ছবিঃ সংগৃহীত |
সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পান আহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রােযা বলা হয়। প্রত্যেক আকেল (বােধসম্পন্ন), বালেগ (বয়সপ্রাপ্ত) ও সুস্থ্য নর-নারীর উপর রমযানের রােযা রাখা ফরয। ছেলে মেয়ে দশ বৎসরের হয়ে গেলে তাদের দ্বারা (শাস্তি দিয়ে হলেও) রােযা রাখানাে কর্তব্য। এর পূর্বেও শক্তি হলে রােযা রাখার অভ্যাস করানাে উচিত।
রমযানের রােযার নিয়ত কীভাবে করব?
রমযানের রােযার জন্য নিয়ত করা ফরয। নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহার ও যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত থাকলেও রােযা হবে না । মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়। অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে, তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম এই অর্থে যে, তাতে মনের খটকা দূর হয়ে যায় ।
মুখে নিয়ত করলেও আরবীতে হওয়া জরুরি নয়- যেকোনাে ভাষায় নিয়ত করা যায় । নিয়ত এভাবে করা যায়ঃ আমি আজ রােযা রাখার নিয়ত করলাম।
সূর্য ঢলার দেড় ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত রমযানের রােযার নিয়ত করা দুরস্ত আছে, তবে রাতেই নিয়ত করে নেয়া উত্তম।
রমযান মাসে অন্য যেকোনাে প্রকার রােযা বা কাযা রােযার নিয়ত করলেও এই রমযানের রােযা আদায় হবে। অন্য যে রােযার নিয়ত করবে সেটা আদায় হবে না।
রাতে নিয়ত করার পরও সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস জায়েয। নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গেই রােযা শুরু হয়ে যায় না, বরং রােযা শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে।
সেহরীর মাসায়েল
সেহরী রোযার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন জেনে নেই সেহরীর মাসায়েল সম্পর্কে।
- সেহরী খাওয়া জরুরি নয় তবে সেহরী খাওয়া সুন্নাত, অনেক ফযীলতের আমল, তাই ক্ষুধা না লাগলে বা খেতে ইচ্ছে না করলেও সেহরীর ফযীলত হাছিল করার নিয়তে যা-ই হােক কিছু পানাহার করে নিবে।
- নিদ্রিার কারণে সেহরী খেতে না পারলেও রােযা রাখতে হবে । সেহরী না খেতে পারায় রােযা না রাখা অত্যন্ত পাপ ।
- সেহরীর সময় আছে বা নেই নিয়ে সন্দেহ হলে সেহরী না খাওয়া উচিত। এরূপ সময়ে খেলে রােযা কাযা করা ভাল। আর যদি পরে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তখন সেহরীর সময় ছিল না, তাহলে কাযা করা ওয়াজিব।
- সেহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করল অথচ পরে জানা গেল যে, তখন সেহরীর সময় ছিল না, তাহলে রােযা হবে না। তবে সারাদিন তাকে রােযাদারের ন্যায় থাকতে হবে এবং রমযানের পর ঐ দিনের রােযা কাযা করতে হবে।
- বিলম্বে সেহরী খাওয়া উত্তম। আগে খাওয়া হয়ে গেলেও শেষ সময় নাগাদ কিছু চা-পানি ইত্যাদি করতে থাকলেও বিলম্বে সেহরী করার ফযীলত অর্জিত হবে।
ইফতার-এর মাসায়েল
- সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মােস্তাহাব। বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ।
- মেঘের দিনে কিছু দেরি করে ইফতার করা ভাল । মেঘের দিনে ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে সূর্য অস্ত গিয়েছে বলে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত ছবর করা ভাল । শুধু ঘড়ি বা আযানের উপর নির্ভর করা ভাল নয়, কারণ তাতে ভুলও হতে পারে।
- সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকা পর্যন্ত ইফতার করা দুরস্ত নেই।
- সবচেয়ে উত্তম হল খােরমার দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা, তারপর পানি দ্বারা ।
- লবণ দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম-এই আকীদা ভুল।
- ইফতার করার পূর্বে নিমােক্ত দুআ পাঠ করবে। দুআ পাঠ করা মােস্তাহাব।
- ইফতার করার পর নিমের দুআ পাঠ করবে।
- ইফতার-এর সময় দুআ কবুল হয়, তাই ইফতারের পূর্বে বা কিছু ইফতার করে বা ইফতার থেকে সম্পূর্ণ ফারেগ হয়ে দুআ করা মােস্তাহাব।
- পশ্চিম দিকে প্লেনে সফর শুরু করার কারণে যদি দিন লম্বা হয়ে যায় তাহলে সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূর্যাস্ত ঘটলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইফতার বিলম্ব করতে হবে, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও সূর্যাস্ত না ঘটলে ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার সামান্য কিছু পূর্বে ইফতার করে নিবে।
- পূর্ব দিকে প্লেনে সফর করলে যখনই সূর্যাস্ত পাবে তখনই ইফতার করবে।