিবীকে আলােকিত করে, তেমনই মহৎ ব্যক্তিগণ আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেন।
সম্প্রসারিত ভাব
চাঁদ তার স্নিগ্ধ আলাের সাহায্যে পৃথিবীকে আলােকোজ্জ্বল করে। চন্দ্রের স্নিগ্ধ আলাে মানুষের হৃদয়ালােকে আনন্দের শিহরন জাগায়। চাঁদের অনুপস্থিতিতে জমাটবাধা অন্ধকার গােটা বিশ্বকে গ্রাস করে। সুচিভেদ্য অন্ধকার রাতে ঘর থেকে বাইরে পা বাড়ানাের আবশ্যকতা দেখা দিলে এক অজানা আশঙ্কায় আমাদের দেহ-মনে আড়ষ্টতা দেখা দেয়। এই অন্ধকার জগৎকে আলােকোজ্জ্বল করে তােলার ক্ষেত্রে চাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ যে চাঁদের কিরণে জগতে আলাের বন্যা বইয়ে দেয়, প্রাণ-প্রাচুর্যে বিকাশত হয় ফুলের কলি , প্রস্ফুটিত ফুলরাজি মানুষের মনােযােগ আকর্ষণ করে সেই চাদের গায়ে রয়েছে কলঙ্কের ছাপ । চাঁদ সেই কলঙ্কের ছাপ বক্ষে ধারণ করেই জগৎকে আলাের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়। চাঁদ কখনাে নিজের কলঙ্ক নিয়ে ভাবে না। চাঁদ যদি সর্বদা স্বীয় কলঙ্ক নিয়ে ভাবতাে তাহলে তার পক্ষে বিশ্বে আলাের বন্যা বইয়ে দেওয়া সম্ভব হতাে না । বরং নিজেকে নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হতাে।
বরেণ্য মনীষীরাও তদ্রুপ নিজেরে সমস্যা বক্ষে ধারণপূর্বক বিশ্বময় ছড়িয়ে দেন শান্তির সুবাতাস— জ্ঞান ও আলােকের প্রদীপ্ত শিখায় উদ্ভাসিত করে তােলেন গােটা বিশ্বকে। তারা কখনো নিজিদের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যস্ত থাকেন না, বরং নিজেদের কথা ভুলে গিয়ে বিশ্বমানবতার সমস্যা নিয়ে ভাবেন এবং তা সমাধানের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। দারিদ্রে জর্জরিত হযরত মুহাম্মদ (স) সমগ্র মানবজাতিকেই দিয়েছিলেন মুক্তির দিশা। প্রাচীন গ্রিসের কুৎসিত, কদাকার এবং চ্যাপটা নাকবিশিষ্ট সক্রেটিস তার জ্ঞান ও দর্শন দ্বারা উদ্ভাসিত করে গেছেন প্রাচীন গ্রিস তথা গােটা বিশ্বকে। আসলে জগতের অনেকেই স্বীয় স্বার্থের কথা চিন্তা না করে আমৃত্যুকাল মানবজাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাদের ন্যায় আমাদেরও উচিত মানুষের মঙ্গলের লক্ষ্যে কাজ করা।
মন্তব্য
উৎসের কৃচ্ছতা বা আকর্ষণীয়তা বিচার করা উচিত নয়, উৎস থেকে উৎসারিত গুণ এবং কল্যাণই যথার্থ বিবেচনার দাবি রাখে।