“কৃষি শিক্ষা” নবম শ্রেণি ১৪ তম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর – Agricultural Science Class Nine 14th week assignment answer
নির্ধারিত কাজঃ
“কৃষি শিক্ষা” নবম শ্রেণি ১৪ তম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর
পুকুর হচ্ছে ছােট ও অগভীর বদ্ধ জলাশয়, যেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মাছ চাষ করা যায় এবং প্রয়ােজনে এটিকে সহজেই সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে ফেলা যায়। মাছ চাষের পুকুরের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার যা চাষ প্রক্রিয়াকে লাভজনক করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। একটি আদর্শ মাছ চাষের পুকুরের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলাে থাকা প্রয়ােজন:
১) পুকুরটি বন্যামুক্ত হবে। এজন্য পুকুরের পাড় যথেষ্ট উঁচু হতে হবে।
২) পুকুরের মাটি দোআঁশ, পলি-দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ হলে সবচেয়ে ভালাে।
৩) সারা বছর পানি থাকে এমন পুকুর চাষের জন্য অধিক উপযুক্ত।
৪) পুকুরের পানির গভীরতা ০.৭৫-২ মিটার সুবিধাজনক।
৫) পুকুরটি খােলামেলা স্থানে হলে ভালাে হয় এবং পাড়ে কোনাে বড় গাছপালা না লাগালে ভালাে হয়। এতে পুকুর প্রচুর আলাে-বাতাস পাবে। ফলে পুকুরে সালােকসংশ্লেষণ বেশি হবে ও মাছের খাদ্য বেশি তৈরি হবে। পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মিশবে। উত্তর-দক্ষিণমুখী পুকুর সূর্যালােক বেশি পাবে।
৬) পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকা উচিত নয়। তলার কাদার পুরুত্ব ২০-২৫ সেমি এর বেশি হওয়া ঠিক নয়।
৭) চাষের পুকুরের আয়তন ২০-২৫ শতক হলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। পুকুরের আকৃতি আয়তাকার হলে ভালাে। এতে করে জাল টেনে মাছ আহরণ করা সহজ হয়।
৮) পুকুরের পাড়গুলাে ১:২ হারে ঢালু হলে সবচেয়ে ভালাে। অর্থাৎ পুকুরের তলা হতে পুকুরের পাড় যতটুকু উচু হবে পাড় ঢালু হয়ে পুকুরের তলার দিকে দ্বিগুণ দূরত্বে গিয়ে মিশবে।
 |
পুকুরের বিভিন্ন স্তর |
অবস্থান বা বাসস্থানের উপর ভিত্তি করে পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়কে চার ভাগে ভাগ। করা যায়। যথা:
১) প্লাংকটন,
২) সাঁতারু বা নেকটন,
৩) তলবাসী বা বেনথােস, এবং
৪) জলজ উদ্ভিদ।
১) প্লাংকটন: প্লাংকটন হচ্ছে পানিতে মুক্তভাবে ভাসমান আণুবীক্ষক জীব। এরা দুই প্রকার যথা। ফাইটোপ্লাংকটন বা উদ্ভিদকণা ও জুপ্লাংকটন বা প্রাণিকণা। তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন- পুকুরের পানির রং সবুজ বা সবুজাভ থাকলে বুঝতে হবে পানিতে ফাইটোপ্লাংকটন আছে। কিন্তু বাদামি সবুজ, লালচে সবুজ বা হলদেটে সবুজ থাকলে বুঝতে হবে ফাইটোপ্লাংকটনের পাশাপাশি পুকুরে জু-প্লাংকটনের উপাদানও ভালাে। কয়েকটি ফাইটোপ্লাংকটনের উদাহরণ হচ্ছে- ক্লোরেলা, এনাবেনা, মাইক্রোসিস্টিস ইত্যাদি। আর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য জ-প্লাংকটন হচ্ছে ড্যাফনিয়া, কপিপােড, রটিফার। পুকুরে প্লাংকটনের উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত আলাে বাতাসের ব্যবস্থা করে নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হয়। নিম্নে চিত্রের সাহায্যে এদের মধ্যে পার্থক্য দেখানাে হলাে:
 |
চিত্র: কয়েকটি জু-প্লাংকটন |
 |
চিত্র: কয়েকটি ফাইটোপ্লাংকটন |
২) সাঁতারু বা নেকটন: এরা মুক্তভাবে সাঁতার কাটতে পারে। এরা সমস্ত পানিতে চরে বেড়ায় এবং খাদ্য খুঁজে খায়। যেমন- জলজ পোকামাকড়, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি।
 |
জলজ পোকা |
৩) তলবাসী বা বেনথাস: পুকুরের তলদেশে কাদার উপরে বা ভিতরে যে সব জীব থাকে তাদেরকে তলবাসী বা বেনথােস বলে। যেমন- পচনকারী ব্যাকটেরিয়া, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি। তলবাসী প্রাণী, পুকুরের তলা থেকে প্লাংকটনের পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস মুক্ত করতে সাহায্য করে।
 |
পচনকারী ব্যাকটেরিয়া |
৪) জলজ উদ্ভিদঃ পুকুরে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। যাদের মাঝেও অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন- অগভীর পুকুরের তলদেশে বা পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের শেওলা জন্মে। যেমন- স্পাইরােগাইরা। কিন্তু লতানাে উদ্ভিদ সমূহের শিকড় পাড়ে আটকানাে থাকলেও কাণ্ড ও পাতা পানিতে ছড়িয়ে থাকে। যেমন- হেলেঞ্চা, মালঞ্চ। অন্যদিকে ভাসমান উদ্ভিদ সমুহ পানিতে ভেসে থাকে। এদের মূল মাটিতে আটকানাে থাকে না। যেমন- কচুরিপানা, টোপাপানা, খুদিপানা ইত্যাদি।
 |
চিত্র: মালঞ্চ |
 |
চিত্র: কচুরিপানা, খুদিপানা। |
আবার নিমজ্জিত বা ডুবন্ত উদ্ভিদ সমূহ পানির তলদেশে থাকে। এদের শিকড় মাটিতেই থাকে। এদের পাতা ও ডাল কখনােই পানির উপরে আসে না। যেমন- কাঁটাঝাঁঝি, পাতাঝাঁঝি, পাতাশেওলা, নাজাস ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, নির্গমশীল উদ্ভিদের শিকড় পানির নিচে মাটিতে থাকলেও পাতা ও কাণ্ডের উপরের অংশ বা শুধু পাতা পানির উপর দাঁড়িয়ে থাকে বা ভেসে থাকে। যেমন- শাপলা, পদ্ম, আড়াইল ইত্যাদি।
 |
চিত্র: পাতাঝাঁঝি নাজাস, কাঁটাঝাঁঝি। |
 |
চিত্র:শাপলা, পদ্ম |
এভাবেই পুকুরে বসবাসকারী জীব সমূহের মধ্যে নানাবিধ পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়।