অর্থনীতি (Economics) এসএসসি ২০২১ সপ্তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরঃ ৫
অধ্যায়ঃ ষষ্ঠ
অধ্যায়ের শিরোনামঃ জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ
অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনামঃ “একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি,প্রাকৃতিক সম্পদ,শ্রম,মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ উৎপাদনশীলতার উপর”। উক্ত তথ্যের আলােকে বাংলাদেশের মােট জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতিগুলাের ব্যাখ্যাসহ মাথাপিছু জিডিপি পরিমাপের সূত্রটি উদাহরণসহ উপস্থাপন
নিধারিত কাজঃ
জিডিপির সংজ্ঞাঃ
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত মােট দ্রব্য ও সেবাসমূহের সমষ্টিকে জিডিপি (Gross Domestic Product) বা মােট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা মােট দেশজ উৎপাদন বলে। মােট দেশজ উৎপাদনকে সংক্ষেপে জিডিপি (GDP) বলা হয়। জিডিপি হিসাব করার সময় দেশের মধ্যে অবস্থানরত বিদেশীদের দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাসহ দেশের ভৌগােলিক সীমানার মধ্যে উৎপাদিত মােট দ্রব্য ও সেবা সমূহের সমষ্ঠিকে বুঝায়। কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত দেশের জনগণ কর্তৃক উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবা জিডিপি’র মধ্যে বিবেচনা করা হয় না। অর্থাৎ জিডিপি’র ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার সমষ্টিকেই বুঝায়। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক অর্থবছরে একটি দেশের অভ্যন্তরে তথা ভৌগােলিক সীমারেখার মধ্যে সে সব দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তাঁর সমষ্টিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা মোট দেশজ উৎপাদন বলা হয়।
(১) উৎপাদন পদ্ধতি
(১) উৎপাদন পদ্ধতিঃ উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত এক বছর একটি দেশের সকল জনগণ দ্বারা যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার আর্থিক মূল্য হিসাব করে মোট দেশজ উৎপাদন নির্ণয় করা হয়। আমাদের দেশে অর্থনীতিকে ১৫ টি খাতে ভাগ করা হয়েছে এবং ১ ৫ টি খাতের উতপাদনের মূল্যকে যোগ করে মোট দেশজ উৎপাদন নির্ণয় করা হয়।
(২) আয় পদ্ধতিঃ আয় পদ্ধতিঃ আয় পদ্ধতি অনুসারে উৎপাদনের সকল উপকরণের আয় যােগ করলে জাতীয় আয় পাওয়া যায়। উৎপাদনের চারটি উপকরণ- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের নিজ নিজ আয় সমূহ হচ্ছে যথাক্রমে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা। জাতীয় আয় হচ্ছে এ চার ধরণের আয়ের যােগফল। মোট দেশজ উৎপাদন = খাজনা+ মজুরি+সুদ+ মুনাফা এর সমষ্টি।
(৩) ব্যয় পদ্ধতিঃ ব্যয় পদ্ধতিতে একটি দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক অর্থবছরে) মােট ভােগ ব্যয় ও বিনিয়ােগ ব্যয় যােগ করলে মোট দেশজ উৎপাদন পরিমাপ করা যায়। এক বছরে উৎপাদন কার্যের ফলে যে মােট আয় হয় তার একটি অংশ ভােগের জন্য ব্যয় হয় এবং বাকি অংশ সঞ্চয় হয়। আর এ সঞ্চয় পূণরায় উৎপাদন কাজে ব্যয় হয় যেটাকে আমরা বিনিয়ােগ বলে থাকি। আর এ বিনিয়ােগকে বিনিয়ােগ ব্যয় বলা হয়। অতএব বলা যায় যে, একটি অর্থবছরে দেশে যে ভােগ ব্যয় হয় এবং মূলধন সম্পদ বৃদ্ধির জন্য যে বিনিয়ােগ হয় তাদের সমষ্টিই হল মোট দেশজ উৎপাদন।
অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদন = মােট ভােগ ব্যয় + মােট বিনিয়োেগ ব্যয় বা, Y= C+I
অন্যদিকে মুক্ত অর্থনীতিতে সরকারি খাত এবং আমদানি-রপ্তানি বিবেচনা করতে হয়। তাই এ খাতগুলাে বিবেচনা করলে ব্যয় পদ্ধতিতে মোট দেশজ উৎপাদন হবে, মােট ভােগ ব্যয় (C), মােট বিনিয়ােগ ব্যয় (I), মােট সরকারি ব্যয় (G) এবং নীট রপ্তানি আয় (X-M) এর যােগফল। অর্থাৎ Y= C+I+G+(X-M)
গ. বনজ সম্পদ: এ খাতের উপকরণের তথ্যের অভাবে মােট উৎপাদন হতে ৩% মূল্য বাদ দিয়ে যা থাকে তাকে মূল্য সংযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করে GDP হিসাব করা হয়।
২. মৎস্য সম্পদঃ অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক উৎস থেকে মােট মৎস্য আহরণের পরিমাণ থেকে GDP অংশ হিসাব হয়।
৩. খনিজ ও খনন: এই খাত দুটি উপখাতে বিভক্ত –
(ক) প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশােধিত তেল
(খ) অন্যান্য খনিজ সম্পদ।
এ খাতে চলতি বাজার মূল্যে হিসাব করে আয় পরিমাপ করা হয়।
৪. শিল্প: শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের চলতি বাজার মূল্যে হিসাব করে জিডিপি গণনা করা হয়। এই খাত দুই ভাগে বিভক্ত
(ক) বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প
(খ) ক্ষুদ্রায়তন শিল্প।
৫. বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানি: এ খাত একটি সেবা খাত। এ সেবা খাতের সেবা সরবরাহ মূল্যের প্রেক্ষিতে জিডিপি’র অংশ হিসাব করা হয়।
৬. নির্মাণ: নির্মাণ খাতের হিসাব করা হয় সরকারি বেঁধে দেওয়া মূল্যের প্রেক্ষিতে।
৭. পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য: এ খাতে পণ্যের পাইকারি মূল্যের হিসাবে জিডিপি গণনা করা হয়। ৮. হােটেল ও রেস্তোরা: এ খাতে দ্রব্য উৎপাদন ও সেবার হিসাব বিক্রয়মূল্যের দ্বারা করা হয়।
৯. পরিবহণ, সংরক্ষণ ও যােগাযােগ: এ খাতটি ৫টি উপখাতে বিভক্ত।
(ক) স্থল পথ পরিবহণ
(খ) পানি পথ পরিবহণ
(গ) আকাশ পথ পরিবহণ
(ঘ) সহযােগী পরিবহণ সেবা
(ঙ) ডাক ও তার যােগাযােগ।
১০. আর্থিক প্রতিষ্ঠানিক সেবাঃ এ খাতের হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত মূল্যেও ভিত্তিতে। এ খাত তিনটি উপখাতে বিভক্ত
(ক) ব্যাংক,
(খ) বীমা ও
(গ) অন্যান্য।
১১. রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য: এ খাত থেকে জিডিপি পরিমাণ হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাপের উপর।
১২. লােক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা: এ খাতের হিসাব করা হয় ব্যয়ের দিক দিয়ে।
১৩. শিক্ষা: এ খাতটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের হিসাব হয় ব্যয় এর দিক থেকে।
১৪. স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা: এ খাতের জিডিপি হিসাব হয় ব্যয় হিসাব দ্বারা।
১৫. কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যাক্তিগত সেবা: এ খাতটি হিসাব হয় ব্যয়ের হিসাবের মাধ্যমে।
জনপ্রতি বার্ষিক জিডিপিকে মাথাপিছু জিডিপি বলে। কোনাে নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মােট দেশজ উৎপাদনকে উক্ত বছরের মধ্য সময়ের মােট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই মাথাপিছু জিডিপি পাওয়া যায়।