বারটি মাসের মধ্যে ফযিলতপূর্ণ মাস হল রমজান মাস। সিয়াম সাধনার মাস হচ্ছে রমজান। এই মাসে আল্লহ তায়ালা একটি বিশেষ রাত রেখেছেন যে মাসের ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আর সে রাত হল লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। আল্লাহ তায়ালা সূরা আল কদর-এ এই রাত সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি এই মহিমান্বিত রাতটিকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে অভিহিত করেছেন।
শবে কদরের অর্থ কি
শব শব্দের অর্থ হলো রাত বা রজনী। কদর শব্দের অর্থ হলো মর্যাদা, সম্মান, ভাগ্য ইত্যাদি। অর্থাৎ শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদর শব্দটি মূলত ফারসি শব্দ। এর আরবি শব্দ হচ্ছে লাইলাতুল কদর। শবে কদরের আরবি হল লাইলাতুল কদর । এই রাতেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল-কুরআন নাজিল করেছেন। শবে কদরকে নিয়ে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে একটি সূরা নাযিল করেছেন। সূরাটির নাম হল আল-কদর
শবে কদর কবে বা কখন
শবে কদর কবে তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। তবে রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোন বিজোড় রাতে শবে কদর হতে পারে বলে হাদিসে জানা যায়। আমাদের বাংলাদেশসহ আরো কিছু কিছু দেশে রমজান মাসের ২৭ তারিখকেই শবে কদর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ও পালন করা হয়। আমাদের দেশে এই দিনেই কেবল ইবাদত পালন করে। আসলে রমজানের ২৭ তারিখই যে শবে কদর হবে তা কিন্তু নয়। আমাদের নবি করিম (সা) বলেনঃ
তোমরা রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।
অর্থাৎ রমজান মাসের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ রাতে আমাদের এই মহিমান্বিত রাত শবে কদর অনুসন্ধান করতে হবে। আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী)
আমাদের দেশে যারা ইতিকাফ এ বসে, তারা কিন্তু রমজান মাসের শেষ ১০ দিন এটা করে। তারা বিজোড় রাতগুলোতে বেশি বেশি করে ইবাদত করে ও বিশাল পরিমাণ সাওয়াবের অংশীদার হয়।
ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) এর মতে রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতি শবে কদর তিনি সুন্দর ভাবে বুজাইয়া দিয়াছেন যে সুরা কদরে لَيْلَةُ الْقَدْر শব্দটি মোট এসেছে ০৩ বার।لَيْلَةُ الْقَدْر লেখতে হরফ লাগে ০৯ টি । এখন ৩ দ্বারা ৯ কে গুন করলে ২৭ হয় । তাই শবে কদর হবে ২৭ শে রমজান। অন্য এক হাদিসে এসেছে, আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুল(স) এর সাথে রমযান মাসের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। তিনি বলেনঃ
আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল; পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো। (সহীহ আবু দাউদ, বুখারী, মুসলিম)
তাই আমাদের সকলকে রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে ও ইবাদত করতে হবে।
শবে কদর চিনার উপায়
হাদিসে শবে কদরের অনেক আলামত সম্পর্কে বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে মুসলিমরা শবে কদরকে চিনতে পারে। আলামতগুলো হলঃ
- রাসূল (সাঃ) বলেছেন: লাইলাতুল কদরের রাত উজ্জ্বল। অন্য এক বর্ণনায় আছে, নাতিশীতোষ্ণ; না ঠাণ্ডা, না গরম।” (মুসনাদ আহমদ, ত্বাবারানী, ইবনে খুযাইমাহ)
- হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, “আমরা আল্লাহর রাসূল (সা) উপস্থিতিতে লাইলাতুল কদর নিয়ে আলোচনা করছিলাম অতঃপর তিনি (সাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে (ঐ রাত) মনে করতে পার যেদিন ‘চাঁদ অর্ধ থালার মত উঠেছিল? (মুসলিম)
- “লাইলাতুল কদরের রাতে উল্কা ছুটে না।” (মুসনাদ আহমদ, ত্বাবারানী, ইবনে খুযাইমাহ)
- ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত্রিটি হল প্রশান্ত ও আনন্দময়, না গরম আর না ঠান্ডা এবং ভোঁরে সূর্য উদিত হয় দূর্বল ও লাল হয়ে।” (ইবন খুযাইমাহ – হাদিসটি হাসান)
- রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “সে রাতের প্রভাতের সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত অনুজ্বল থাকবে ।” (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)।
শেষ কথা হলো শবে কদর ঠিক কবে তা একমাত্র আল্লহ ভালো জানেন। তবে এটা নিশ্চিত যে রমজানের শেষ ১০ দিন বিজোড় রাতের যেকোন দিন শবে কদর হতে পারে। আমরা বিজোড় রাত্রিগুলোতে বেশি বেশি ইবাদাত করার চেষ্টা করব। কেননা শবে কদরের রাতের ইবাদাত হাজার বছরের রাতের চেয়েও অধিক উত্তম।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।