বাংলা রচনা

রচনা: তোমার প্রিয় গ্রন্থ

5/5 - (1 vote)
তোমার প্রিয় গ্রন্থ

প্রিয় সুহৃদ, তোমারা অনেকেই  “তোমার প্রিয় গ্রন্থ”  সম্পর্কে একটি রচনা দেওয়ার অনুরোধ করেছ। আমাদের টিম চেষ্টা করেছ সহজ ভাষায় রচনাটি উপস্থাপন করার। রচনাটি কেমন হয়েছে তা আমাদের কমেন্ট জানাবে। 

তোমার প্রিয় গ্রন্থ
বা, আমার প্রিয় গ্রন্থ

ভূমিকা

মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলাে গ্রন্থ বা বই। আনন্দের অপর নাম বই। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে শ্রান্ত-ক্লান্ত শরীর ও মনে অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দের পরশ বুলিয়ে দিতে পারে কেবল একখানি ভালাে বই। বই জ্ঞানের ভাণ্ডার। জ্ঞান ও আনন্দ-এ দু’য়ের অপরূপ সমাবেশ ঘটিয়ে বই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তােলে। মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এ তিনকালের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করে দেয় বই। মােটকথা মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি নিজের বুকে নিয়ে অনাগতকালের পাঠকদের জন্য চির অপেক্ষমান হয়ে রয়েছে বই বা গ্রন্থ। বইয়ের এ গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমি অসংখ্য বই পড়েছি, যার মধ্যে ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি আমার মনে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

গ্রন্থপাঠের কারণ

দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ এ পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্ট, শােক-তাপ, হতাশা-অবসাদে জর্জরিত মানুষ সর্বোচ্চ আনন্দ লাভ করতে পারে গ্রন্থ পাঠে। বিখ্যাত মনীষী লিও টলস্টয়ের ভাষায়, “Three things are essential for life and these are books, books and books.” আবার ভিনমেন্ট স্টারেট বলেছেন, “When we have a book we buy pleasure.” অর্থাৎ আমরা বই কেনার সাথে সাথে আনন্দও কিনি। মানবজীবন যখন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকে। পার্থিব জগতের প্রতি মনটা যখন বিষিয়ে ওঠে তখন গ্রন্থ পাঠ মানুষের মনে এমন এক জগত তৈরি করতে পারে যার জন্য কোনাে দুঃখকে দুঃখ কিংবা কষ্টকে কষ্ট বলে মনে হয় না। 

গ্রন্থ মানুষের মধ্যে এমন এক জগত তৈরি করে দিতে পারে যার মধ্যে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বাট্রান্ড রাসেল বলেছেন, “সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানাের প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া, যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।” আর গ্রন্থ পাঠ-ই সেই ভুবন সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে। গ্রন্থ পাঠকদের যে শুধু আনন্দই দেয় তা নয় বরং সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে সে কাজ করে। কখনাে কখনাে আমরা সংকীর্ণতা ও কূপমণ্ডুকতার শিকার হই, মনের অফুরন্ত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হই। বই আমাদের সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলে স্বর্গীয় আনন্দ লাভে সহায়তা করে। এজন্যই আমি বইপড়াকে প্রিয় শখ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

আমার প্রিয় গ্রন্থ

গ্রন্থ পাঠ আমার প্রধান শখ। কারণ বই পড়ে আমি যে আনন্দ খুঁজে পাই, তা আর অন্য কোনাে কিছুতে পাই না। আমার এ যাবৎ বেশ কিছু ভালাে ভালাে বই পড়ার সুযােগ হয়েছে। যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি, নৌকাডুবি, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দত্তা, পথের দাবি, চরিত্রহীনা এরকম আরাে বেশ কিছু বই। কিন্তু এসব বইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালাে লেগেছে জহির রায়হান রচিত উপন্যাস “হাজার বছর ধরে”। এ গ্রন্থটি আমি যতবারই পড়ি, ততবারই ভালাে লাগে। এ গ্রন্থটি আমার প্রিয় গ্রন্থ।

প্রিয় গ্রন্থ হওয়ার কারণ

‘হাজার বছর ধরে’ গ্রন্থটি আমার অত্যন্ত প্রিয় হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ গ্রন্থে আবহমান পূর্ববাংলার তথা বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। জহির রায়হান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গ্রাম বাংলার নিম্নবিত্ত মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, রােগ-শােক, জরা-মৃত্যু, হিংসা-দ্বেষ প্রেম-প্রীতির বাধনে আবদ্ধ জীবনের চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে অঙ্কন করেছেন। এখানে গায়ে গা লাগিয়ে মানুষের বসবাস, এতটুকুতেই শত্রুতা আবার প্রয়ােজনে মিত্রতা ও ঐক্যবদ্ধতা। 

সংস্কারে আবদ্ধ, দুর্যোগে সর্বস্বান্ত অসহায় পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবন কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারপরও স্বাভাবিক নিয়মে দিন যায়, রাত আসে আবার দিন আসে। সে পুরনােকে নিয়েই মূলতঃ এ উপন্যাসে আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আজও এর প্রতিফলন আমরা বাংলার পল্লি অঞ্চলে দেখতে পাই। আমি গ্রামে বাস করি। এ উপন্যাসটি পড়ার সময় আমার মনে হয় এই তাে সেদিন অমকের ঘরে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল , অমুক চাচার বাড়িতে না এমন কিছুই হলাে কয়েকদিন আগে। এটি পড়ে আমার মনে হয় আমার গ্রামে, আমার আশেপাশে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনার প্রতিরূপ হলাে এ উপন্যাস। আমি বিমােহিত হয়ে গ্রন্থটি পড়ি, আর এ সময় পারিপার্শ্বিকতা, চরিত্র সবকিছু মনের গভীরে একান্ত আপন অনুভূতিতে উপলব্ধি করি। আর এ জন্যই ‘হাজার বছর ধরে’ গ্রন্থটি আমার এত প্রিয়।

উপন্যাসের বিচার

ঔপন্যাসিক জহির রায়হান (Zahir Raihan) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিপুণ শিল্পীর হৃদয় কল্পরসে জারিত করে আমাদের সামনে আবহমান গ্রাম-বাংলার নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাপনের এক অনবদ্য ভাষাচিত্র উপস্থাপন করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখি। জহির রায়হান উপন্যাসের নাম ‘হাজার বছর ধরে’ দিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবনধারার হয়তাে পরিবর্তন ঘটতে পারে কিন্তু ঘটনার পরম্পরা কিংবা জীবনবােধের পরিবর্তন খুব একটা হয় না। আর অদূর ভবিষ্যতে যে এ পরিবর্তন হবে তারও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। আর এ গ্রন্থটির এসব দিক আমাকে আলােড়িত করেছে। আমি একাত্ম হয়ে গেছি এর বক্তব্যের সাথে। তাই এটি আমার প্রিয় গ্রহে পরিণত হয়েছে।

উপসংহার

আমি বই পড়তে ভালােবাসি। বই আমাকে আনন্দ দেয়, এক অকৃত্রিম বন্ধুর মতাে আমাকে সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়। যেমন আমার প্রিয় গ্রন্থটি আমাকে জীবনের প্রকৃত চিত্র উপলদ্ধি করতে শিখিয়েছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটি মানুষের ভালাে বই পড়া উচিত। কারণ বই পড়ার অভ্যাস জীবন সম্পর্কে এমন কিছু ধারণা দিয়েছে যা অন্য কিছুই আমাকে দিতে পারেনি।

1. হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে এ উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজী পুরষ্কারে সম্মানিত হন। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

2. জহির রায়হান একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার। বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button