HSC (এইচএসসি) 2022 Bangla 1st Week Assignment 2021 Solution, ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ প্রথম সপ্তাহ বাংলা এর নির্ধারিত কাজ ও নমুনা উত্তর।
নির্ধারিত কাজ
অপরিচিতা গল্প এবং বাস্তব দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে নারীর এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকা চিহ্নিতকরণ।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বাংলা প্রথম পত্রের “অপরিচিতা” গল্প থেকে একটি নির্ধারিত কাজ দেওয়া হয়েছে। নিচে তোমাদের নির্ধারিত কাজের ছবি দেওয়া হলঃ
অপরিচিতা গল্প এবং বাস্তব দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে নারীর এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকা চিহ্নিতকরণ।
নমুনা উত্তর
১) অপরিচিতা গল্পে কল্যাণীর সংকট হলো সঠিক সময়ে বিবাহ না হওয়া। মেয়ের বয়স ১৫ বছর শুনে অনুপমের মামার মন ভার হলো। কারণ তিনি মনে করলেন যে, এই মেয়ের বংশে কোন দোষ আছে।তখন আট থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। এ সময়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে মনে করা হতো মেয়ের বংশে কোন দোষ আছে। যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যে মেয়ের সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স ১৫ বছর। ১৫ বছর বয়সেও মেয়ের বিয়ে হয়নি, এমনটি ভেবে অনুপমের মামার মন ভার হলো। কল্যাণী উচ্চশিক্ষিত, রুচিশীল মেয়ে। শিক্ষকতাকে সে জীবনের ব্রত হিসাবে নিয়েছে। তার শিক্ষাদীক্ষার কারণে বিবাহের সংকট দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছে।
২) অপরিচিতা গল্পে কল্যাণী ছিল বেশ সুন্দরী ও প্রাণচঞ্জল। আর পিতা শস্তুনাথ বাবু ছিলেন স্পষ্টভাষী ও একজন সুপুরুষ ব্যাক্তি। অন্যদিকে কিন্তু অনুপমের মামা বিয়ের পণ, যৌতুক সম্পর্কে কোন প্রকার ছাড় বা আপস করতে রাজি নন। এখানেই গল্পের কাহিনী জটিলতায় রূপ নেয়। রীতিমতো বেশ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে যদিও বিয়ের কাজ শুরু হয়েছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে দেনা পাওনা কারণে সব আনন্দ আয়োজন এক মুহুর্তেই ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় অথ্যাৎ যৌতুকের জন্য বিয়ে ভেঙ্গে যায়। এই গল্পে অনুপমের চরিত্রের সীমাহীন দুর্বলতা ও নিবুদ্ধিতার পরিচয় পাওয়া যায়। অনুপম ও তার মামা ভূমিকা যদি ইতিবাচক হতো তাহলে কল্যাণীর সংসার সুখময় হতো বলে আমি মনে করি। কারণ বিবাহ ভেঙে যাওয়ায় প্রধান কারণ হলো অনুপমের দুর্বলতা ও তার মামা যৌতুক প্রবনতা।
৩) পঠিত গল্প অনুসারে নারীকে এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো হলোঃ
ক) অশিক্ষা
খ) কুসংস্কার
গ) ধর্মীয় গৌঁড়ামি
ঘ) পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়
নিন্মে প্রতিবন্ধকতাগুলো ব্যাখা করা হলোঃ
কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় – “বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। সাম্যবাদী এত কবি সত্য উচ্চারণ করলেও আজও আমাদের সমাজে তার যথাযথ স্বীকারোক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও আজও মানুষের ধ্যান-ধারণার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনও সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে নারীদের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর কুসংস্কারে ডুবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকে। অভিধানে উন্নয়নে নারী বা নারী উন্নয়ন একটি অতি আধুনিক সংযোজন। এই ধারণা বৈশ্থিক ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের গুরত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকার করে। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দুটি বিষয়ই একটি অন্যটির পরিপূরক। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারী উন্নয়ন বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে নারীদের পদযাত্রায় বারবার হোচট খেতে হয়, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গৌঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। অথচ সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই, নারীরা পৌঁছে গেছে বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। বর্তমানে এমন কোনো পেশা নেই যেখানে নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি নেই। বর্তমানে সবক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর পদচারণা।
নারীর সমাধিকার ও নারীমুক্তির কথা যতই বলা হোক না কেন উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই নারীরা কম-বেশি সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার। সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র সবক্ষেত্রে প্রায় একই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই নারী, কিন্তু নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে খুব অল্প সংখ্যক নারীর মধ্যেই। তাদের অনেকেই নিজের সিদ্ধান্তে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন না এবং নিজের বস্তুগত ক্ষমতার পরিসরও স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে বাধাগ্রস্ত হন।
নারীশিক্ষার বিষয়টি আমাদের আর্থ সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে অপরিহার্যভাবে জড়িত। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেব।’ এ বিষয়ে আরবিতেও একটি প্রবাদ আছে, ‘একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষা দেওয়া। আর একজন নারীকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা।’ তাই নারীশিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। তথাপি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এ বৈষম্যের কোনো শেষ নেই। যদিও শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে এখন নারীদের অংশগ্রহণ শতভাগ।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারাও তা স্বীকৃত। কিন্তু প্রায় ৫০ বছরেও তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্রের অভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পিছিয়ে দিচ্ছে নারীর উন্নয়ন যাত্রাকে। প্রচার মাধ্যমগুলোতে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ হতে হবে। নারী কোনো পণ্য নয়। নারীদের নিজেদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নারী-পুরুষের সমান স্বার্থ রক্ষাকারী আইন প্রবর্তন ও আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারীশিক্ষা ও নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। নারীকে তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীর কাজকে ছোট করে দেখা চলবে না। নারীর কাজের মূল্যায়ন হতে হবে। সর্বোপরি, নারীর প্রতি ইতিবাচক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
৪) পঠিত গল্প অনুসারে নারীকে এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভুমিকা হলোঃ
১) সর্বত্র নারীর শুধু অংশগ্রহণ বাড়ালে চলবে না, তার গুণগত উন্নয়ন জরুরি কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
২) নারীর অনানুষ্ঠানিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা দরকার।
৩) কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
৪) মেয়ে ও ছেলেশিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) নারীবান্ধব আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
৬) কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।
৭) নারীর উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বে আরও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন আলোচনা।