মানবিক মূল্যবােধ বিকাশে ইমানের গুরুত্ব
ইমান অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলাের প্রতি বিশ্বাসকেই সাধারণত ইমান বলা হয়। আর মানবিক বলতে মানব সম্বন্ধীয় বুঝায়। অর্থাৎ যেসব বিষয় একমাত্র মানুষের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি হওয়ার যােগ্য তাই মানবিক মূল্যবােধ । অন্যকথায় যেসব কর্মকাণ্ড, চিন্তা-চেতনা মানুষ ও মানব সভ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাই মানবিক মূল্যবোধ।
 |
মানবিক মূল্যবােধ বিকাশে ইমানের গুরুত্ব |
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। এ হিসেবে মানুষের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও কর্মকাণ্ড সবই উন্নত ও সর্বোত্তম হওয়া উচিত। পশুর ন্যায় কাজকর্ম, লােভ-লালসা ইত্যাদি মানবিকতার আদর্শ নয় । যদি কোনাে মানুষ এ আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে পশুর ন্যায় আচরণ করে তবে সে মানবিক মূল্যবােধকে বিনষ্ট করে। মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত রাখার জন্য উত্তম গুণাবলি ও আদর্শ অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবােধ রক্ষা করা যায়।
মানবিক মূল্যবােধ বিকাশে ইমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ইমান নানাভাবে মানুষের মানবিকতার বিকাশ সাধন করে থাকে । ইমানের মূলকথা হলােঃ

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)। অর্থ : “আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল।”
এ কালিমার তাৎপর্য হলাে আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক ও মাবুদ। তিনি ব্যতীত প্রশংসা ও ইবাদতের যােগ্য কেউ নেই। তিনি ব্যতীত আর কারও সামনে মাথা নত করা যাবে না। এ কালিমা মানুষকে আত্মমর্যাদাশীল করে। এ কালিমায় বিশ্বাসী ব্যক্তি শুধু আল্লাহ তায়ালার সামনে মাথা নত করে। পৃথিবীর অন্য কোনাে সৃষ্টির সামনে মাথা নত করে না বা আত্মসমর্পণ করে না। ফলে মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়, মানবিক মূল্যবােধ বিকশিত হয়।
ইমান মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করে। নৈতিক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে । মুমিন ব্যক্তি সর্বদাই মানবিকতা ও নৈতিকতার ধারক হয়। অন্যায় অত্যাচার ও অনৈতিক কার্যকলাপ ইমানের সম্পূর্ণ বিপরীত। পূর্ণাঙ্গ মুমিন ব্যক্তি কখনােই মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের বিপরীত কাজ করতে পারে না। বরং মুমিন ব্যক্তি সবসময়ই নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শ অনুসরণ করে। সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, সহযােগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণাবলির চর্চা করে।
কুফর, নিফাক, শিরক ইত্যাদি ইমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ সমস্ত বিষয় মানুষের মধ্যে অসৎ কার্যাবলির বিকাশ ঘটায় । এগুলাের প্রভাবে মানব সমাজে অকৃতজ্ঞতা, অবিশ্বাস, মিথ্যাচার, ওয়াদা খেলাপ, ঝগড়া ফাসাদ, বিদ্রোহ ইত্যাদি জন্ম নেয় । যেমন মুনাফিক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

অর্থ : “আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত ০১)
ইমান মানুষকে নৈতিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে। মন্দ অভ্যাস ও অশ্লীল কার্যাবলি থেকে বিরত রাখে। ইমান মানুষকে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির ব্যাপারে সতর্ক করে । মুমিন ব্যক্তি সবসময় মনে রাখেন যে, তাকে একদিন আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজির হতে হবে। সেদিন আল্লাহ তায়ালা সব কাজকর্মের হিসাব চাইবেন। অতএব এ জবাবদিহির ভয়ে মুমিন ব্যক্তি সব ধরনের অমানবিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
অর্থ : “আর যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকে। নিশ্চয়ই জান্নাতই হলাে তার বাসস্থান।” (সূরা আন-নাযিয়াত, আয়াত ৪০-৪১)
মানবিক মূল্যবোধ ও ঈমান পারস্পরিক গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে ব্যক্তি মুমিন হয়ে ওঠে। জীবনযাপনে সে নিজ খেয়াল খুশির পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনার অনুসারী হয়। ফলে সে সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও অনৈতিকতা বাদ দিয়ে সুন্দর ও উত্তম আদর্শের অনুশীলন করে থাকে। এভাবে ঈমান মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়।