সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীতে জলবায়ুগত তারতম্য পরিলক্ষিত হয়
|
ছবি: সূর্য (সূত্র : ইন্টারনেট) |
ভূমিকাঃ সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্র। সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার থাকত এবং জীব ও উদ্ভিদজগতের কিছুই বাঁচত না। সূর্যকে কেন্দ্র করেই বাকি আটটি গ্রহ ঘুরছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের ঋতু ও জলবায়ু যে তারতম্য হয় তার প্রধান কারণ হল সূর্য।
পৃথিবীর বার্ষিক গতি ও ঋতু পরিবর্তন প্রক্রিয়াঃ পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে হতে সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে (সূর্যকে পরিক্রমনের পথ) নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর এইরূপ গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়। সূর্যের চারিদিকে একবার পূর্ণ আবর্তনের জন্যে পৃথিবীর মােট লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড । একে সৌরবছর (Solar Year) বলে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক সৌর বছর গণনা করা হয়। প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় কালকে প্রতি চার বছর অন্তর ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা হিসেবে ঐ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিন হিসেবে গণনা করা হয়। এই বছরটি অধিবর্ষ (Leap Year) নামে অভিহিত। পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে এবং ঋতুর পরিবর্তন ঘটে।
ভূ-পৃষ্ঠে কোনাে একটি অঞ্চলে দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ও ঐ স্থানে সূর্য রশির পতন কোণের পার্থক্যের জন্য, অর্থাৎ সূর্য রশ্মি লম্বভাবে অথবা তীর্যকভাবে পতিত হবার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট অঞ্চলটিতে সারা বছর ব্যাপী তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে। সূর্যের এই তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে সমগ্র বৎসরকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি ভাগকে একেকটি ঋতু নামে অভিহিত করা হয়। সমগ্র বিশ্বে মােট চারটি ঋতু পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর চারটি অবস্থান পর্যালােচনা করলে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
- উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল।
- উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল।
- উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ।
- উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল।
ঋতু পরিবর্তনের চিত্রঃ
২১ শে মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং পৃথিবী নিজ কক্ষপথে ২১শে জুন তারিখে অবস্থান করে। এসময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে এবং উত্তর গোলার্ধে সূর্য হেলে থাকে ফলে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের শেষভাগ পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে।
২১শে জুনের পর পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে দক্ষিণ মেরু সূর্যের কাছাকাছি চলে আসে। ২৩শে সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখা (0°) বরাবর লম্বভাবে আলো দেয়। এ সময় অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগ পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে।
২৩ শে সেপ্টেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য কৌণিক দূরত্ব কমতে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে সাথে সূর্যের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।
২২শে ডিসেম্বরের পর পৃথিবী নিজ কক্ষপথে অগ্রসর হতে হতে ২১ শে মার্চ এমন অবস্থানে পৌঁছায় যখন সূর্যের আলো নিরক্ষরেখা বরাবর লম্বভাবে পতিত হয়। এই সময়কালে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল বিরাজ করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীতে জলবায়ুগত তারতম্য এর জন্য সূর্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে মানুষের সকল ধরনের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্নতা দেখা যায়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বময় প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ সম্পদের বিভিন্নতা ঘটে।
Follow Us