নামাযের মধ্যে ফোনে কল আসলে নিয়ম কি?
জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। উত্তর দিয়েছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
প্রশ্নঃ কোন মুসলিম অমুসলিমের রক্ত গ্রহণ করতে পারবে কিনা?
উত্তরঃ মুসলিমের শরীরে অমুসলিমের রক্ত গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। কুরআন ও হাদিসে কোথাও নিষেধ নেই। অমুসলিমদের সাথে আমাদের উঠা বসা, চলাফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া, তাদেরকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া এগুলোর কোনটাতে আল্লাহপাক আমাদের নিষেধ করেন নাই। এক্ষেত্রে কুরআনের নির্দেশনা হলো-
‘দ্বীনের (ইসলামি জীবনব্যবস্থার) ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৮)
প্রশ্নঃ সিজদায় যাওয়ার সময় হাত আগে পড়বে নাকি হাটু আগে পড়বে?
উত্তর: এ সম্পর্কে দুই রকমের হাদিস রয়েছে। কোন কোন হাদিসে আছে নবী করীম (সা:) সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত পরে হাটু ফেলেছেন। আবার অনেক হাদিসে এর বিপরীতটাও আছে। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাজহাব বা দৃষ্টিভঙ্গি হল আগে হাটু পড়বে পরে হাত পড়বে।
উত্তর: যেকোন অমুসলিমকে আর্থিক সাহায্য করা, সহযোগিতা করা ইটা ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ কাজ না। নবী করীম (সা:) বহু অমুসলিনকে সাহায্য করেছিলেন। সেই দৃষ্টকোণ থেকে আপনি চাইলে অমুসলিমকে সাহায্য করতে পারেন। তবে আপনার থেকে টাকা নিয়ে পূজা করবে, গুনাহের কাজ করবে, আল্লাহর অবাধ্যতা করবে, শির্ক করবে সেখানে আপনি টাকা দিতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ জামাত চলাকালীন সময়ে ইমামের ভুল হলে মুসল্লিরা যদি তাকবীর না দেয়, জামাত শেষে ভুল হওয়ার কথা না বলে তাহলে নামাজ হবে কিনা ?
উত্তর: প্রথম কথা হল তাকবীর দিবেন না। এদেশের ৯৯ ভাগ মানুষ এই ভুলটা করে। ভুলটা হল, ইমামের কোন ভুল হলে মুসল্লিরা তাকবীর দেয় “আল্লাহু আকবার” বলে। এটি করা যাবে না। সঠিক হল ইমাম ভুল করলে মুসল্লিরা লোকমা দিবে “সুবাহানাল্লাহ” বলে। এবার আসল প্রশ্নে আসা যাক। আগে দেখতে হবে ইমামের ভুলটা কোন ধরণের। যদি ফরজ ভুল হয়ে থাকে, যেমন চার রাকাতের জায়গায় তিন রাকাত পরে সালাম ফিরিয়ে ফেলেছেন তাহলে নামাজ আবার পড়তে হবে। আর যদি ওয়াজিবের ভুল হয় আর সবাই কেবলার দিকে ফিরে থাকে তখন যদি কেউ লোকমা দেয় তাহলে ইমাম সাহেব সহু সিজদাহ দেয় তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে। অন্যথায় নামাজ আবার পড়তে হবে। আর যদি সুন্নতের ভুল হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কিছুই করতে হবে না। নামাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ জুতা পরে জানাজার নামাজ পড়া যাবে কিনা?
উত্তর: এর উত্তর হল অবশই যাবে। আমাদের দেশে দেখা যায়, জানাজা নামাজ শুরু হলে সবাই গণহারে জুতা খুলে ফেলে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন – “ও মুসলমানরা, তোমরা জুতা পরে নামাজ পড়িও যদি প্রয়োজন হয়।” ইহুদীরা জুতা পড়ে নামাজ পড়ে না, জুতা খুলে নামাজ পড়ে। জানাজা নামাজতো বাহিরে পড়া সুন্নত। তাই জুতা পরে জানাজা পড়লে কোন অসুবিধা নেই। তবে যদি জুতার নিচে নাপাকি থাকে তাহলে জুতা খুলে নামাজ পড়তে পারেন।
প্রশ্নঃ বিয়ের অনুষ্ঠান কি মেয়ের বাড়িতে নাকি ছেলের বাড়িতে হওয়া সুন্নত?
উত্তর: যে কোন জায়গায় হতে পারে। এমনকি ছেলে মেয়ের বাড়িতে না হয়েও তৃতীয় কোন জায়গায় হতে পারে। তবে বিয়ের খাওয়ার অনুষ্ঠান ছেলের বাড়িতে হবে। ইসলামে বিয়ে উপলক্ষে একটি খাবারের অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে। সেটি হলো ওয়ালিমা। আর এই ওয়ালিমা করবে ছেলে।
প্রশ্নঃ নামাযের মধ্যে ফোনে কল আসলে নিয়ম কি?
উত্তরঃ প্রথম কথা হল নামায শুরু করার পূর্বে মোবাইল বন্ধ করা উচিত। বন্ধ না করলে সাইলেন্ট করা উচিত। নামাযের মধ্যে ফোন চলে আসলে নামাযে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কোন কারনে যদি মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যান তাহলে, জামাতে নামায পরা অবস্থায় আস্তে করে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে নিবেন।