
যিকির করার মাধ্যমে একদিকে যেমন নেকি লাভ করা যায় অন্যদিকে আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিল করা যায়। যিকির সবচেয়ে সহজ একটি ইবাদাত। যিকির করার জন্য ওযু করতে না। বান্দা চাইলে ২৪ ঘণ্টা সময়কে যিকিরের মাধ্যমে কাজে লাগাতে। যিকির যেকোন অবস্থায় করা যায়। নীরবে মনে মনে যিকির করা উত্তম।
আমারা চাইলেই পাঁচ ওয়াক্তের বেশি সালাত আদায় করতে পারব না। কারণ আল্লাহপাক আমাদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা চাইলে যতখুশি যিকির ও দোয়া করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা কিছু জিকিরকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। বিধায় যখনই সময় পাওয়া যায় তখন, কিংবা হাঁটা-চলা অবস্থায় বা গাড়ীতে বসা অবস্থায়, অথবা শােয়া বা দাঁড়ানাে অবস্থায়, অথবা কারাে জন্যে অপেক্ষায় বা কোন কাজের জন্যে লাইনে দাঁড়ানাে অবস্থায়, উল্লেখিত জিকিরগুলাে অনায়াসে করতে পারেন। যা করার জন্য ওযুর প্রয়োজন নেই, নেই কোনকষ্ট, নেই পরিশ্রম।
আল্লাহ্পাক পবিত্র কুরআনে বলেনঃ
তােমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তােমাদেরকে স্মরণ করব। সুরা বাকারা আয়াত :১৫২
দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি এবং মুক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে অন্তরে আল্লাহর যিকির। বেশী বেশী করে মহান আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন,
হে ঈমানদার, তােমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। সুরা আযহাব আয়াত, ৪১-৪২
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অসংখ্য যিকির ও দোয়া রয়েছে। আল্লহর কাছে পছন্দনীয় শ্রেষ্ঠ কিছু যিকির ও দোয়া নিচে দেওয়া হলঃ
১। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, আল্লহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাক্য চারটি। আর এই চারবাক্য পাঠ করা তাঁর কাছে সমগ্র পৃথিবী অপেক্ষা প্রিয়।
ক) “সুব হা-নাল্লাহ”
খ) “আল-হামদুলিল্লাহ্”
গ) “লা-ইলাহ ইল্লাল্লা-হ”
ঘ) “আল্লাহু আকবার” (মুসলিম হাদিস নং ৩৯৮৫)
এ বাক্যগুলো একত্রে এবং আলাদা আলাদা ভাবে বলা যায়।
২। রাসুলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ও ঘুমানোর পূর্বে সুব হা-নাল্লাহ ৩৩ বার, আল-হামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়তে বলেছেন।
৩। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, শ্রেষ্ঠ যিকির হল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ, শ্রেষ্ঠ দোয়া হল, আল-হামদুলিল্লাহ্। যে ব্যক্তি প্রত্যহ ১০০ বার সুব হা-নাল্লাহ বলবে তাঁর জন্য একহাজার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
[box type=”info” align=”” class=”” width=””]আরও পড়ুনঃ যিকিরের ফজিলত[/box]
৪। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ দুটি কাজ এমন যে মুখে উচ্চারণ করা অতি সহজ, পাল্লায় অনেক ভারী। আর আল্লাহ্র নিকট অতি প্রিয়। তা হল, সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়া বিহামদিহি- সুবহা-নাল্লাহিল আযীম। (বুখারী হাদিস নং ৫৯৫১, মুসলিম হাদিস নং ৬৬০১)।
৫। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ১০০০ বারের বেশি আস্তাগফিরুল্লা-হ যিকিরটি পাঠ করতে সক্ষম হবেন, (ইনশাআল্লাহ)। এই যিকিরটির দ্বারা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মাগফিরাত লাভ হবে, জান্নাত লাভ হবে এবং আপনার সব ধরনের শক্তি বাড়বে।
৬। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ৫০ বার রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য দুরুদ ও সালাম আল্লাহুম্মা সল্লিআলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ পাঠ করতে সক্ষম হবেন, (ইনশাআল্লাহ)। এই আমলের সওয়াব হিসাবে আল্লাহপাক আপনার জন্য ৫০০ বার রহমত নাযিল করবেন।
[box type=”info” align=”” class=”” width=””]আরও পড়ুনঃ দোয়া কবুলের ২০ টি উত্তম সময়[/box]
৬। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ৫০ বার রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য দুরুদ ও সালাম আল্লাহুম্মা সল্লিআলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ পাঠ করতে সক্ষম হবেন, (ইনশাআল্লাহ)। এই আমলের সওয়াব হিসাবে আল্লাহপাক আপনার জন্য ৫০০ বার রহমত নাযিল করবেন।
৭। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ৪০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম যিকিরটি করতে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ। এই আমলটি উচ্চারণ করতে হালকা, কিন্তু আখেরাতে আপনার যাবতীয় আমল ওজন দেয়ার জন্য দাড়ি পাল্লাতে রাখা হলে এ আমলটি বেশী ভারী হবে। (বুখারী হা: ৭৫৬৩, মুসলিম হা: ৩১-(২৬৯৪),৪(২০৭২)।
- সুবহানাল্লাহঃ এক শতবার পাঠ করলে এক হাজার নেকী অর্জিত হবে এবং এক হাজার গুনাহ মাফ হবে । (সহীহ মুসলিম যিকির, দোয়া হা: নং ৬৬০৭।)
- আল-হামদুলিল্লাহঃ পাঠ করলে নেকীর পাল্লা ভরে যায়। (সহীহ মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়, ১-২২৩,১/২০৩ নং হাদীসের অংশ বিশেষ:)
- লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহঃ সর্বোত্তম জিকির। (সহীহ সুনানে তিরমিযী ৩/১৪০)।

৯। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ২৫ বার লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ যিকিরটি পাঠ করতে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ। এ যিকিরটি জান্নাতের গুপ্তধন ভান্ডারের মধ্য হতে একটি গােপন ধনভান্ডার। (সহীহ মুসলিম, যিকির দোয়া, হাদীস নং ৪৭-(২৭০৪),৪/২০২৮।)
১০। মাত্র ১ মিনিটে আপনি ১০ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা- শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদী-র। যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার এ দোয়াটি পাঠ করবে, সে দশটি গােলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে, তার আমল নামায় একশত নেকী লিপিবদ্ধ হবে এবং তা থেকে একশত গুনাহ নিশ্চিহ্ন করা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে। (তিরমিযী)।
আল্লাহর রাসুল (সঃ) যিকিরের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সকল অবস্থায়ই আল্লাহর যিকির করতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুল (সঃ) সকল অবস্থায় যিকির করতেন। (মুসলিম)।