বাংলা রচনা

রচনা সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা

Rate this post

প্রিয় ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আজ  সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে একটি রচনা প্রবন্ধ ১৫ টি পয়েন্ট নিয়ে উপস্থাপন করব।  আশা করি রচনাটি তোমাদের ভালো লাগবে। 

রচনা সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা

ভূমিকা

শিক্ষাই  শক্তি
আনবে দেশের মুক্তি।

সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা মানে হল মৌলিক শিক্ষা। আর কথায় বলে, “শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড”। মেরুদণ্ডহীন প্রাণী যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি অশিক্ষিত জাতি বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে ঠাঁই করে নিতে পারে না। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ডের চেয়েও বেশি কিছু। কারণ মেরুদণ্ডহীন প্রাণী সােজা হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও চলাচল করতে পারে। কিন্তু বর্তমান প্রতিযােগিতামূলক বিশ্বে, তথ্য-প্রযুক্তির এই দিনে বিশ্বে কোনাে অশিক্ষিত জাতির পক্ষে টিকে থাকা কোনােভাবেই সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি সরকারই চাইছে কত কম সময়ের মধ্যে দেশের মানুষকে সত্যিকারার্থে সুশিক্ষিত করে তােলা যায়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে, তথা মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। বিপুল জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিরক্ষর রেখে দেশের উন্নয়ন কোনাে কালেই সম্ভব নয়। তাই সর্বস্তরে শিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দেয়া অপরিহার্য। 

সর্বজনীন শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা

দিন বদলের বইছে হাওয়া
শিক্ষা আমার প্রথম চাওয়া। 

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সংবিধানের ১৫ ও ১৭ অনুচ্ছেদ এবং শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট সরকারের দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষাকে। থাইল্যান্ডের জোমটিন-এ ১৯৯০-এর মার্চে সর্বজনীন শিক্ষাবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে এবং শিশু অধিকার বিষয়ে ১৯৯০ এর সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনে ঘােষিত লক্ষ্যের প্রতি পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় দিল্লির উচ্চ জনসংখ্যাবিশিষ্ট ৯টি উন্নয়নশীল দেশের ১৯৯৩-এর ‘সবার প্রতি শিক্ষা’ বিষয়ে শীর্ষ ঘােষণার প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘প্রাথমিক শিক্ষাকে’ মূল উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। করেছে ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন’। 

সর্বজনীন শিক্ষা কি

আমাদের দেশে সর্বজনীন শিক্ষা বলতে মৌলিক শিক্ষাকে বােঝায়, যা প্রধানত প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম স্তর। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য দুটি : 

১. মানসম্মত মৌলিক বা বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিতকরণ,
২. শিক্ষাব্যবস্থার পরবর্তী স্তরে প্রবেশের জন্য যােগ্যতা অর্জন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধানে দেশে সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্র – 

  • একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য।
  • সমাজের প্রয়ােজনের সঙ্গে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সে-প্রয়ােজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণােদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য।
  • আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানবিক বিষয়ে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ও উন্নয়ন সাধন।

প্রাথমিক শিক্ষা কি

শিক্ষার অর্থ ব্যাপকতর হলেও মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সকলের জন্য অপরিহার্য। মানুষের জ্ঞান অর্জন ও সামাজিক বিকাশের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক। তাই এই প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয়েছে ‘সর্বজনীন শিক্ষা’। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষাই হল বিদ্যা বা জ্ঞানার্জনের প্রাথমিক ধাপ বা সিঁড়ি। তাই সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ধনী-গরিব, ছােট-বড় প্রত্যেক রাষ্ট্রে সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা চাই। আমাদের দেশে প্রাথমিক স্তরে এই শিক্ষাব্যবস্থার নাম হল- প্রাথমিক শিক্ষা। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত। আমাদের দেশে প্রায় ৩৫% লােক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি। তাই শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে, জাতিকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রয়ােজন একটি বাস্তবমুখী বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একজন নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করলে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে যােগ্যতা অর্জন করে। এজন্য সকলকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। অ্যান্ডারসনের গবেষণা থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের প্রভূত উন্নয়নের পেছনে মূল উপাদান হচ্ছে শিক্ষিতের হার। তাঁর মতে, ওইসব দেশে যখন শিল্পের উত্তরণ ঘটে তখন সেখানে শিক্ষিতের হার ৪০% এর কম ছিল না। ইংল্যান্ডের অবস্থান শিল্প বিপ্লব চলাকালে শুধু শ্রমিক শ্রেণিরই শিক্ষার হার ছিল ৬৫% এর ওপরে। 

বাংলাদেশে সাক্ষরতার পরিস্থিতি

দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের উদ্যোগে সর্বজনীন শিক্ষা অনেক আগেই চালু করা হলেও, বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার গড় হার ৬৫.৮৩%। সম্প্রতি দেশে ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী লােকজনের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায় যে, বরিশাল বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৬%, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮%, ঢাকা বিভাগে ৬২%, খুনা বিভাগে ৬৯%, রাজশাহী বিভাগে ৬৫% এবং সিলেট বিভাগে ৫৫%। গড়ে নিরক্ষর ৩৪.১৭%। সুতরাং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশকে অশিক্ষিত রেখে একটি দেশের উন্নয়ন কোনােভাবেই সম্ভব নয়। কোনাে দেশে নিরক্ষরতার উৎসমূল হচ্ছে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির অনুপস্থিতি বা ব্যর্থতা। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনােপযােগী বয়সের সকল ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা, তাদের ধরে রাখা এবং প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্ত করার কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন না হলে প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা নিরক্ষর থেকে যায় এবং ক্রমাগত নিরক্ষর জনগােষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবেই দেশে নিরক্ষরের সংখ্যা স্ফীত হতে থাকে।

নিরক্ষরতা একটা জাতির জন্যে হুমকিসরুপ

শিক্ষাই আলাে, নিরক্ষরতা অন্ধকার। শিক্ষা ছাড়া এ পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার কোনাে উপায় নেই। নিরক্ষর ব্যক্তি তার নিরক্ষরতার জন্যে এ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ, ন্যায়-অন্যায়, লাভ-লােকসান, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবকিছু থেকে হয় বঞ্চিত, হয় প্রতারিত। তার জীবনটাই অভিশপ্ত, ব্যর্থ। শিক্ষার গুরুত্বের তাগিদ দিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন- ‘শিক্ষা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ’। বস্তুত শিক্ষা ব্যতীত কোনাে জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। যে দেশের লােক যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। মানুষের পূর্ণ বিকাশের জন্যে প্রয়ােজন শিক্ষা। শিক্ষার আলাে না পেলে ব্যক্তিমানুষ যেমন বিকশিত হয় না, তেমনি দেশ ও সমাজ উন্নত হতে পারে না। দেশের আপামর জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তােলার জন্যে সর্বজনীন শিক্ষাক্রম চালু রাখা ও তার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রতিটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রধান ও পবিত্র দায়িত্ব। সমাজবিজ্ঞানী Charlotte Towle তার ‘Common Human Needs’ গ্রন্থে বলেছেন-

literacy is a great curse for human being which must be done away with to dignify human’s ego.

নিরক্ষরতার অভিশাপ

বর্তমান যুগে নিরক্ষরতা মানবজীবনের সবচাইতে বড় অভিশাপ। অন্ধ এবং নিরক্ষর ব্যক্তির মাঝে কোনাে পার্থক্য নেই। এ কথা সর্বজনমান্য যে, আমাদের জাতীয় জীবনের সকল সমস্যা, সঙ্কট ও দুর্দশার মূল উৎস নিরক্ষরতা। এই অভিশাপ থেকে যদি আপামর জনসাধারণকে মুক্ত করা যেত তাহলে বর্তমানে জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, সমাজসেবা, সমবায় ইত্যাদি জাতিগঠনমূলক সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টাই সাফল্যমণ্ডিত হতাে। একটা উন্নত দেশের জন্যে চাই শিক্ষিত জনশক্তি। একটা স্বাধীন জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ লােক মূর্খ ও নিরক্ষর থাকা জাতির পক্ষে মর্যাদাহানিকর ও ক্ষতিকর। দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্যে আমাদের প্রয়ােজন সর্বজনীন শিক্ষা প্রচলন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্যে সর্বজনীন শিক্ষা চালু করা হয়েছে।

সর্বজনীন শিক্ষা প্রচলনের প্রয়ােজনীয়তা

শিক্ষাই শক্তি, আনবে দেশের মুক্তি। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের কোনাে বিকল্প নেই। শিক্ষাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। শিক্ষার মূল ভিত্তিই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে দেশের সকল মানুষকে ন্যূনতম শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রথম সােপান। জাতীয় অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার কোনাে বিকল্প নেই। দেশের বিপুল সংখ্যক জনগােষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম। আর প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষিত জাতি গঠনের মূল সােপান। তাই দেশের সব মানুষকে শিক্ষার আলাে দান করার জন্যে সর্বজনীন শিক্ষার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়ােজন। দেশের সব মানুষ শিক্ষিত হলে দেশ সহজে উন্নত হয়ে ওঠে। শিক্ষিত জনগােষ্ঠী নিজেদের অভাব-অভিযােগ দূরীকরণে সচেষ্ট হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকে। শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলাের জগতে নিয়ে আসে। সর্বজনীন শিক্ষা প্রচলনের মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে শিক্ষিত করা যায়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ আজ নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেছে। তুরস্ক তার অগ্নিসন্তান কামাল পাশার নেতৃত্বে মাত্র বিশ বছরে শিক্ষারমান ৮০ভাগে উন্নীত করেছে। রাশিয়ায় বিপ্লবের আগে শতকরা ৮০ জনেরও বেশি ছিল অশিক্ষিত। বর্তমানে সেখানে শিক্ষিতের হার ১০০ ভাগ। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানির মত দেশগুলাের শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষিত। ফলে তারা এত উন্নত। জাতির অগ্রগতির স্বার্থেই নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কেননা –

জানলে শিশু লেখাপড়া তবেই হবে দেশ গড়া। 

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বলতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ বছরের শিক্ষাকে বোঝায়। ৬ থেকে ১১ + বয়সের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলো হলঃ

১.  মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং দেশজ আবহ ও উপাদানভিত্তিক শিশু শ্রম ও পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করা।

২. বিদ্যালয় আনন্দময়য় অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা করা।

৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনে স্বদেশপ্রেমর বিকাশ ও দেশগঠনমূলক কাজে তাকে উদ্বুদ্ধ করা.

৪. শিশুর মনে ন্যায়বোধ, শৃখলা, শিষ্ঠাচার, অসম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, অধ্যাবসায় ইত্যাদি নৈতিক এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা। 

৫. শিক্ষার্থীদের মধ্যে কায়িক শ্রমের প্রতি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্ৰাথমিক ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

৬. শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, সামাজিক সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে মৌলিক শিখন চাহিদা পূরণে সমর্থ করা। 

৭. প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে  আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

৮. শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ এলাকাসমূহে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া।

৯. প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত ছেলে-মেয়েদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ

জাতীয় জীবনে প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিমূল হল জনসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলা। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য প্রকল্প বাস্তবানয়নের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন:

  • সরকার ১৯৮১ সালে স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন করে। 
  • ১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়। 
  • ১৯৯২ সালে ৬৮ টি থানাকে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে দেশের সকল থানাকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইনের আওতাধীন করা হয়। 
  • প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীনে প্ৰাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। 
  • দেশের ক্রমবর্ধমান জনগণের ন্যূনতম শিক্ষার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ২ জুন, ২০০৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরিত করে। 
  • শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বর্ধিত করার লক্ষে জাতীয় শিক্ষানীতি – ২০১০ এ সুপারিশ করার হয় যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। 
  • ২০১৩ সালে প্রায় ২৫,২৪০ টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। 
  • প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন -৩ এর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। 
  • ১৯৯৬ – ২০০২ সালের মধ্যে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ২৩ টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। 
  • ২০০০ সাল নাগাদ সবার জন্যে শিক্ষার যে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে-বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, গণশিক্ষা, মসজিদ শিক্ষা, অষ্টম শ্রেণী থেকে ক্রমান্বয়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণ এবং বিনামূল্যে বই বিতরণ ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, প্রতিটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজে ডাবল শিফট চালু করা ইত্যাদি প্রধান।

অন্যান্য উদ্যোগ

শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বৃদ্ধি, তাদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখা এবং পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে উৎসাহিত করা, ঝরে পড়ার হার হ্রাস করা এবং তাদের দারিদ্র বিমােচনের লক্ষ্যে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করেছে। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকগণ এক সন্তানের জন্য মাসিক ১০০ টাকা এবং একাধিক সন্তানের জন্য ১২৫ টাকা হারে বৃত্তি পাবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, শিক্ষার্থীকে স্কুল দিবসের শতকরা ৮৫ দিন উপস্থিত থাকতে হবে এবং পরীক্ষায় অন্তত শতকরা ৪০ নম্বর পেতে হবে। এছাড়া সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, তৃণমূল পর্যন্ত শিক্ষার বিস্তার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষার ক্ষেত্রে আরাে গুরুত্বারােপ করার লক্ষ্যে সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে ২০০৩ সালের ২ জানুয়ারি পূর্ণ মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরিত করেছেন। সর্বজনীন শিক্ষা প্রচলনে সরকার ইতােমধ্যে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তার পাশাপাশি সরকারকে আরাে কিছু নীতিনির্ধারণ করতে হবে, এর মধ্যে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন করা, শিক্ষক নিয়ােগ করা, শিক্ষকদের বেতন ও সুযােগ সুবিধা দেয়া, গরিব ও অভাবগ্রত ছেলে-মেয়েদের জন্যে বিনামূল্যে বই বিতরণের মতাে পােশাক ও শিক্ষা-উপকরণ বিতরণ করতে হবে। জনগণকে উৎসাহিত করার জন্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে এবং সর্বজনীন শিক্ষার সুযােগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। একমাত্র দেশের সরকারই সর্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রমকে সার্থক করে তুলতে পারে। 

ছাত্রসমাজের দায়িত্ব

নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযানে ছাত্রসমাজের একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর সাফল্য নির্ভর করে ছাত্র-ছাত্রী সততা ও সদুদ্দেশ্যের ওপর। তাদের সঠিকভাবে নিরক্ষরদের সাক্ষর করার ব্যাপারে তৎপর হতে হবে এবং প্রয়ােজনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে সাহায্য করতে হবে। ছাত্ররা ছুটির সময়ে এবং অবসর সময়ে গণশিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে এতে কোনাে সন্দেহ নেই। 

জনগণের ভূমিকা ও সহযােগিতা

সর্বজনীন শিক্ষাকে সার্থক করতে হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের সহযােগিতা একান্ত প্রয়ােজন। জনগণের সহযােগিতা ছাড়া তা কার্যকর হতে পারে না। এর জন্যে জনগণের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করলেই এ শিক্ষা কার্যকর হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, ‘সবার জন্য শিক্ষা’- একটি সামাজিক আন্দোলন, এ আন্দোলনে শরিক হােন দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করুন। 

প্রচার কার্যক্রম

উল্লিখিত পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রচারমাধ্যমকে আরও জোরদার করতে হবে।

এসাে ভাই-বােন এসাে শিখি লেখাপড়া
সবে মিলে মিশে চাই দেশটাকে গড়া।
অথবা,
শিক্ষা ছাড়া গতি নাই।
চল সবাই পড়তে যাই। 

এরকমভাবে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান তৈরি করে সারা দেশকে মুখর করে তুলতে হবে। ক্লাব, পার্ক, রেস্তোরা, সিনেমা হল, অফিস-আদালত সর্বত্র চলবে নিরক্ষরদের বােঝনাের কাজ। এজন্যে পত্র-পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন, সিনেমা, ব্যক্তিগত আলাপ, সভা-সমিতি, ক্রীড়া, মিছিল, প্রচারপত্র, প্রাচীরপত্র, শোভাযাত্রা, স্লোগান, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণের অভিযান গড়ে তুলতে হবে। তবে এর সবকটিরই বাস্তব প্রয়ােগ হচ্ছে কিনা লক্ষ রাখতে হবে। 

উপসংহার

উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বিষয়টি  আজ বিশ্বজনীন। যেহেতু উন্নয়ের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা। আর সকল স্তরের শিক্ষার ভিত  হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। সেহেতু প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব আজ সর্বজন স্বীকৃত।তাই দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা একটি বাস্তব পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ গ্রহণে দেশের সরকার এবং জনগণের সহযােগিতা একান্ত প্রয়ােজন। স্মরণ রাখতে হবে যে, আমাদের ন্যায় দরিদ্র ও অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সর্বজনীন শিক্ষার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। তাই আমাদের নিত্য দিনের প্রার্থনা –

এই নিরন্নের দেশ, এই নিরক্ষরের মাটি হােক গর্বিত সাক্ষর স্বদেশ। 

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button