ইসলাম ও জীবনদোয়াহাদিস
যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ্ অবশ্যই তা কবুল করবেন।
দোয়া করা আল্লাহর আছে অতি পছন্দনীয় একটি ইবাদাত। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তার উপর নারাজ হন। আমরা সকলেই চাই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুক। অনেক মানুষ হতাশ হয়ে যান আমার দোয়া আল্লাহ কেন কবুল করছেন না। আসুন আজ আমরা জেনে নেই কিভাবে চাইলে আল্লাহ নিজেই খুশি হয়ে যান। আপনি যে প্রক্রিয়ায় দোয়া করলে আল্লাহ এতো খুশি হয়ে যে আপনার হাত আর আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। আর আপনার দোয়া করার নিয়ম যদি আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ পাক আপনার দোয়া অবশই কবুল করবেন। আমরা অনেকেই দোয়া করার নিয়মগুলো জানি না। আসুন দোয়া করার নিয়মগুলো আমরা জেনে নেই।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি , মহান আল্লাহ বলেন, ”হে আদম সন্তান! তুমি যতদিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আমি ততদিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকবো। তুমি যা-ই করতে থাকো আমি সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবো না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো, আমি সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবো না, হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে হাজির হাও এবং আমার সাথে কোনো কিছুর শরিক করে না থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসবো। (সুনানে তিরমিজি , হাদিস নং ৩৫৪০)
আলোচ্য হাদিসে আল্লাহ্পাক রব্বুল আলামিন তার অসীম দয়ার বর্ণনা করেছেন। বান্দাকে তার দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি আস্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, বান্দার গুন্নাহ যত বেশি হোক না কেন, আল্লাহ তা আপন দয়ায় ক্ষমা করে দেবেন। যদি সে যথা নিয়মে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মুহাদ্দিসরা দোয়া ও ক্ষমা কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন।যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন এবং দোয়া কবুল সহায়ক হয়। তা হলো:
১. আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থার সাথে দোয়া করা। আল্লাহপাক বলেন, “যখন আমার বান্দা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, নিশ্চয়ই আমি তাদের নিকটবর্তী, আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সারা দিক এবং আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করুক।এতে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬) .
২. নিষ্ঠার সাথে দোয়া করা। হাদিসের বর্ণনামতে ইখলাস ও নিষ্ঠা দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত। অর্থাৎ দোয়া করার সময় মনোযোগ ১০০ ভাগ রাখতে হবে।
৩. আল্লাহর প্রশংসাসূচক গগুণবাচক নামের সঙ্গে দোয়া করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ আছে, “আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে।” (সূরা আরাফ, আয়াত ১৮০)
রাসূলুল্লাহ (সঃ ) আয়েশা (রাঃ) কে এভাবে দোয়া করতে বলেন, “হে আল্লাহ নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৯৫). এখানে আল্লাহর “ক্ষমাশীল” গুন উল্লেখ করে দোয়া করতে বলা হয়েছে।
৪. দোয়ার আগে আল্লাহর প্রতি হামদ (প্রশংসা) ও রাসূলের (সঃ) প্রতি সালাম ও দুরূদ পাঠ করা। ফাজলা ইবনে উবাদ (রাঃ ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (সঃ ) বসে ছিলেন। এমন সময় একজন লোক এলো এবং নামাজ আদায় করলো। এরপর সে বললো, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন। রাসূল (সঃ ) বললেন, হে নামাজি! তুমি তাড়াহুড়া করলে। নামাজ শেষ করে যখন তুমি আল্লাহর উপযুক্ত হামিদ এবং আমার প্রতি (রাসূল (সঃ ) দুরুদ পাঠ করবে। অতঃপর তুমি দোয়া করবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ৩৪৭৬)
৫. কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ ) বদরের ময়দানে আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ ) এর দোয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন- “অতঃপর তিনি কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে স্বীয় প্রভুর কাছে দোয়া করলেন।” (সহিহ , হাদিস ১৭৬৩)
অন্য এক হাদিসে রাসূল (সঃ ) বলেন, “নিশ্চই তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তার কোনো বান্দা তার প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।” (সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস ১৩২০)
৬. প্রচন্ড আশা নিয়ে দোয়া করা। আল্লাহর কাছে প্রচন্ড আশা নিয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল (সঃ ). তিনি বলেন, “দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রেখো, নিশ্চই আল্লাহ আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযুগীর অন্তরের দোয়া কবুল করেন না। “(সুনানে তিরমিজি, হাদিস ৩৮৭৯)
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, “তারা ছিল সৎ কাজে প্রতিযোগী ও আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯০)
৭. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন “তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে ও অশ্রুসিক্ত হয়ে। ” (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৫)
৮. একান্তে দোয়া করা। দোয়া ও প্রার্থনার শিষ্টাচার হলো একান্তে দোয়া কর। তা প্রকাশ না করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে। “তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে ও অশ্রুসিক্ত হয়ে। ” (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৫)
৯. দৃঢ়তার সাথে দোয়া করা। আল্লাহর প্রতি দাবি ও অধিকার নিয়ে দোয়া করা। রাসূল (সঃ ) বলেন “তোমাদের কেউ যেন না বলে হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে দয়া করুন। সে যেন দৃঢ়তার সঙ্গে চায়। কেননা কেউ আল্লাহকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে না। ” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৩৩৯)
১০. দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। রাসূল (সঃ ) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বললো, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না। (আল জামি বাইনাস সহীহাইন, হাদিস ২২৯২)
আল্লাহ মানুষকে তার কাছে চাইতে, দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াকে ইবাদাতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রভু বলেন “তোমার আমাকে ডাকো , আমি তোমাদের ডাকের সাড়া দিবো।” (সূরা গাফির, আয়াত ৬০)
নবী করিম (সঃ ) বলেন, “দোয়াই ইবাদাত” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৪৮১)
মুমিনের দায়িত্ব হলো আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট বড় সব প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসূল (সঃ ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তিনি তার উপর রাগান্বিত হন। ” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ৩৩৭৩)
ধন্যবাদ অনেককিছু শিখলাম পড়ে ।