Source: http://istockphoto.com/
আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এতটাই ভালবাসেন যে, প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের সওয়াব হাসিল করার সুযোগ দিয়েছেন। সকাল থেকে বিকাল, বিকাল থেকে রাত প্রতিটি মুহূর্তই চাইলে আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারি। যিকির হল সেই সেতু যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ্র নিকটে আসতে পারে। প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আসুন জেনে নেই সকাল ও বিকালে আমারা কোন কোন যিকির করবো।
(১) আয়াতুল কুরসী: উচ্চারণঃআল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম
অর্থঃ “আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দু’টির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।
আয়াতুল কুরসী আরবি-বাংলা- উচ্চারণ ও ফযিলত জানতে এই লিঙ্কে যান।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হাদীসটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, “কোনো গোষ্ঠী যারা যিকির করছে, তাদের সাথে ফজরের সালাতের পরে সূর্য উঠা পর্যন্ত সময় বসা আমার কাছে ইসমাঈলের বংশধরদের চার জন্য দাস মুক্তির থেকেও বেশি প্রিয়। অনুরূপভাবে কোনো গোষ্ঠী যারা যিকির করছে, তাদের সাথে আসরের সালাতের পরে সূর্য ডুবা পর্যন্ত সময় বসা আমার কাছে চার জন্য দাস মুক্তির থেকেও বেশি প্রিয়।” আবূ দাউদ, নং ৩৬৬৭। আর শাইখ আলবানী, সহীহ আবি দাউদ ২/৬৯৮ তে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
(২) সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস (তিন বার পাঠ করা): হাদীসে এসেছে, রাসূল বললেন, যে ব্যক্তি সকাল ও বিকালে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস), সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে বলবে, এটাই আপনার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে। (আবূ দাউদ ৪/৩২২, নং ৫০৮২; তিরমিযী ৫/৫৬৭, নং ৩৫৭৫।)
(৩) বিকাল উপনিত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: আল্লা-হুম্মা বিকা আমসাইনা ওয়াবিকা আসবাহ্না ওয়াবিকা নাহ্ইয়া ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলাইকাল মাসীর। (“হে আল্লাহ! আমরা আপনার জন্য বিকালে উপনীত হয়েছি এবং আপনারই জন্য আমরা সকালে উপনীত হয়েছি। আর আপনার দ্বারা আমরা জীবিত থাকি, আপনার দ্বারাই আমরা মারা যাব; আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হব।)
(৪) সায়্যিদুল ইসতিগফার: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা। (“হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির ওপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।)
“যে ব্যক্তি সকালবেলা অথবা সন্ধ্যাবেলা এটি (‘সায়্যিদুল ইসতিগফার’) অর্থ বুঝে দৃঢ় বিশ্বাসসহকারে পড়বে, সে ঐ দিন রাতে বা দিনে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।” বুখারী, ৭/১৫০, নং ৬৩০৬।
(৫) যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে নিচের দোয়াটি চার বার বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। আবূ দাউদ ৪/৩১৭
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি। আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফিরিশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে- নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল।
(৬) যে ব্যক্তি নিচের দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১;
উচ্চারণঃ হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম
অর্থঃ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান ‘আরশের রব্ব।
(৭) যে ব্যক্তি নিচের এ দো‘আ সকাল ও বিকাল তিনবার করে বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। আহমাদ ৪/৩৩৭;
উচ্চারণঃ রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান।
অর্থঃ আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট ।
(৮) যে কেউ সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান হবে।’ তাবরানী হাদীসটি দু’ সনদে সংকলন করেন, যার একটি উত্তম।
উচ্ছারনঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর
(৯) যে কেউ বিকাল বেলা এ দো‘আটি তিনবার বলবে, সে রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না।
উচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্বা।
অর্থঃ আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসীলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।
(১০) ১০০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করা । (আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি) আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি
(১১) যে ব্যক্তি তা সকালে একশত বার ও বিকালে একশত বার বলবে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না, তবে সে ব্যক্তি যে তার মত বলবে, বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে। মুসলিম ৪/২০৭১, নং ২৬৯২।
উচ্চারণঃ সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী
অর্থঃ আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি ।