
রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। রহমত এবং ক্ষমা পাওয়ার মাস হল পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসেই আল্লহপাক পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। রোজা মুলসিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
রোজা কি
রোজা শব্দের অর্থ হল “বিরত থাকা”। আরবিতে রোজাকে “সাওম” বলা হয়। যার বহুবচন হল “সিয়াম”। সিয়াম অর্থ হল উপবাস থাকা, রক্ষা করা। রমজন মাস সিয়াম সাধনার মাস। ইইসলামি শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহপাকের হুকুম পালনার্থে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সঙ্গম,পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সিয়াম। পবিত্র কুরআনে আল্লহপাক শুধুমাত্র একটি আয়াতে রোজার কথা বলেছেন। দ্বিতীয়বার এর পুনরাবৃত্তি করেননি। সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
রমজান মাস কেন ফজিলতপূর্ণ
অন্যান মাসের তুলনায় রমজান মাসের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাবান। আরবি ১২ টি মাসের মধ্যে রমজান মাস হল শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাস শ্রেষ্টত্বের পিছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেঠ যে কারণ তা হল – আল্লাহপাক এই পবিত্র মাসে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ছিল। সেখান থেকে আল্লাহপাক রমজানুল মোবারকের কোন একটি রজনীতে বাইতুল ইজ্জাতে (যেটি প্রথম আসমানে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত জায়গা) সম্পূর্ণ কুরআন ট্রান্সফার করেন। এরপর গোটা ২৩ বছর ধরে সময়ের প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহপাক নবীজির (স) উপর কখনো এক আয়াত, এখনো পাঁচ আয়াত আবার কখনো একটি সূরা নিযিল করতে থাকেন। কুরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণে এই মাসটির মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। কুরআন হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান কিতাব। মানবজাতির জন্য এটি একটি বড় নিয়ামত। অন্য মাসে একটি নফল আদায় করলে যে সওয়াব পাওয়া যাবে রমজান মাসে সে নফল ফরজের সমতুল্য। আবার একটি ফরজ পালন করলে আল্লাহ্পাক ৭০ গুন সওয়াব তার আমলনায় নিলে দিবেন (সুবাহানাল্লাহ)। মুমিনদের উচিত হল রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করা। এ মাসে যত বেশি আমল করা যায় ততবেশি নেকীর ভাগিদার হয় যায়। এ মাসের আরও মর্যাদা হল আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য আকাশের দরজাগুলোকে খুলে দেওয়া হয় এবং শয়তাকে শৃখল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যার কারণে মুমিনেরা গুন্নাহমুক্তভাবে জীবন পাড় করতে পারেন। এ মাসে আল্লাহ্পাক জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেন এবং সমস্ত কবরের আজাবকে আল্লাহ্পাক বন্ধ করে দেন। এক হাদিসে আল্লাহর নবী (স) বলেছেন:
রমজান মাসে আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য সমস্ত রহমতের দরজা খুলে দেন। এবং জান্নাতের সকল দরজা তার বান্দাদের জন্য খুলে দেন।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, রমজান মাসের প্রতিটি রাতে এবং দিনে আল্লাহ্পাক অসংখ্য মুমিন বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে তাদেরকে মুক্ত করেন।
রোজার ফজিলত
রোজা আমার, এর পুরষ্কার আমি আল্লাহ নিজেই দিব।
অন্য রেওয়াতে হাদিসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ্পাক বলেনঃ
রোজা আমার জন্যে, এর প্রতিদান আমি আল্লাহ নিজেই হয়ে যাব।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল আল্লাহ্পাক বলেছেন, রোজা আমার জন্য। অথচ আমরা যে নামাজ পড়ি, যাকাত দেই , হজ্জ্ব করি আল্লাহর জন্যই করি। কিন্তু আল্লাহপাক কোথাও বলেননি নামাজ, যাকাত, হজ্জ্ব আমার জন্যে। শুধু রোজার ক্ষেত্রে বলেছেন রোজা আমার জন্যে। সুতরাং রোজার ফজিলত অনেক।
রোজাদারদের জন্য আল্লাহ্পাক ৫টি পুরুষ্কারের কথা বলেছেন। যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদের (স.) জন্য।
- রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্পাকের কাছে মিসক আম্বরের চাইতে অধিক সুঘ্রাণযুক্ত।
- রোজাদার ব্যক্তি যখন রোজা রাখে ইফতার করার আগ পর্যন্ত সে যত দোয়া করবে আল্লাহ্পাক সমস্ত দোয়াকে কবুল করে নিবেন। এমনকি ইফতার করার আগ পর্যন্ত রোজাদার ব্যক্তির জন্য সমুদ্রের মাছ আল্লাহ্পাকের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে।
- রোজাদারদের জন্য আল্লাহ্পাক বেহেস্তকে সুসজ্জিত করেন। এবং জান্নাতকে বলতে থাকেন আমার বান্দরা পৃথিবীতে কষ্ট করে আমল করছে তারা অচিরেই দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে তোমার ভিতর চলে আসবে।
- রমজানের শেষ রাত্রিতে আল্লাহ্পাক বান্দার গুন্নাহগুলোকে মাফ করে দেন।
- উশৃখল শয়তানকে আল্লাহ্পাক বাঁধার কারণে গুন্নাহমুক্তভাবে জীবন-যাপন করতে পারা যায়।
ওই ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় একটি রমজান পেলো কিন্তু রমজান পাওয়ার পরেও আল্লাহ্পাকের কাছ থেকে সে তওবা করে গুন্নাহমুক্ত হতে পারলো না।
আমরা ধ্বংসহতে চাই না বরং আমরা আল্লাহ্পাকের কাছে তওবা করে গুনাহমুক্ত জীবন পরিচালনা করতে চাই। আল্লাহ্পাক আমাদেরকে তৌফিক দেন করুন। আমিন।
যাজাকআল্লাহ, অনেক সুন্দর কন্টেন্ট।