কালোজিরা দেখতে কালো ছোট হলেও এর গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। সেই আদিকাল থেকে কালোজিরা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্যে ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকেই রান্নাতে কালোজিরা ব্যবহার করে থাকেন। শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেই নয়, আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজি চিকিৎসাতেও কালোজিরার ব্যবহার হয়। আবার কালোজিরার বীজ থেকে তেল বের করা হয় যা আমাদের শরীরের জন্যে খুবই উপকারী।
আসুন জেনে নেই কালোজিরাতে কি কি উপাদান রয়েছে।
কালোজিরার উপাদানসমূহ
বিশেষজ্ঞদের মতে কালোজিরাতে রয়েছে ফসফেট, আয়রন, ফসফরাস, লৌহ, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। কালোজিরায় ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাবসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।
আসুন জেনে নেই নিয়মিত কালোজিরা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
কালোজিরার উপকারিতা
১. পেটের সমস্যা: যাদের নিয়মিত পেটে সমস্যা হয় তারা কালোজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭-৮ চা চামচ দুধে মিশিয়ে তা সকালে ও বিকেলে ৭ দিন খেলে আশা করি পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের অঙ্গপতঙ্গ সতেজ থাকে।এবং এটি জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে শরীরকে প্রস্তুত রাখে।মোট কথা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন: যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্যে কালোজিরা অনেক উপকারী। কালোজিরা ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। এতে করে কালোজিরা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
৪. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট: যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কালোজিরার ভর্তা রাখুন। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দূর করে। বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করুন এতে অনেকটা উপকার পাবেন।
৫. মাথাব্যথা: প্রচণ্ড সর্দি হয়ে মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে ? এ ক্ষেত্রে কালোজিরা পুঁটলিতে বেঁধে শুঁকতে হবে। তবে পুঁটলিতে নেওয়ার আগে তা রগড়ে নিতে হবে। তাতে গন্ধ বের হয় এবং উপকার হয়। অথবা মাথাব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩-৪ বার কালোজিরার তেল মালিশ করুণ। তিন দিন খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান করুন উপকার পাবেন।
৬. চুলকানি: যাদের চুলকানির সমস্যা আছে তারা কালোজিরা ভাজা তেল গায়ে মালিশ করুন চুলকানি অনেকটা কমে যাবে।
৭. প্রস্রাব পরিষ্কার: নিয়মিত কালোজিরা খেলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়।
৮. উচ্চ রক্তচাপ: যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন, তখনই কালোজিরা খাবেন।গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরার ভর্তা খান রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে। এ ছাড়া কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুণ। এটি ২-৩ দিন পরপর করা যায়।
৯. চোখে সমস্যা: রাতে ঘুমানোর আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরার তেল মালিশ করুণ। এক কাপ গাজরের রসের সঙ্গে এক মাস কালোজিরা তেল সেবন করুন।
১০. অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিক: এক কাপ দুধ ও এক টেবিল চামুচ কালোজিরার তেল দৈনিক তিনবার ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে। এতে গ্যাস্টিক কমে যাবে।
১১. সৌন্দর্য বৃদ্ধি: অলিভ অয়েল ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে মুখে মেখে এক ঘণ্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলন।
১২. দাঁত শক্ত করে: দই ও কালোজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন দুবার দাঁতে ব্যবহার করুন। এতে দাঁতে শিরশিরে অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হবে।
১৩. ওজন কমায়: যারা ওজন কমাতে চান, তাদের খাদ্য তালিকায় উষ্ণ পানি, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখন এই মিশ্রণে কিছু কালোজিরা পাউডার ছিটিয়ে দিন। পান করে দারুণ উপকার পাবেন।
১৪. স্মৃতিভ্রংশ ও স্মরণশক্তির দুর্বলতায় কালোজিরে খুব কার্যকর।
১৫. শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।
শেষ কথা
আসলে কালোজিরা উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে। নবীজি মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন তোমরা নিয়মিত কালোজিরা খাও কারণ এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ আছে। আসুন আমরা নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করি। প্রতিদিন কত কিছুইতো আমরা খাই। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরা যেন অবশই থাকে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।