
প্রিয় পাঠক, আশা করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়া ও মেহেরবানিতে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আর তা হল কোরবানির শর্তাবলি। আমারা মুসলিমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি দিয়ে থাকি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের কোরবানির শর্তাবলি সম্পর্কে ভাল ভাবে জানা উচিত।
কোরবানির শর্তাবলিঃ
(১) এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হলঃ উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় “বাহীমাতুল আনআম”। যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন,
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ ۗ فَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا ۗ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও; (সূরা হাজ্জ্ব। আয়াত ৩৪)
তাছাড়া, হাদিসে এসেছে,
“তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।”
আর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও করবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক রহ. এর মতে কোরবানির জন্য উত্তম জন্তু হল শিং ওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম (সাঃ) এ ধরণের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে,
“আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।”
গুনগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুত, দেখতে সুন্দর হওয়া।
(২) শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছরের।
(৩) কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। হাদিসে এসেছে, সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“চার ধরণের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না। অন্ধঃ যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্তঃ যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গুঃ যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহতঃ যার কোন অংশ ভেঙ্গে গেছে”। নাসায়ির বর্ণনায় “আহত” শব্দের স্থলে “পাগল” উল্লেখ আছে।
“চার ধরণের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না। অন্ধঃ যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্তঃ যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গুঃ যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহতঃ যার কোন অংশ ভেঙ্গে গেছে”। নাসায়ির বর্ণনায় “আহত” শব্দের স্থলে “পাগল” উল্লেখ আছে।
আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাক্রুহ হবে। এ সকল দোষত্রুটি যুক্ত কোরবানি না করা ভালো। সে ত্রুটিগুলো হলঃ শিং ভাঙ্গা, কান কাটা, লেজ কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি।
(৪) যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।
কোরবানি নিয়ে পড়ুনঃ
কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন (পর্ব ১)
কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন (পর্ব ১)