ইসলাম ও জীবন

প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা কেমন ছিলো?

3.5/5 - (4 votes)
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা কেমন ছিলো?

ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে আরবে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাপদ্ধতি বা রুচিপূর্ণ ও মার্জিত জীবনধারা তথা উন্নত সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। মক্কা-মদীনা ও অপরাপর কয়েকটি শহর ছাড়া আরবরা প্রায়ই ছিল মূর্খ ও নিরক্ষর। তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কিছু সাংস্কৃতিক তৎপরতা লক্ষ করা যায়। যেমনঃ 

প্রাক-ইসলামী যুগেও আরব সাহিত্য চর্চায় ছিল খুবই উন্নত। হিট্টি বলেন, 

পৃথিবীতে সম্ভবত অন্য কোন জাতি আরবদের ন্যায় সাহিত্য চর্চায় এত বেশি স্বতঃস্ফূর্ত একাগ্রতা প্রকাশ করেনি। 

প্রাচীন আরবি সাহিত্য তারই প্রমাণ বহন করে। তখন আরবে লিখন পদ্ধতি বিকাশের অভাবে গদ্য-সাহিত্য রচনা সমৃদ্ধি লাভ করেনি। তবে বংশবৃত্তান্ত, গোত্র-কলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস গদ্যে রচিত হয়েছিল।

আরব সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন আরবি গীতিকবিতা বা কাসীদা ইতিহাসে অতুলনীয়। তাদের কবিতার সাবলীলতা ও স্বচ্ছ কাব্যবিন্যাস ছিল বৈশিষ্ট্যময়। হিট্টি বলেন : 

মধ্যযুগে বহু শতাব্দীকাল পর্যন্ত আরবী ভাষা সভ্যজগতের শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং উন্নতির একমাত্র মাধ্যম ছিল। কাব্যপ্রীতিই ছিল বেদুঈনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ। 

প্রাক-ইসলামী যুগের কবি ও পণ্ডিতদের মধ্যে ইমরুল কায়স, উম্মে কুলসুম, লাবিদ, তারফা, যুহাইর, আতারা, হারিস-প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাবা মুয়াল্লাকাত, দিওয়ানে হামাসা প্রভৃতি গ্রন্থের মাধ্যমে প্রাক- ইসলামী যুগের গীতিকাব্যসমূহ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ।

প্রাক-ইসলামী যুগের কবিদের মধ্যে যশস্বী ছিলেন সাতটি ঝুলন্ত গীতিকাব্যের রচয়িতাগণ। সোনালী হরফে লিপিবদ্ধ এ-‘সাবা মুয়াল্লাকাত’ ছিল প্রাচীন আরব কবিদের অমর কীর্তি। জাহিলিয়া যুগে অসংখ্য গাঁথা ও কাব্য সাহিত্য প্রণীত হয়। এগুলো আরব্য সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ ।

ইসলামের অভ্যুত্থানের পূর্বে আরব্য সাংস্কৃতিক জীবনে ‘উকায মেলা’ ছিল বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। প্রতি বছর এ মেলা বসত। আর এখানে বিভিন্ন বিষয়ের যেমন, কাব্য, গাঁথা, প্রবাদ, বীরত্ব, বাগ্মিতার প্রতিযোগিতা হত এবং পুরস্কৃত করা হত শ্রেষ্ঠদের। এখানে গান-বাজনা, নৃত্য, জুয়া-লটারী প্রভৃতির আসর বসত ।

আরব যাযাবরেরা মরুভূমিতে নিজেদের জীবন কাটাত। এজন্য তাঁরা তারকাসমূহের নাম গতি ও স্থানসমূহ জানত। আবার মৌসুমী আবহাওয়া কখন ঝড় বৃষ্টি ইত্যাদি বয়ে আনত তাও বলতে পারত। শহরের অনেকে তাদের কাছ থেকে সাধারণভাবে রোগের চিকিৎসা করে নিত। যাযাবরেরাও ঔষধ সম্পর্কে জ্ঞান রাখত, তারা বিশেষভাবে উটের চিকিৎসা জানত ।

তারা ভবিষ্যদ্বানী বিদ্যা জানত। ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যা দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথমত পায়ের চিহ্ন দেখে পথচারীর সন্ধান দেওয়া। দ্বিতীয়ত শরীরের অঙ্গ ও গঠন দেখে বলা সে অমুক বংশের লোক। এ দু’ধরনের বিদ্যায় আরবদের গভীর জ্ঞান ছিল। তাদের স্মরণ শক্তি প্রখর ছিল।

বর্তমান যুগের ন্যায় প্রাক-ইসলামী যুগের শিক্ষা ও সংস্কৃতি না থাকলেও আরবরা সাংস্কৃতিক জীবন থেকে একে বারে বিচ্ছিন্ন ছিল না। গীতিকাব্য রচনা, ভাস্কর্য নির্মাণে তারা দক্ষ ছিল। বার্ষিক উকাযের মেলায় তাদের সাংস্কৃতিক চর্চার অসর বসত। যৌনতা, নারী, যুদ্ধ, বীরত্ব ও গৌরব গাথাঁ ছিল তাদের সাহিত্যের বিষয়। সোনালী হরফে লেখা ‘সাবামুয়াল্লাকাত’ বা ঝুলন্ত কাব্য মালা প্রাক-ইসলামী যুগের আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তারা প্রবাদ-প্রবচন ও রচনা করত। বাগ্মিতায় পারদর্শী ছিল । তারা বংশ তালিকা কন্ঠস্থ করত । আবহাওয়া বিদ্যা ও ভবিষ্যদ্বানী বিদ্যায় দক্ষ ছিল।

আরও পড়ুনঃ

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button