পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরােপণ এই শিরনামে একটি প্রতিবেদন |
“পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরােপণ” এই শিরনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরােপণ
আবহমানকাল ধরে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ নামে পরিচিত এই দেশ। অসংখ্য ছােট বড় নদী বিধৌত পলিমাটির স্তরে স্তরে গঠিত এর স্থলভাগ। সবুজ ফসলের শােভা শ্যামল বনানীর পেলবতা নয়ন-মনকে করে উদাস বাউল। যে দেশে গােলাভরা ধান ছিল, পুকুর ভরা মাছ ছিল, গােয়াল ভরা গরু ছিল, আঙিনা ভরা মােরগ-মুরগি ছিল, জনসংখ্যাবৃদ্ধির ফলে সােনার সে বাংলা এখন হত দরিদ্র শ্রীহীন।
এই একটি সমস্যা নানান সমস্যার সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যাবৃদ্ধির চাপে আবাসন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বন-জঙ্গল-পতিত জমির বৃক্ষ, লতা কেটে সাফ করে বাসস্থান তৈরি হচ্ছে, বাসগৃহ নির্মাণের উপকরণও হচ্ছে গাছপালা। যান্ত্রিক সভ্যতার চাকচিক্য বাড়াতে নিধন হচ্ছে বৃক্ষ। কাগজ তৈরির প্রধান কাঁচামালই হচ্ছে বনজ গাছপালা। আসবাবপত্র তৈরিতে কাটা হচ্ছে গাছ। চারিদিকের এতাে সব চাহিদা মিটাতে ঘন বনজঙ্গল আজ প্রায় শেষ হবার পথে। একটি দেশের শতকরা বিশ থেকে পঁচিশ শতাংশ জমিতে বনভূমি প্রয়ােজন। বাংলাদেশ এক সময়ে কাক্ষিত বনভূমির আওতাভুক্তই ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই পরিমাণ পাঁচ থেকে সাত শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিণামে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
ষড়ঋতুর দেশ ছিল বাংলাদেশ। ঋতু বৈচিত্র্য দেখা যেত পর্যায়ক্রমে যার যার বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে। বৃক্ষনিধনের ফলে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যও বিঘ্ন হয়েছে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলের এ দেশ ছিল নাতিশীতােষ্ণ। কিন্তু এখন চরম ভাবাপন্ন এক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে এ দেশে। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে এ কারণে। উত্তরাঞ্চলে এর ফলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বায়ুমণ্ডল চরম উষ্ণ হয়ে পড়ার কারণে প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছ্বাস, বন্যার উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। কেনা জানে পাহাড় পর্বত, বৃক্ষলতা পাতা দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। এরা প্রকৃতিকে রাখে আর্দ্র, ফলে সহজে বৃষ্টি বাদলা ঘটতে পারে। সিক্ততায় ফসলে ভরে ওঠে মাঠ। কিন্তু অজ্ঞ স্বার্থান্বেষী মানুষ অবাধেই কেটে পরিষ্কার করে ফেলছে সবুজ প্রকৃতিকে।
আজ আমাদের সত্যি সত্যি ভাবতে হবে, যদি আমরা দেশকে বাঁচাতে চাই, তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তা সম্ভব কেবল অধিক মাত্রায় বৃক্ষরােপণ করে। কেউ যদি একটা গাছ কাটে বিনিময়ে পাঁচ থেকে দশটি গাছ লাগাতে হবে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরােপণ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কেননা এসময় বৃক্ষরােপণ করলে তা সহজে মারা যায় না। বরং তরতাজা হয়ে বাড়তে পারে। সরকারি বেসরকারি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একাজ আমরা চালাতে পারি। লক্ষ রাখতে হবে অকারণে যেন গাছ কাটা না হয়। একটি বৃক্ষ পরিপূর্ণ হলে তবেই তা কাটা উচিত। চারা গাছকে রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। ফলবান বৃক্ষ যাতে কাটা না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এরা পরিবেশকে যেমন রক্ষা করে তেমনি ফল, কাঠ দিয়েও আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ বনজ উদ্ভিদ। এ সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব যেমন সরকারের তেমনি দেশের প্রতিটি নাগরিকের। বন সংকোচন নয়, বন সম্প্রসারণই আমাদের এখন বড় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণের সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জঙ্গল, উত্তরাঞ্চলের শালবন সবইতাে এখন বিপন্নতার মুখে। সুন্দরবন সংকুচিত ও হালকা হয়ে যাবার ফলে সমুদ্রের জলােচ্ছ্বাস আর ঠেকাতে পারছে না। অভয়ারণ্য হিসেবে পশু সম্পদও রক্ষা করতে পারছে না। পাহাড় কেটে সমতল করার ফলে সেখানে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। এসব আমরা অবশ্যই প্রতিরােধ করতে পারি। আর বন কর্তন নয় এখন কেবল বনায়ন এ স্লোগানে সাড়া দিয়ে সারা বছর ধরে বৃক্ষরােপণ করতে পারি। বিশেষ মৌসুমে এটা অভিযান হিসেবেও পরিচালনা করতে পারি। এমনটি হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য আবার ফিরে আসবে। সবুজের প্লাবনে হাসবে দেশ-অসুখ বিসুখ থেকে মুক্ত থাকবে দেশের মানুষ। অর্থনৈতিক সংকট থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবাে আমরা।
অবশ্যই প্রতিবেদনটি আপনারা খুব সুন্দর ভাবে লিখেছেন। সে ব্যপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতিবেদন টি একটু বেশি বড় হেয়ে গেছে। Otherwise সব ঠিক আছে। ধন্যবাদ
কমেন্ট এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ