ইন্টারনেট

Dark Web: ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ৫টি ভূল ধারণা! এর আসল সত্যই বা কী?

3.7/5 - (3 votes)

আপনি সম্ভবত ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে শুনেছেন। মানুষ এই ওয়েবে একটু বেশি আগ্রহী। তবে আমরা অনেকেই হয়তো ডার্ক ওয়েবের কথা শুনেছি কিন্তু তাতে প্রবেশ করিনি। এই ওয়েব সম্পর্কে কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকে বলছেন যে ডার্ক ওয়েবে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে এবং এই ওয়েবটি খুবই ভীতিকর। কিন্তু, এটি কি সত্যিই ভীতিকর এবং ব্যবহার করা অবৈধ, যেমন আপনি মনে করেন?

ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ৫টি ভূল ধারণা! এরআসল সত্যই বা কী?
ডার্ক ওয়েবের আসল কাহিনী কী এবং এর সত্যতা কী

আপনি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে নিজে থেকে কতটুকু জানেন? বেশিরভাগ মানুষ ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে অন্য মানুষের কাছ থেকে শুনে থাকে। এবং অন্য সবার মতো, আপনি হয়তো অন্য কারো কাছ থেকে এই ওয়েব সম্পর্কে শুনেছেন৷ ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে লোকেরা যা জানে তার বেশিরভাগই শোনা। 

আমরা যেহেতু নিজেরা ডার্ক ওয়েব নিয়ে তেমন গবেষণা করি না তাই অন্যদের কাছ থেকে শুনা কথাগুলোকেই সত্যি মনে করি। আর এভাবেই ডার্ক ওয়েব বিষয়টি অতিরঞ্জিত ভাবে প্রকাশ পায়। 

তাহলে, ডার্ক ওয়েবের আসল কাহিনী কী এবং এর সত্যতা কী? আজকের লিখায় আমি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে কিছু মিথ্যা এবং এর বাস্তব সত্য উল্লেখ করেছি। এটি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা পরিবর্তন করবে।

১. ডার্ক ওয়েব ভালো লোকদের জন্য নয়

আপনি যদি ইন্টারনেটে খারাপ কিছু করতে চান বা এমন কিছু খুঁজে পেতে চান তবে আপনাকে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করতে হবে, তাই না? আপনার ধারণা অবশ্যই ভুল। ইন্টারনেটে খারাপ কাজগুলি সারফেস ওয়েব ব্যবহার করে করা যেতে পারে। ডার্ক ওয়েব হল একটি লুকানো জায়গা, যেখানে একটু বেশি নিরাপত্তা রয়েছে। যাইহোক, একজন অপরাধীর জন্য সারফেস ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব একই রকম। অনেক ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী রয়েছেন যাদের নেট দুনিয়ায় অনেক গোপনীয়তা এবং প্রাইভেসি রক্ষা করতে হয়। তাই তারা ডার্ক ওয়েবকে কাজে লাগান। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেন বলে তারা ভালো মানুষ নন কিংবা অপরাধ করছেন এমন ধারনা পোষণ করা নিতান্তই ভুল।

২. ডার্ক ওয়েব মানেই সাইবার অপরাধের আঁকড়া

অনেকেই বলতে শুনেছি সাইবার অপরাধের জন্য নাকি ডার্ক ওয়েবকে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার যত সাইবার অপরাধ হচ্ছে তার মূল উৎস হল ডার্ক ওয়েব। এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। 

আসলে আমরা যা জানি ঠিক তার উল্টোটাই সত্য। বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলছি। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ সার্ফেস ওয়েব ব্যবহার করে। অর্থাৎ দৃশ্যমান নেট। আর এখানেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। যেহেতু বিশ্বের বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সার্ফেস ওয়েব ব্যবহার করেন, তাই সাইবার অপরাধীদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সংগঠিত করার জন্য সার্ফেস ওয়েব বড় একটি মাধ্যম। অন্যদিকে, ডার্ক ওয়েব সাইবার অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহজ স্থান।

বিভিন্ন সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে সারফেস ওয়েব থেকে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে। এই ক্ষেত্রে, এটি হ্যাকিং বা কারও ডিভাইসে ম্যালওয়্যার সন্নিবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করা হতে পারে। তখন তারা সেই তথ্য বিক্রি করার জন্য ডার্ক ওয়েব বেছে নেয়। যেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড হ্যাকিং ফোরাম, ডার্কনেট মার্কেট এবং এই ধরনের অন্যান্য পরিষেবা রয়েছে।

যেখানে তারা কোনো নজরদারি ছাড়াই সহজেই তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। আর এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হয় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে। ফলে কোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

৩. ডার্ক ওয়েবের ব্যাপ্তি অনেক বড়

ডার্ক ওয়েবের ব্যাপ্তি অনেক বড়

আমরা অনেকেই মনে করে থাকি ডার্ক ওয়েবের পরিধি অনেক বিশাল। আসলে কী তাই? আসুন জেনে নেওয়া যাক ডার্ক ওয়েবের পরিধি সম্পর্কে। 

নেট দুনিয়ায় ডার্ক ওয়েবের পরিধি উপস্থাপনার জন্য আইসবার্গ ব্যবহার করা হয়। যেখানে দৃশ্যমান বরফ খণ্ডকে বলা হয় সার্ফেস ওয়েব বা দৃশ্যমান ওয়েব। পানির নিচে থাকা অংশটিকে বলা হয় ডিপ ওয়েব এবং এর পরের স্তরটি হল ডার্ক ওয়েব। আসলে একটি চিত্র দিয়ে ওয়েবের পরিধি হিসাব করা প্রায় অসম্ভব। 

সার্ফেস ওয়েব হল আমরা প্রতিদিন যে ওয়েবটি ব্যাবহার করি তা। অর্থাৎ সার্ফেস ওয়েবে থাকা সকল তথ্যই যে কেউ চাইলে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে দেখতে পারেন। যেমন আমরা যে গুগলে সার্চ করে যে ফলাফলগুলো দেখতে পাই তার সবটাই সার্ফেস ওয়েব। সহজ কথা হল সার্ফেস ওয়েবে থাকা সকল কিছুই সার্চ ইঞ্জিনগুলো ইনডেক্স করে নেয় এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তা এক্সসেস করতে পারে। কাজেই সার্ফেস ওয়েব কোটি কোটি ওয়েবসাইট নিয়ে গঠিত। 

এরপর আসি ডিপ ওয়েবে এ। ডিপ ওয়েবে থাকা ডাটা সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয় না। ফলে সার্চ করে এসকল ডাটা পাওয়া যায় না। কেবল মাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউই ডিপ ওয়েবের ডাটা দেখতে পায় না। তাই বলে যে ডিপ ওয়েবের ব্যবহারকারী কম এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ আপনিও নিয়মিত ডিপ ওয়েব ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? বুঝিয়ে বলছি। তার আগে বলে নেই ডিপ ওয়েবে অগনিত ডাটা সংরক্ষিত থাকে। যেমনঃ বিভিন্ন একাডেমিক ডাটাবেস, ব্যাংকিং পোর্টাল, অভ্যন্তরীণ কোম্পানির নেটওয়ার্ক, আপনার ওয়েব মেইল একাউন্ট এবং অন্যান্য ডেটা। এসব ডেটাগুলো কখনোই গুগলে সার্চ করে দেখা সম্ভব নয়।

ধরুন, আপনি গুগল ড্রাইভ আপনার বিভিন্ন ফাইল উপলোড করে রেখেছেন। এবং আপনি ছাড়া অন্য কেউ এই ডাটা খুজেও পাবে না। এমনকি গুগল সার্চেও এই ডাটা প্রদর্শিত হয় না। কেবল মাত্র আপনার জিমেইল আইডি পাসওয়ার্ড ছাড়া এ ডাটা দেখা অসম্ভব। আপনার তথ্যগুলো ইন্টারনেট ড্রাইভে থাকার কারণে, এগুলো ডিপ ওয়েব এর অন্তর্ভুক্ত। আর এরকম ভাবে হাজারো কোটি মানুষের তথ্য ডিপ ওয়েবে রয়েছে, যেগুলোর খোঁজ কেউ জানে না। আর তথ্যের দিক থেকে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ডিপ ওয়েব।

ডার্ক ওয়েব অন্য দুই ওয়েব থেকে অনেক ছোট। অনুমান করা হয় এই ওয়েবে ওয়েবসাইটের পরিমাণ ২৫০০০০ থেকে ৪০০০০০ এর মত। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার প্রধান ব্রাউজার হল “টর”। হাজার হাজার Ransomwar নোট এবং অন্যান্য ম্যালওয়্যার এই ব্রাউজার  দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। Ransomwar Variants রয়েছে, যারা এটি দ্বারা আক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিপণ পরিশোধ করার জন্য ডার্ক-ওয়েবে আসতে বলে। এই ক্ষেত্রে, তারা লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডার্ক ওয়েব অন্য ওয়েব থেকে অনেক ছোট।।

৪. ডার্ক ওয়েব শুধুমাত্র একটি বিশেষ শ্রেণিদের জন্য

ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ৫টি ভূল ধারণা! এরআসল সত্যই বা কী?

যারা ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে শুনেছেন বা জেনেছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষ কমন একটি প্রশ্ন করেন তা হল কিভাবে ডার্ক ওয়েব খুঁজে পেতে পারি? এমন প্রশ্ন করার মূল কারণ হল ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে স্বল্প ধারণা রাখা। অনেকে মনে করেন ডার্ক ওয়েব পেশাদারী সাইবার অপরাধীদের জন্য এবং সাধারণ মানুষদের জন্য এটি লক করা। কিন্তু বাস্তবতা হল আপনি “টর” ব্রাউজার ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে, যে কেউ এটি ডাউনলোড করে ব্যবহার শুরু করতে পারে এবং এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

টর ব্রাউজার হল একটি পরিবর্তিত মজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজার যাতে বেশ কিছু অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এক্সটেনশন এবং টর লঞ্চার রয়েছে। এই ব্রাউজারটি ডার্কওয়েব অ্যাক্সেস করার সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে নিরাপদ উপায়গুলির মধ্যে একটি।

৫. ডার্ক ওয়েব এক্সসেস করা আইনগতভাবে অবৈধ

অন্যান্য ওয়েবের মত ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা বৈধ। প্রশ্ন হল আপনি যে কারণে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করছেন তা বৈধ কিনা? ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করার অর্থই যে কোন অবৈধ কাজ হচ্ছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে অনেক অবৈধ কাজের জন্য গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে ডার্ক ওয়েবকে কাজে লাগানো হয়।

ডার্ক ওয়েবসাইটগুলি তাদের পরিষেবাগুলি ব্যবহার করার সময় শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। কিছু দেশে শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করা অবৈধ। এবং যেহেতু আপনি কোনো ধরনের এনক্রিপশন ব্যবহার না করে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে পারবেন না, তাই আপনাকে সেই দেশের আইন অনুসরণ না করেই সেখানে যেতে হবে। যা আপনার জন্য অবৈধ হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, চীনে, শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। তাই এদেশ থেকে টর ব্রাউজার এবং টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা একটি অপরাধমূলক কাজ। উপরন্তু, যদিও বিভিন্ন ভিপিএন তাদের তথ্য অনলাইনে এনক্রিপ্ট করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, চীন সরকার তাদের দেশে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

রাশিয়া, ইরাক, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ এবং অন্যান্য অনেক দেশের নাগরিকরাও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে, যেসব দেশে ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা বৈধ, সেসব দেশের সরকারও এটি ব্যবহার করতে উৎসাহী করে না। কারণ, আপনি এটি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পেলেও, আপনার তথ্য সেই VPN পরিষেবা প্রদানকারী বা অন্য কারও কাছে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

আশা করছি এই লিখাটি পড়ার পর ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আপনাদের ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে গেছে। এবং ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। 

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Back to top button