করােনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশ নিয়ে রচনা
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে করােনাভাইরাস একটি ভয়াবহ নাম। এর প্রভাবে স্থবির হয়ে রয়েছে পুরাে পৃথিবী। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে এই ভইরাস। বাংলাদেশও এই ভাইরাসের হানায় হয়ে পড়েছে স্থবির। এখানে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যােগাযােগব্যবস্থা, পর্যটন, ব্যবসায়-বাণিজ্য সবকিছু থেমে আছে এই ভাইরাসের প্রভাবে। দেশের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করে যাচ্ছে নিয়মিত।
করােনাভাইরাসের পরিচয়
করােনাভাইরাস বলতে মূলত একটি পরিবারকে বােঝায়, যেখানে অসংখ্য ভাইরাস একসাথে থাকে। এই পরিবারের সর্বশেষ আবিস্কৃত ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নভেল করােনাভাইরাস বা এনসিওভি-২০১৯। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস ধরা পড়ে। এই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রােগকে বলা হয় ‘কোভিড-১৯’।
সংক্রমণ
করােনা পরিবারের ভাইরাস মূলত আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের শরীরে আসে। এরপর সর্দি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাস মূলত মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। প্রধানত মানুষের শ্বাসনালির জলকণার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। ‘এনসিওডি২০১৯’ নামক ভাইরাসটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা বাদুড় বা সাপজাতীয় কোনাে প্রাণী এই ভাইরাসের উৎস।
বাংলাদেশে করােনাভাইরাসের প্রভাব
বাংলাদেশে প্রথম ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্ত করা হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর ভয় ও আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়ে পুরাে দেশ। অফিস-আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে করােনাভাইরাসের প্রভাব নিচে তুলে ধরা হলাে-
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব
করােনাভাইরাসের প্রভাবে অচল হয়ে পড়ে দেশের শিক্ষাখাত। দেশে করােনা সংক্রমণের খবরের পর ১৮ মার্চ ২০২০ থেকে স্কুল-কলেজগুলাে বন্ধ ঘােষণা করা হয়। এছাড়াও বাতিল করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশােনা পিছিয়ে যায়। যদিও কিছু স্কুল-কলেজ অনলাইনে ক্লাস নিয়ে পড়াশােনা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তবে তা প্রয়ােজনের তুলনায় অপ্রতুল।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রভাব
করােনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের স্বাস্থ্যখাত। এমনিতেই জনবহুল এই দেশে হাসপাতালগুলােকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়, তার ওপর ভাইরাসের প্রভাবে হাসপাতালে রােগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাছাড়া করােনা সংক্রমণের ভয়ে চিকিৎসাসেবীদেরও বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। আবার করােনার প্রভাবে অন্যান্য রােগীদেরও বঞ্চিত হতে হচ্ছে প্রয়ােজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে।
অর্থনীতিতে প্রভাব
করােনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়েছে ভঙ্গুর। ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দার কারণে দেশের সার্বিক অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক যােগাযােগ বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তার প্রভাব পড়েছে। দেশে বেকার হয়েছে অসংখ্য মানুষ। আবার অনেক মানুষ কর্মসংস্থান হারানােয় দারিদ্র্যের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামাজিক জীবনযাত্রায় প্রভাব
দেশে করােনাভাইরাসের সংক্রমণে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। কোভিড-১৯ মারাত্মক ছোঁয়াচে হওয়ায় মানুষকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। তাছাড়া আক্রান্ত মানুষের সান্নিধ্যে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সবসময় মানুষকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। ভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হয় বিধায় দেশের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালনেও এর প্রভাব পড়েছে। মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি থাকার কারণে সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে প্রভাব
দেশের কর্মক্ষেত্রে করােনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে মারাত্মকভাবে। অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে এই সময়ে। বিশেষ করে দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, পরিবহণ, শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করার কারণে দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসায় রেখে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। কোনাে কোনাে প্রতিষ্ঠান আবার সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
যােগাযােগব্যবস্থায় প্রভাব
দেশের যােগাযােগব্যবস্থায় করােনার প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যােগাযােগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিমান চলাচল। তাছাড়া করােনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার পরিবহণ যােগাযােগ বন্ধ ঘােষণা করে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক, রেল ও নৌ চলাচল। এতে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে না।
শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব
শিল্পক্ষেত্রে করােনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। দেশে করােনা শনাক্তের পর থেকেই একে একে বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠান । এতে কাজ হারায় অনেক মানুষ। সরকার শিল্পের চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিক প্রণােদনা দেওয়ার ঘােষণা দেয়। প্রধানমন্ত্রী। করােনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণােদনা ঘােষণা করেন।
কোভিড-১৯ মােকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
‘কোভিড-১৯’ মােকাবিলায় সরকার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, দেশের সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘােষণা করা, অফিস-আদালতে অনলাইনে কাজ চালিয়ে নেওয়ার উৎসাহ প্রদান, গণপরিবহণ চলাচল সীমিত করা, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান, সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা, স্বাস্থ্যসেবীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত রােগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালে বিশেষ করােনা ইউনিট চালু করা প্রভৃতি। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার
করােনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতাে বাংলাদেশেও তার ভয়াবহ রূপ দেখিয়েছে। এর কারণে দেশ হয়ে পড়েছে স্থবির। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাসে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, সেবাসহ সকল ক্ষেত্রে এর প্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশকে করােনা থেকে মুক্ত রাখতে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছে সবাই। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে দেশের সার্বিক কার্যক্রম ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
