প্রাক ইসলামী যুগে আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?


আরব দেশ ছিল অনুর্বর। ইয়েমেন, মদীনা ও তায়েফ কিছুটা কৃষি উপযোগী হলেও সামগ্রিক বিবেচনায় আরব ছিল সম্পূর্ণ কৃষি অনুপযোগী। তাই নগরবাসী আরবগণ ব্যবসায় এবং যাযাবর বেদুঈনরা পশুপালন করে জীবিকা চালাত । যে খাদ্য শস্য উৎপন্ন হত প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল খুবই নগণ্য। তাই আরবদের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। আরব জনগণকে অর্থনৈতিক বা পেশাগত শ্রেণী বিভাজন করে দেখলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র ফুটে উঠবে ।
বণিক শ্রেণী: ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বিশেষ করে ব্যবসায় কেন্দ্র হিসেবে মক্কা তখন পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। মক্কার বণিক সমাজ এশিয়ার সঙ্গে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার স্থল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। প্রাক-ইসলামী যুগে মক্কা বহির্বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল। শহরকেন্দ্রিক ধনী বণিক শ্রেণীর বিকাশ ঘটেছিল। এরা সিরিয়া, পারস্য, মিসর, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশের সাথে বাণিজ্য করত। হযরত আবু বকর, উসমান ও খাদীজা (রা) প্রমুখ ব্যবসায়ী ছিলেন। মক্কায় ব্যাংক স্থাপিত হয়। মহাজনী কারবার গড়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সহায়ক নিকাশ ঘর (Clearing house)- এর প্রবর্তন হয়। মদীনাও এসব ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল । ফলে জনগণের একটা অংশ সম্পদশালী ও সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হয়। তবে এদের সংখ্যা ছিল খুবই কম ।
রিক্ত যাযাবর: মরুভূমির তাঁবুতে বসবাসকারী বেদুঈনগণ শহরবাসীদের মত স্থায়ীভাবে এক স্থানে বসবাস করতনা। স্বাধীনচেতা বেদুঈনগণ খাদ্য ও পানীয়ের সন্ধানে মরুভূমির এক স্থান থেকে অপর স্থানে ছুটে বেড়াত। তাই আরব বেদুঈনদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয় এবং অনিশ্চিত। বিরূপ প্রকৃতির কারণে তারা যাযাবরী জীবন গ্রহণ করে। পশুপালন আর লুটতরাজই ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়।
সুদখোর ইহুদি: ইসলামপূর্ব যুগের ধনী ইহুদিরা সুদের ব্যবসায় করত। শোষণের ঘৃণ্যতম এ প্রথায় নিঃস্ব আরবগণ আরো নিঃস্ব ও সর্বহারা শ্রেণীতে পরিণত হয়। এমন কি স্ত্রী-কন্যাকেও হারাতে হত। ইহুদিদের সুদের কারবারের নিয়ম ছিল খুবই নিষ্ঠুর ও জটিল। সুদ অনাদায়ের দায়ে ঋণ গ্রহণকারীর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাগণ, দাস-দাসী হিসেবে সুদখোর মহাজনের হাতে চলে যেত ।
কৃষিজীবী: মদীনা, তায়েফ ও ইয়েমেনের জমি উর্বর থাকায় সেখানে কৃষিকার্য চলত এবং প্রচুর ফসল উৎপন্ন হত। তায়েফে প্রচুর তরমুজ, কলা, ডুমুর, আঙ্গুর, জলপাই, পীচ ও মধু উৎপন্ন হত। মদীনায় খেজুর ও গম জন্মাত। এসব অঞ্চলের লোকেরা মোটামুটি ভাল অবস্থায় ছিল।
কারিগরি ব্যবস্থা: পৌত্তলিক আরবে কিছুসংখ্যক লোক মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণে দক্ষ ছিল। সমাজে তাদের মর্যাদাও বেশ ভাল ছিল এবং আর্থিক অবস্থাও তাদের সচ্ছল ছিল।
আরব দেশের ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান এর অধিবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। রুক্ষ-মরুর দেশ আরব ছিল অনুর্বর। তাই সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। লুটতরাজ করে ও পশু পালন করেই আরবরা কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করত। মক্কা কেন্দ্রিক বণিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা ভাল ছিল। ইয়াহুদীরা সুদি কারবার করত। তারা সাধারণ লোকদের শোষণ করত।